সবুজবাগে ট্রাক থামাতে চালককে গুলি: অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ৬ সন্ত্রাসী

রাজধানীর সবুজবাগের বাইকদিয়া এলাকায় চলন্ত ট্রাক থামাতে গিয়ে চালকের পায়ে গুলির ঘটনায় অস্ত্র-গুলিসহ ছয় সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) খিলগাঁও জোনাল টিম।
তারা জমি দখল, হত্যাসহ ভাড়ায় বিভিন্ন অপরাধ করে আসছিল বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
আটককৃতরা হলেন- রমজান আহম্মেদ নয়ন, যুবরাজ, ইব্রাহিম হাওলাদার, মকবুল হোসেন মুকুল, সাজ্জাদ হোসেন প্রান্ত ও রিফাতুল্লাহ নাঈম। তাদের কাছ থেকে ৪৯ রাইন্ড গুলি, ছয়টি ম্যাগজিন ও পাঁচটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
সোমবার রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, রাজধানীর সবুজবাগ থানার বাইকদিয়া এলাকায় জমি দখল বা বালু ভরাট নিয়ে বাবুল ও নজরুল গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। সম্প্রতি বাবুল গ্রুপ একটি জমির দখল নিয়ে গেট ও সিসিটিভি ক্যামেরা বসায়। এই গেট ভঙার জন্য নজরুল গ্রুপের হয়ে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে চলন্ত ট্রাক থামাতে গেলে দুর্ঘটনায় সন্ত্রাসী দলের এক সদস্য আহত হন। এই ঘটনায় সন্ত্রাসীদের একজন পিস্তল বের করলে ট্রাকে অবস্থানরত ট্রাকের মালিক মো. গোলাম ফারুক এবং ট্রাকের ড্রাইভার আলম ভয় পেয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন তারা ড্রাইভার আলমকে মারধর করতে থাকে ও এক সন্ত্রাসী তার ডান পায়ে গুলি করে দেয়। এই ঘটনায় সবুজবাগ থানায় একটি মামলা দায়েরের পর ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ।
গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তে নেমে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সবুজবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ট্রাক চালককে গুলির ঘটনার মূলহোতা রমজান আহম্মেদ নয়নসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাসাবো এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল গুলি ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, সবুজবাগ থানার বাইকদিয়া এলাকার জমি কেনা-বেচা ও বালু ভরাট ব্যবসা নিয়ে দুটি গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র দ্বন্দ্ব চলে আসছে।
গ্রুপ দুটির একটির নেতৃত্বে রয়েছে বাবুল এবং আরেকটির নেতৃত্বে রয়েছে নজরুল। ঘটনার কিছুদিন আগে বাবুল গ্রুপ বাইকদিয়া এলাকায় একটি লোহার গেট ও কিছু সিসিটিভি ক্যামেরা বসায় যাতে নজরুল গ্রুপ ওই এলাকায় বালু ভরাট করতে না পারে। ঘটনার দিন আসামিরা মূলত নজরুল গ্রুপের পক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা ও লোহার গেট ভাঙার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বাবুল গ্রুপের লাগানো লোহার গেট ভাঙার জন্য চলন্ত ট্রাকের গতিরোধ করতে গিয়ে দুর্ঘটনাবসত সন্ত্রাসী দলের সদস্য হীরা আহত হয়। এতে রমজান ক্ষিপ্ত হয়ে ট্রাক চালক আলমের পায়ে গুলি করে দেয়। পরবর্তীতে তারা আহত হীরাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে আত্মগোপনে চলে যায়।
এক ডজন মামলার আসামি রমজান:
ডিবিপ্রধান বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন থানায় রমজানের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, ডাকাতি, ছিনতাই ও গোলাগুলিসহ প্রায় এক ডজন মামলা রয়েছে। সে খিলগাঁও, বাসাবো, সবুজবাগ, মুগদা ও মাদারটেক এলাকার একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। মূলত ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে অস্ত্রবাজী করাই তার মূল পেশা। ২০১৬ ও ২০২১ সালে অস্ত্রসহ গোয়েন্দা পুলিশের হাতে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছিলো। এমন কি সম্প্রতি সবুজবাগে বাক-প্রতিবন্ধী লেগুনা চালক নাদিম হোসেন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। এই ঘটনায় ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হওয়া সাকিব ও কাউছার সন্ত্রাসী রমজানের আপন ছোট ভাই। যারা হত্যা মামলায় কারাগারে রয়েছে।
এই সন্ত্রাসী গ্রুপ সবুজবাগসহ আশেপাশের এলাকায় বিভিন্ন সময় অস্ত্রের মহড়া দেয়। জমি, বাড়ি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে কেউ থানায় অভিযোগ দেওয়ার সাহস পায় না।
অভিযুক্তদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না জানতে চাইলে হারুন বলেন, এরা মূলত অস্ত্রবাজ। তারা পেশাদার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী। স্থানীয় বড় ভাইদের পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসীরা কাজ করে আসছে। তাদের কোনো দল নেই।
(ঢাকাটাইমস/১৮মার্চ/এসএস/ইএস)

মন্তব্য করুন