ঈর্ষান্বিত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফাঁসানো হচ্ছে ঢাকা টাইমস সম্পাদককে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৪, ১১:১৫ | প্রকাশিত : ১১ মার্চ ২০২৪, ২২:৪২

বাস্তবে তিনি কোনো মামলার আসামি নন। মানিলন্ডারিংয়ের একটি মামলায় একজন আসামি পুলিশি হেফাজতে বেশ কয়েকজনের নাম বলেন। সেই অভিযোগে ঢাকা টাইমস সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলনকে আসামি হিসেবে কারাগারে যেতে হয়েছে। কিন্তু ওই একই আসামি আরও যাদের নাম বলেছেন তারা বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল দোলন নিম্ন আদালতে জামিন আনতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে কারাগারে পাঠানো হলো।

আরিফুর রহমান দোলনের রাজনৈতিক সহকর্মীরা বলছেন, ঈর্ষান্বিত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাকে ফাঁসানো হচ্ছে। না হলে কোনো একজন আসামি গণহারে যাদের নাম বলেছেন, আদালত মামলার প্রতিবেদন এখনো আমলে নেননি, কিন্তু মামলায় আসামি বানিয়ে একজনকে কারাগারে পাঠানো হলো। এতেই বোঝা যাচ্ছে ঘটনা উদ্দেশ্যমূলক।

ফরিদপুরের দুই ভাই বরকত-রুবেলের বিরুদ্ধে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ—সিআইডি রাজধানীর কাফরুল থানায় যে মামলা করে তাতে প্রথমে ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয় এবং ৪১ জনকে অব্যাহতি (NON SENT UP) দেয়া হয়। সেসময় আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণও করেন। পরে অভিযোগ গঠনের সময় আদালত অধিক তদন্তের জন্য পুনরায় সিআইডিকে তদন্তের অনুমতি দেয়। এই মামলায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেয় ছয়জন। তারা হলেন- বরকত, রুবেল, নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী, আশিকুর রহমান ফারহান, নিশান মাহমুদ শামীম ও বিল্লাল হোসেন।

এদের মধ্যে শুধুমাত্র বরকত গণহারে ৫১ জনের নাম বলেন, ওই জবানবন্দিতে এক জায়গায় শুধু একবার আরিফুর রহমান দোলনের নাম আছে (বাকি পাঁচজনের কেউই দোলনের নাম বলেননি)।

সিআইডি অধিকতর তদন্তে প্রথম ১০ জনের (বরকত, রুবেল, মোহতাশেম হোসেন বাবর, এইচ এম ফোয়াদ, ফারহান, ফাইন, বিল্লাল, মিনার, নাসিম, ডেভিড) সঙ্গে আরও ৩৬ জনের নাম যুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় ৮ মাস আগে। এখনো আদালত সেটি গ্রহণ করেননি। এই অধিকতর অভিযোগপত্রে শেষ নামটি দোলনের। অধিকতর অভিযোগপত্র গ্রহণ হবে কি না সর্বশেষ গত ৫ মার্চ আদালত সেজন্য শুনানির দিন ধার্য করেছেন আগামী ২২ এপ্রিল। যতদিন এই অভিযোগপত্র গৃহীত না হচ্ছে, আইন অনুযায়ী ততদিন পর্যন্ত দোলন আসামি নন।

এদিকে অধিকতর তদন্তে অভিযোগপত্রে নাম যুক্ত হতে পারে দু একটি মিডিয়ায় আসা এমন খবরের ভিত্তিতে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার আশঙ্কা থেকে আরিফুর রহমান দোলন ৮ মাস আগে হাইকোর্ট থেকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন নেন। পরবর্তীতে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণও করেন। তিনি প্রতি ধার্য তারিখে নিম্ন আদালতে হাজিরও হচ্ছিলেন- যদিও আদালত এই ৮ মাসে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেননি, শুনানিও করেননি। শুধুমাত্র প্রতিমাসে শুনানির দিন ধার্য হয়। অভিযোগপত্র গ্রহণ না হওয়ায় দোলন আসামিও নন। ওই মামলায় দ্বিতীয় দফায় যুক্ত হওয়া বাকি ৩৬ জনের কেউ কারাগারে নেই।

৫ মার্চ আরিফুর রহমান দোলন যথারীতি আগের মতোই আদালতে হাজিরা দেন। এদিনও সম্পূরক অভিযোগপত্র গ্রহণের শুনানির তারিখ দেওয়া হয় ২২ এপ্রিল। কিন্তু আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিয়মিত হাজিরা দেওয়া ঢাকা টাইমস সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলনকে কারাগারে পাঠান আদালত। অথচ এই মামলায় প্রথম অভিযোগপত্রে নাম থাকা ১০ জনের মধ্যে জামিনে আছেন সাতজন। এরা হলেন- বাবর, লেভী, ফারহান, মিনার, নাসিম, বিল্লাল ও ডেভিড।

আরিফুর রহমান দোলন ফরিদপুর-১ আসনে গত জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোট পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হন। তিনি ৮৫ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। ওই আসনে বিজয়ী আবদুর রহমান এখন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী। আরিফুর রহমান দোলন বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য।

আরিফুর রহমান দোলন ঢাকা টাইমস ছাড়াও সাপ্তাহিক এই সময় পত্রিকার সম্পাদক। তিনি আলফাডাঙ্গার বেগম শাহানারা একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা এবং কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমীর সভাপতি ও আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজের সভাপতি। পাশাপাশি তিনি একজন লেখক। উপন্যাসসহ তার লেখা ছয়টি বই বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত।

আরিফুর রহমান দোলন কর্মজীবনে আমাদের সময় পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর উপ-সম্পাদক ও প্রথম আলো পত্রিকার ডেপুটি চিফ রিপোর্টার ছিলেন।

তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য।

এছাড়াও আরিফুর রহমান দোলন সমাজসেবামূলক সংস্থা কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি মানবিক সহায়তামূলক নানা কর্মকাণ্ড করে সব মহলের মানুষের কাছেই প্রশংসিত হয়েছেন। গত দুই দশক ধরে ফরিদপুর-১ আসনের তিন উপজেলা আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালীতে বহুমুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন দোলন।

রাজনৈতিক সহকর্মীরা বলছেন ঈর্ষান্বিত হয়ে ফাঁসানো হচ্ছে:

রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে ফরিদপুর-১ আসনে গণমানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করায় কতিপয় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী আরিফুর রহমান দোলনের প্রতি ঈর্ষান্বিত। তাকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে তার বিরুদ্ধে পাতানো ও সাজানো একটি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ানোও ছিল সেই গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল কখনোই ছিল না। বিস্ময়কর হলো মানিলন্ডারিং মামলায় পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ ছাড়া শুধুমাত্র একজন আসামির জবানবন্দিতে কারও নাম উচ্চারণ হলেই সেই নামকেও অভিযোগপত্রে আনার অতীত রেকর্ড নেই। অভিযোগপত্র দেওয়ার জন্য পুলিশের যে ‘চার্ট অব এভিডেন্স’ সেখানে একটি মাত্র এভিডেন্স যদি একক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি হয় (মানিলন্ডারিং মামলার ক্ষেত্রে) তাহলে সেটি আসলে কখনোই বিবেচনায় নেওয়া হয় না।

সবচেয়ে বড় কথা একজন প্রতিষ্ঠিত পেশাদার সাংবাদিক ও সম্পাদক যিনি আসামিই নন, তাকে কারাগারে প্রেরণ করা মানবাধিকার লঙ্ঘন কি না সেই প্রশ্নও জোরেশোরে উঠেছে।

অতীতেও বিভিন্ন সময় পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের মাধ্যমে আসামিকে দিয়ে ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন অনেকের নাম ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ানোর অনেক অভিযোগ আছে। যা বিভিন্ন সময় অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর ঈর্ষা ও জিঘাংসার শিকার হয়ে আরিফুর রহমান দোলনের মতো একজন পেশাদার সাংবাদিক ও সম্পাদক বিনা কারণে বা ভুল ব্যাখ্যায় কারাগারে থাকা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক ঘটনা। জামিনের মাধ্যমে তার দ্রুত মুক্তি কাম্য।

লক্ষণীয় যে, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ৫০ জনেরও অধিক নাম একজন আসামি যে বলেছে তার মধ্যে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিপুল ঘোষের নামও আছে। এটাও উদ্দেশ্যমূলক। তবে সিআইডি সম্পূরক যে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছে তাতে প্রবীণ নেতা বিপুল ঘোষের নাম আবার বাদ দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা বিপুল ঘোষ চার্ট অব এভিডেন্সে একটি মাত্র এভিডেন্সের কারণে সম্পূরক অভিযোগপত্রে বাদ গেলে সাংবাদিক সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলনসহ আরও কয়েকজনকে কেন বাদ দেওয়াইবা হলো না?

আর যে সম্পূরক অভিযোগপত্র এখনো আদালত গ্রহণই করেনি সেই মামলায় একজন প্রতিষ্ঠিত সম্পাদককে কীভাবে কারাগারে পাঠানো যায়?

(ঢাকাটাইমস/১১মার্চ/আরআর/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

গণমাধ্যম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

গণমাধ্যম এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :