উৎসবমুখর ঈদ হলেও আনন্দবঞ্চিত ছিন্নমূল মানুষেরা

সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হলেও তা থেকে বঞ্চিত ঢাকার ফুটপাতের বাসিন্দারা। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে লাখো মানুষ রাজধানী ছেড়ে চলে যাওয়ায় চিরচেনা যানজটের নগরী ঢাকা এখন নীরব। সেই নীরবতায় মলিন মুখ এসব ভাসমান মানুষ।
বৃহস্পতিবার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা যায়, এবারের ঈদুল ফিতরে ছয় দিনের ছুটিতে অনেকটাই ফাঁকা রাজধানী ঢাকা। তবে রাস্তার পাশে ফুটপাতে পার্কে যাদের থাকা খাওয়া ঘুম- সব চলে, তারা রয়েছেন নগরীতেই। অন্যান্য দিনের মতোই কেটেছে তাদের ঈদের দিনটি। রাস্তার পাশে থাকা পরিবারগুলোর শিশুরা পথচারীদের কাছে চাচ্ছেন সাহায্য। ঈদ উপলক্ষে কেউ কেউ বাড়িয়ে দিচ্ছেন সাহায্যের হাত।
অনেক ছিন্নমূল শিশুর শরীরে নতুন জামা দেখা গেলেও অনেকেরই ভাগ্যে জোটেনি। এসব ভাসমান পরিবারের প্রধানের কাছে ঈদ মানে হতাশার অন্ধকার। কেননা ঈদ উৎসবে শিশুদের যে বায়না থাকে তার অনেকটাই মেটাতে পারে না তারা। যেখানে তাদের দিনের খাবার যোগাতেই অনেক কষ্ট হয়, সেখানে ঈদের আনন্দে পরিবারের চাহিদা মেটাতে না পেরে উৎসবের দিনও তাদের কাছে বর্ণহীন।
এসব হতদরিদ্র মানুষেরা জানান, প্রতিনিয়তই তাদের ব্যস্ত থাকতে হয় টিকে থাকার সংগ্রামে। এসব অসহায়দের অনেকে আছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী। আর ধনীরা টাকা দিলেই তা দিয়ে খাবার কিনে খেতে হয়। কোনো কোনো দিন কাটে পানি খেয়ে।
খিলগাঁও রেললাইন এলাকায় দেখা যায় ছিন্নমূল দম্পতি রমিজ মিয়া ও আছিয়া বেগমকে। পাশেই রয়েছে তাদের চার বছরের শিশু সন্তান বৃষ্টি।
রমিজ মিয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, “আমরা এখানেই থাকি। ঈদের সময় রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকে। ঈদের সময় অনেকের ঘরে উৎসব থাকলেও আমাদের সেই উৎসব নেই। ভিক্ষা করে আমাদের জীবন চলে।”
তিনি আরও বলেন, “সকাল বেলায় শাহজাহানপুর গোরস্তানের সামনে দাঁড়াইয়া ছিলাম। ওইহান থ্যাইকা কিছু টাহা পাইছি। সাথে মেয়েডারে নিয়া গেছিলাম। কাইলক্যা (গতকাল) রাইতে গাড়ি দিয়া আইসা একটা ম্যাডাম মেয়েডারে একটা জামা দিয়া গেছে আর ৫শ টাহা দিয়া গেছে।”
এসময় আছিয়া বেগম বলেন, “ভিক্ষা করে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু এভাবে কী আর চলে। ঈদের দিনে গোরস্থান থেকে এসে জামাই সেমাই ও আধা সের পোলাওর চাউল আনছে। তাই পাক (রান্না) করতাছি। এইটাই আমাদের ঈদ।”
পান্থকুঞ্জ পার্কের সামনে পাওয়া যায় আব্দুল করিমকে। তিনি বলেন, “ভিক্ষাবৃত্তি করেই চলছে জীবন।”
রমজান আর ঈদ মিলিয়ে ভিক্ষা অন্য সময়ের চেয়ে বেশি পাওয়া যায় বলে জানালেন জামাল আলী। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে অন্য কোনো সহায়তা তিনি পাননি।
(ঢাকাটাইমস/১১এপ্রিল/জেবি/এফএ)

মন্তব্য করুন