যমুনার দুর্গম চরে ক্যাপসিকাম চাষ, বিক্রি নিয়ে বিপাকে চাষি 

ইমরান মাহমুদ, জামালপুর
  প্রকাশিত : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:১১| আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫:০২
অ- অ+

জামালপুর ইসলামপুর উপজেলার যমুনা নদীর মধ্যবর্তী দুর্গম চরাঞ্চল সাপধরী ইউনিয়নের চেঙ্গানিয়া গ্রামে ক্যাপসিকাম চাষ করেছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা হৃদয় মিয়া। ওই গ্রামের আবু সাঈদের ছেলে এখন বেকারত্ব ঘুচিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু স্থানীয় বাজারে ক্যাপসিকাম বিক্রি না করতে পেরে বিপাকে পড়তে হয়েছে তাকে।

সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ রঙের ক্যাপসিকাম। অধিক ফলনের আশায় ক্যাপসিকাম ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক হৃদয়। তার হাতের ছোঁয়া আর যত্ন-পরিচর্যায় ক্যাপসিকামের চারাগুলো হয়ে উঠেছে হৃষ্টপুষ্ট।

হৃদয় মিয়া জানায়, চারা রোপণের দুমাস পর থেকেই গাছে ফল ধরা শুরু হয়। ৪০ শতক জমিতে ক্যাপসিকাম চাষে বীজ কেনা, জমি প্রস্তুত, সার, বালাইনাশক ও মালর্চিং পেপার কেনা এবং শেড তৈরিসহ সব মিলিয়ে তার প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যদিও নিজেরা কাজ করায় এর মধ্যে শ্রমিকের খরচ খুব বেশি লাগেনি। চারা রোপণের আড়াই মাস পর থেকে তিনি ক্যাপসিকাম বিক্রি শুরু করেন। তবে ক্যাপসিকাম স্থানীয়ভাবে বিক্রি করা যায় না। বিক্রি করতে হয়েছে ঢাকার কাওরান বাজারে। প্রতিমণ ক্যাপসিকাম বিক্রি করা হয়েছে ৮ থেকে ৪ হাজার টাকায়। ইতিমধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ক্যাপসিকাম বিক্রি করা হয়েছে। এখন ক্ষেতে যে পরিমাণ ফসল আছে, তাতে অন্তত দেড় লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করা যাবে বলে আশা করছেন তিনি।

তবে ক্যাপসিকাম এ অঞ্চলের মানুষ খেয়ে অব্যস্ত না থাকায় স্থানীয়ভাবে বিক্রি করতে না পেরে তিনি বিপাকে পড়েছেন।

অনলাইন ঘেটে জানা যায়, ক্যাপসিকাম একটি বৈশ্বিক সবজি। এটাকে মিষ্টি মরিচ নামেও ডাকা হয়। বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। মিষ্টি মরিচের আকার ও আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে তবে সাধারণ ফল গোলাকার ও ত্বক পুরো হয়। মিষ্টি মরিচ দেশীয় প্রচলিত সবজি না হলেও ইদানিং এর চাষ বাড়ছে। বড় বড় শহরের আশেপাশে সীমিত পরিসরে কৃষকরা এর চাষ করে থাকেন, যা অভিজাত হোটেল ও বিভিন্ন বড় বড় মার্কেটে বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়াও মিষ্টি মরিচের বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনাও প্রচুর, কারণ সারা বিশ্বে টমেটোর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি হচ্ছে মিষ্টি মরিচ। পুষ্টিমানের দিক থেকে মিষ্টি মরিচ অত্যন্ত একটি মূল্যবান সবজি বলে পুষ্টিবিদদের অভিমত।

তাদের মতে, প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকার কারণে এবং অতি সহজেই টবে চাষ করা যায় বলে দেশের জনসাধারণকে মিষ্টি মরিচ চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে।

হৃদয় মিয়ার বাবা আবু সাঈদ বলেন, হৃদয় মিয়া দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। সে ইউটিউব দেখে আধুনিক পদ্ধতিতে ৪০ শতাংশ জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করেছে। পরিপক্ক হওয়ার প্রতিটি ক্যাপসিকাম ওজন হয় আড়াইশ গ্রাম। যা বাজারে বিক্রি করে পরিবারের অভাব-অনটন ঘোঁচবে বলে আশাবাদী। তবে, স্থানীয় বাসিন্দারা ক্যাপসিকাম সবজিটি খাওয়ায় অভ্যস্ত না থাকায় হাট-বাজারে বিক্রি করতে পারছি না। অনেকটা বাধ্য হয়েই বিক্রি করতে হচ্ছে ঢাকার কাওয়ান বাজারে নিয়ে গিয়ে। এতে সময় ও অর্থ দুটোই অপচয় হচ্ছে।

ক্যাপসিকাম পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের আধুনিকায়ন পদ্ধতিতে কিছু জমিতে নাগাফায়ার মরিচ, টমেটো স্মার্ট-১২১৭, নাপসান ফুলকপি ও কিছু জমিতে বিগবস বেগুনের চাষ করেছি। কিন্তু আমাদের এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় উৎপাদিত পণ্য সহসায় বিক্রি করা যায় না। ক্যাপসিকাম বিক্রি করতে হচ্ছে রাজধানী ঢাকার কাওরান বাজারে।

সাপধরী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বিএসসি বলেন, তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা হৃদয় মিয়ার ক্যাপসিকাম চাষ করা দেখে এলাকাবাসী আনন্দিত। এর আগে আমরা এ জেলায় কোথাও ক্যাপসিকামের চাষ দেখিনি। প্রথমবারের মতো এলাকায় চাষ করায় প্রতিদিনই দূর-দুরান্ত থেকে লোকজন ক্যাপসিকামের ক্ষেত দেখতে আসছেন। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মেহেদী হাসান টিটু ক্যাপসিকাম ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে স্থানীয় কৃষকরা ক্যাপসিকাম চাষ বাড়াবে বলেও আমার বিশ্বাস।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এএলএম রেজুওয়ান বলেন, ক্যাপসিকাম উচ্চ মূল্যের একটি নতুন ফসল। এ উপজেলায় প্রথমবার বাণিজ্যিকভাবে এ ফসল চাষ করে সাফল্য লাভ করেছেন হৃদয় মিয়া। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। বাজারে দাম ও চাহিদা ভালো হওয়ায় এ উপজেলায় আগামীতে ক্যাপসিকামের চাষ আরো বাড়বে বলে আশা করছি।

(ঢাকাটাইমস/২৩ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/জেডএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
অনুমোদনহীন সংগঠন গঠনের বিষয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক করেছে বিএনপি
সংস্কার বিষয়ে বিএনপির আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই: মির্জা ফখরুল
মসজিদের দোতলা থেকে শিশুর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার 
দেশে ফিরেছেন ৬৬ হাজার ৩৬২ হাজি, মৃত্যু ৪৩ জনের
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা