হারিয়ে যাচ্ছে শেরপুরের নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের ভাষা ও সংস্কৃতি

শেরপুর প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৬ মার্চ ২০২৪, ০৯:২৯
অ- অ+

কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে শেরপুরে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের ভাষা ও সংস্কৃতি। ওইসব সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, তাদের নিজস্ব ভাষা রক্ষার্থে কালচারাল একাডেমি প্রতিষ্ঠা, সংশ্লিষ্ট ভাষায় পাঠ্যবই মুদ্রণ এবং প্রতিটি স্কুলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলে রক্ষা পাবে তাদের ঐতিহ্য। অন্যদিকে নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার্থে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

জানা যায়, শেরপুরে বসবাসরত নৃগোষ্ঠীগুলো হলো গারো, কোচ, হাজং, বানাই, বর্মণ, হদি ও ডালু। এদের মধ্যে গারো ও কোচরা তাদের পরিবারে মাতৃভাষা টিকিয়ে রেখেছে। কিন্তু তাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করে বাংলা ভাষায়।

আদিবাসী সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্পের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তজুড়ে ৭টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৬০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। এর মধ্যে গারো, বর্মণ, কোচ ও হদি সম্প্রদায়ের সংখ্যাই বেশি। বর্তমানে জেলায় বাস করেন ২৬ হাজার গারো, বর্মণ ২২ হাজার, কোচ ৪ হাজার, হাজং ৩ হাজার, হদি ৩ হাজার ৫০০, ডালু ১ হাজার ৫০০, বানাই ১৫০ জন।

স্থানীয় পরিমল বর্মণ বলেন, এক সময় আমাদের সমৃদ্ধ ভাষা ও সংস্কৃতি থাকলেও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে নিজেদের চর্চা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারিয়ে গেছে নিজস্ব মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি।

পরিমল বর্মণ আরো বলেন, আমাদের একটি অংশ শিক্ষিত হচ্ছে আধুনিক শিক্ষায়। আর অল্প কিছু স্কুলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা ধরে রাখার চেষ্টা করা হলেও শিক্ষক সংকট দীর্ঘদিনের।

স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ক্লোডিয়া নকরেক কেয়া বলেন, আমরা একসময় আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলতাম। কিন্তু এখন বাংলা ভাষায় কথা বলি। আমাদের আগের ঐতিহ্যগুলা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। স্কুল, কলেজে আমাদের ভাষার কোনো চর্চাই হয় না। শুনেছি স্কুলে আমাদের ভাষার বই দেওয়া হয়েছে, কিন্তু শিক্ষক দেওয়া হয়নি। সরকারের কাছে দাবি জানাই আমাদের ভাষার শিক্ষক দেওয়ার জন্য।

শিউলি মারাক নামে একজন বলেন, আমাদের ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আমরা আমাদের ভাষায় কথা বলতে চাই। এটা নিয়ে সরকারের কাজ করা দরকার।

সুকেশ বলেন, আমরা বর্মন। বর্মন ভাষায় আমরা কথা বলতে পারি না, বাংলা ভাষায় কথা বলি। আমাদের ভাষার বই সরকার চালু করলে আমাদের ভাষাটা টিকে থাকত। হিমেল কোচ বলেন, আমরা পরিবারের সদস্যরা কোচ ভাষায় কথা বলি। কিন্তু স্কুলে তো আমাদের ভাষায় পড়ার কোন ব্যবস্থা নাই। তাই আমাদের ভাষা কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে।

আইইডির ফেলো সুমন্ত বর্মণ বলেন, ৬০ হাজারের মতো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শেরপুরে আছে। একসময় জেলায় সকল আদিবাসীদের নিজস্ব মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি ছিল। এদের জন্য একটি কালচারাল একাডেমি না থাকার কারণে জেলায় আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে যাওয়ার পথে।

সুমন্ত বর্মণ আরো বলেন, তবে এরই মধ্যে গারো ভাষা পাঠ্যবইয়ে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্কুলে বইয়ের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। শিক্ষক সংকটের কারণে গারো ভাষার বইগুলো পড়ানো হচ্ছে না। আমাদের দাবি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনিমার্ণে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সঙ্গে নিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে।

এদিকে শিক্ষক সংকটের কথা স্বীকার করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ওবায়দুল্লাহ বলেন, গারো ভাষার বিষয় থাকলেও কোনো শিক্ষক নেই। যতটুকু জানতে পেরেছি সরকারের উপজাতিদের ভাষাভিত্তিক শিক্ষক তৈরির প্রচেষ্টা আছে।

অন্যদিকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম। তিনি বলেন, জেলায় সাত ধরনের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের বসবাস রয়েছে। তাদের জন্য এরই মধ্যেই সাংস্কৃতিক একাডেমি স্থাপনের জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এবং তাদের ভাষা সংরক্ষণের জন্য আমাদের যে জাতীয় গণগ্রন্থাগার আছে সেটির মাধ্যমে উদ্যোগ নিচ্ছি। তাদের যে নিজস্ব ভাষা আছে সেটি যাতে সংরক্ষণ করা যায়।

(ঢাকাটাইমস/৬মার্চ/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ফের একাধিক প্রদেশে ড্রোন হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান, দাবি ভারতের
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের বাড়িতে আ.লীগ নেতার হামলা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে আতঙ্ক
পুশ ইন ঠেকাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার বিজিবির
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ করা হবে না: আমিনুল হক 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা