রাইসির হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা নাশকতা নয়
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং অন্য সাতজন নিহত হওয়ার ঘটনায় ইরানের সামরিক তদন্তকারীরা এখন পর্যন্ত অপরাধমূলক কার্যকলাপের কোনো প্রমাণ খুঁজে পাননি বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।
বিমান বিধস্তের ঘটনায় অসমর্থিত দাবি ‘বিমানে গুলি করা হয়েছে’ এমন কোনো আলাত পাওয়া যায়নি।
ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে প্রাথমিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। দেশটির আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ কথা জানায়।
তাসনিমের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দুর্ঘটনার পর বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি সোমবার সকালেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
দুর্ঘটনার বিষয়ে সামরিক বাহিনীর একটি প্রাথমিক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, একটি উঁচু এলাকায় আঘাত করার পরার হেলিকপ্টারটিতে আগুন ধরে যায় এবং এটির ধ্বংসাবশেষে ‘বুলেটের কোনো গর্ত’ পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রবিবার বিধ্বস্ত হওয়ার আগে রাইসির হেলিকপ্টারটি পূর্ব-নির্ধারিত পথেই উড়ছিল এবং নির্ধারিত গতিপথ কখনো ত্যাগ করেনি।
ইরানের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি তার নিজ জন্মস্থান মাশহাদে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন। এই শহরেই রাইসির জন্ম ও বেড়ে ওঠা।
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার চারদিন পর বৃহস্পতিবার তাকে দাফন করা হয়। দাফনের পরদিনই প্রকাশ্যে এলো ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন।
রবিবার স্থানীয় সময় দুপুরের দিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদোল্লাহিয়ানসহ ৯ আরোহী নিয়ে বেল ২১২ মডেলের হেলিকপ্টারটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর দুর্গম পাহাড়ি জঙ্গলের ভেতরে বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটির খোঁজ পাওয়া যায়।
আজারবাইজান সীমান্তে দুই দেশের যৌথভাবে নির্মিত একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন রাইসি। সেখান থেকে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজে ফেরার পথে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর ব্যাপক অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শুরু হয়।
ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর সিনিয়র বিশেষজ্ঞ ও প্রযুক্তিবিদের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত দলের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হেলিকপ্টারটি পুরো পথে তার পূর্বনির্ধারিত রুটে ছিলো এবং ফ্লাইট রুট থেকে বিচ্যুত হয়নি। বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের গায়ে বুলেটের আঘাতে চিহ্ণ বা নাশকতার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দুঘটনায় পড়ার প্রায় দেড় মিনিট আগে বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের পাইলট অন্য দুটি হেলিকপ্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তবে হেলিকপ্টারে ব্লাক বক্স না থাকার কারণে কী কথা হয়েছিল সেটি জানা সম্ভব হয়নি। পাহাড়ে বিধ্বস্ত হওয়ার পর হেলিকপ্টারটিতে আগুন ধরে যায়।
হেলিকপ্টারটি দুর্গম পাহাড়ে বিধ্বস্ত হলেও ঘন কুয়াশা, ভারী বৃষ্টি আর ঠাণ্ডা তাপমাত্রা উপেক্ষা করেই উদ্ধার অভিযান একটানা চলে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার স্থানীয় সময় ভোর পাঁচটায় ইরানের তৈরি একটি আধুনিক সামরিক ড্রোনের সহায়তায় বিধ্বস্তের সঠিক অবস্থান চিহ্নিত করা হয়।
প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কন্ট্রোল টাওয়ার ও বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের পাইলটের মধ্যে কথোপকথনের মধ্যে সন্দেহজনক কিছু ধরা পড়েনি। আরও তদন্তের পর হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনা নিয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে বলে জানিয়েছে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী।
(ঢাকাটাইমস/২৪মে/কেএ/এসআইএস)