মানিকগঞ্জে নদীপাড়ের মাটি বিক্রি, ঝুঁকিতে বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১১ মার্চ ২০২৪, ১৫:৫১

মানিকগঞ্জের শিবালয়ে কাবিখা প্রকল্পের রাস্তা পুনর্নির্মাণের নামে ইছামতি নদী থেকে মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এতে করে আশেপাশের কৃষি জমি, রাস্তা, বাড়িঘর-দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও অবকাঠামো ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের বিশেষ কোটায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) প্রকল্পের আওতায় উথুলী বালিকা বিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তা পুনর্নির্মাণের জন্য সরকারি বরাদ্দ দেয়া হয়। সেই প্রকল্পের কাজ মাটি না পাওয়ায় দুই বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ব্যানার টানিয়ে মো. আব্দুর রহিম মিয়াকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি দেখিয়ে রাস্তায় পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করে। কাতরাশিন এলাকার রাস্তায় পুনর্নির্মাণে মাটি ভরাটের জন্য ৯ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আ. মান্নান ইছামতি নদী থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে রাস্তায় মাটি সম্পূর্ণ ভরাট না করে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন বসতবাড়িতে মাটি বিক্রি করছেন। পাশাপাশি নদীর একই স্থান থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে বিভিন্ন জায়গায় মাটি বিক্রি করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা ফারুক হোসেনও। সেখানে দেখা যায়, কাতরাশিন এলাকার তারা মসজিদ সংলগ্ন ইছামতি নদীর ২০০-৩০০ মিটার জায়গার দুই প্রান্তে দুইটি ভেকু দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছেন তারা। এতে করে আশপাশের কৃষিজমি, রাস্তাঘাট, মসজিদ, বাড়িঘর-দোকানপাটসহ যানবাহন চলাচলে ধুলোবালির কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। নদী থেকে অনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে ভেকু দিয়ে মাটি কাটার ফলে আবাদি জমিসহ বাড়িঘর ও গ্রামীণ অবকাঠামো ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক খান বলেন, ইছামতি নদীতে ২০২২ সালে নদী খনন প্রকল্পে কাজ করার সময় আমার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বার্থে চাঁদা তুলে নদীতে যাওয়ার রাস্তায় মাটি ভরাট করে একটি সড়ক তৈরি করি। গত বছর মান্নান মেম্বার নদী থেকে মাটি কেটে রাস্তা নষ্ট করে। এবারও রাস্তায় মাটি ফেলার আশ্বাস দিয়ে একটি রাস্তায় কাজ করার কথা বলে দীর্ঘদিন ধরে রাতের আঁধারে নদী থেকে মাটি কেটে বাড়ি বাড়ি বিক্রি করছে।

স্থানীয় মোহাম্মদ আলী জানান, যুবলীগ নেতা ফারুক এবং উথুলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে মান্নান মেম্বার নদী থেকে মাটি কেটে বাড়ি বাড়ি বিক্রি করছে। নদী থেকে মাটি কাটার সময় এলাকাবাসীকে বলছে নদীতে গোছল করার ব্যবস্থা করছি। কিন্তু দেখেন হাঁটুপানিতে কীভাবে গোছল করব। আবার বলছে এক রাস্তায় মাটি দেব, এখন দেখি বাড়িতে বাড়িতে মাটি বিক্রি করছে। নদী থেকে ভেকু দিয়ে অবৈধভাবে মাটি কাটার ফলে আবাদি জমিসহ বাড়ি-ঘর ভাঙনের কবলে পড়বে। কাতরাশিন এলাকার মফিজ উদ্দিন জানান, মান্নান মেম্বার ও ফারুক কাতরাশিন এলাকার ইছামতি নদী থেকে মাটি কেটে ট্রাক দিয়ে বাড়ি বাড়ি বিক্রি করার কারণে রাস্তায় ধুলোবালির জন্য খাবারে ধুলা খাওয়া যায় না, দোকানপাট-ঘরবাড়িতে ধুলা ও এলাকায় থাকতে পারতাছি না। অসুখবিসুখে পড়তাছি। আমরা সরকারের প্রশাসনের কাছে এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।

এ বিষয়ে ইউপি সদস্য মান্নান মেম্বার জানান, চেয়ারম্যানের নির্দেশে আমার প্রকল্পের রাস্তায় নদী থেকে মাটি পড়ছে। অন্য কোথাও বা কোনো বাড়িতে মাটি বিক্রি করিনি। ভাড়াদিয়া থেকে উথুলী পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার নদীর কোথাও পানি নেই। তাই গোছল করার জন্য ওই জায়গা থেকে মাটি কাটছি। প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে নদী থেকে মাটি কাটার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমার চেয়ারম্যানের নির্দেশ ছাড়া কোন বক্তব্য দিব না উনি ভালো জানেন প্রশাসনের কোন অনুমতি আছে কিনা? এ ব্যাপারে যুবলীগ নেতা ফারুক হোসেন জানান, আমি কোনো মন্তব্য করব না। আমি শুধু মাটি কাটি আর বিক্রি করি।

উথুলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্বাস আলি বলেন, প্রশাসনের অনুমতি তো অন্য কথা আমি মাটি কাটা বা বিক্রির সঙ্গে জড়িত নই। প্রকল্পের রাস্তার জন্য মাটি এনে ভরাট করছি। তবে মেম্বার আমার অধীনে থাকলেও কে কাটছে সে ব্যাপারে আমি অবগত না।

শিবালয় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুদেব কৃষ্ণ বলেন, গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের যে কাজটি কাতরাশিন এলাকায় করার কথা ছিল তা মাটির অভাবে করা সম্ভব হয়নি। এবার সেই কাজ ২-৩ দিনের মধ্যে মাটি কিনে রাস্তা পুনর্নির্মাণ করা কথা বলা হয়েছে। তবে এই কাজে প্রকল্পের সভাপতি আছে সেখানে চেয়ারম্যান ও মেম্বার নদী বা অন্য কোথাও থেকে মাটি দেওয়ার সুযোগ নাই।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বেলাল হোসেন বলেন, প্রথমত মাটি কাটা সম্পূর্ণ অবৈধ। এর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। তাদেরকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। সরকারি প্রকল্পে সরকার তাদের বরাদ্দ দিয়েছে। সেখানে সরকারের জায়গা থেকে মাটি কাটার কোনো সুযোগ নেই। খুব দ্রুত সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১১মার্চ/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :