গাজার শিশুদের কান্না করার শক্তিও নেই: ইউনিসেফ
জাতিসংঘের শিশু নিরাপত্তা ও অধিকার বিষয়ক সংস্থা (ইউনিসেফ) বলছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ১৩ হাজারেরও বেশি শিশুকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে যারা বেঁচে আছে তারাও গুরুতর অপুষ্টিতে ভুগছে এবং এমনকি তাদের ‘কান্না করার শক্তিও নেই’। খবর আলজাজিরার।
রবিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজে এক সাক্ষাতকারে ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেছেন, ‘আরও হাজার হাজার শিশু আহত হয়েছে বা তারা কোথায় আছে তাও আমরা নির্ধারণ করতে পারছি না। তারা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকতে পারে … আমরা বিশ্বের অন্য কোনও সংঘাতে শিশুদের মধ্যে এতো মৃত্যুর হার দেখিনি।’
তিনি বলেন, ‘আমি শিশুদের ওয়ার্ডে ছিলাম যারা মারাত্মক রক্তস্বল্পতা ও অপুষ্টিতে ভুগছে, পুরো ওয়ার্ড ছিল একেবারেই শান্ত। কারণ বাচ্চাদের… এমনকি কান্না করার শক্তিও নেই।’
রাসেল আরও বলেন, ইসরায়েলের ‘গণহত্যা’ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনির দুর্ভিক্ষের শিকার হয়েছে। তাদের সাহায্য ও সহায়তার জন্য গাজায় সহায়তাবাহী ট্রাকগুলো নিয়ে যাওয়া ছিল ‘বিশাল আমলাতান্ত্রিক চ্যালেঞ্জ’।
এদিকে ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ ও শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) জানিয়েছে, গত ৪ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ-সংঘাতে যত শিশু নিহত হয়েছে গাজা যুদ্ধে তার চেয়ে বেশি শিশু নিহত হয়েছে।
মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইউএনআরডব্লিউএ-এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি জানিয়েছেন, ‘বিস্ময়কর। গাজায় মাত্র ৪ মাসে নিহত শিশুর সংখ্যা বিশ্বজুড়ে ৪ বছরের যুদ্ধে নিহত শিশুর সংখ্যার চেয়ে বেশি।’
ইউএনআরডব্লিউএ আরও জানিয়েছে অনুসারে, উত্তর গাজায় দুই বছরের কম বয়সী প্রতি তিনজন শিশুর মধ্যে একজন শিশু এখন তীব্রভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে।
সংস্থাটি আরও সতর্ক করেছে, পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে নিরলস ইসরায়েলি বোমা হামলার সম্মুখীন হওয়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এদিন ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। পাশাপাশি ইসরায়েল থেকে প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।
তারপর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও। পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৩১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন ৭২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।
(ঢাকাটাইমস/১৮মার্চ/এমআর)