আজিজ-বেনজীরের দুর্নীতির দায় সরকারের: রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৪ জুন ২০২৪, ১৯:২২| আপডেট : ০৪ জুন ২০২৪, ২০:০৪
অ- অ+

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ এবং সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির দায় সরকার এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বেনজীর যখন বন্দুকের ভাষায় কথা বলতো তখন তো আপনারা তাকে অস্বীকার করেননি। বেনজীর-আজিজদের বিকট দুর্নীতির দায় আপনারা কখনই এড়াতে পারবেন না। তাদের দুজনের দুর্নীতির দায় সরকারের এবং রাষ্ট্রের।

মঙ্গলবার বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, গণতন্ত্রকে অস্বীকার করে ডামি সরকার রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে আওয়ামীকরণের মাধ্যমে জনগণকে ক্রীতদাস বানানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী ফ্যাসিজমের ছায়া-উপচ্ছায়া দেশের ওপর বিস্তারলাভ করেছে। আওয়ামী লীগ কখনোই জনকল্যাণে ইতিবাচক রাজনীতি করেনি। খুন, রক্তপাত, সহিংসতা, দখল, টাকা পাচার আর অনর্গল মিথ্যা কথা বলাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব আজ বলেছেন, ‘আজিজ-বেনজীর আমাদের লোক নয়। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কেউ দুর্নীতিবাজ নয়।’

ওবায়দুল কাদের সাহেবকে বলতে চাই, আপনি কি ডানে বামে তাকিয়ে কথা বলছেন, নাকি আপনাদের স্বভাবসুলভ ডাহা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। আপনার কথাই যদি ঠিক হয় তবে আপনাদের ডামি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা হয়েছিল কীভাবে? তাছাড়াও অসংখ্য আওয়ামী শীর্ষ নেতাদের নামে কীভাবে তখন এতো মামলা হয়েছিল? শীর্ষ নেতা মরহুম আব্দুল জলিল, শেখ সেলিম, আপনি নিজে এবং আপনাদের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী নেতারা গোয়েন্দাদের নিকট কী স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন, সেটি কিন্তু এখনো অনলাইন মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে আছে। ব্যাংক খালি হওয়া, লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে যাওয়া, আওয়ামী ঘনিষ্ঠ বিপুল অঙ্কের ঋণখেলাপি, নজিরবিহীন আর্থিক কেলেঙ্কারিতে যারা জড়িত তারা কি তাহলে আওয়ামী লীগের মাঝারি নেতা? আপনার কথায় মনে হয়, মাঝারি নেতাদের দুর্নীতি করার অধিকার রয়েছে। আপনাদের কর্মচারীদের হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির খবর বের হচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বেনজীর যখন বন্দুকের ভাষায় কথা বলতেন তখন তো তাকে অস্বীকার করেননি।

রিজভী বলেন, ‘বেনজীর-আজিজদের বিকট দুর্নীতির দায় আপনারা কখনোই এড়াতে পারবেন না। ক্ষমতা দখলে রেখে অনন্তকাল অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার অসৎ অভিপ্রায়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিনাশ করার জন্য শেখ হাসিনা তাঁর প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে বেনজীর-আজিজদের ব্যবহার করার পাশাপাশি বড় হাতিয়ারে পরিণত করেছে বিচার বিভাগকে।’

রিজভী বলেন, ‘দেশে কোনো আইনি প্রক্রিয়া নেই, সবই আওয়ামী প্রক্রিয়া, সব গোপালগঞ্জ প্রক্রিয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে কারাগারে নেওয়া হয়, সাজা দেওয়া হয়।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যে বিচারালয় ছিল মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল, সেই বিচারাঙ্গনকে পরিণত করা হয়েছে আওয়ামী স্বর্গ আর বিরোধীদের জন্য আতঙ্কপুরী। তাদের নিজেদের লোকদের জন্য এক আইন—সাত খুন মাফ। আর বিরোধীদের জন্য গণভবনের ফরমায়েশি নির্দেশ অনুযায়ী চলে বিচার কার্যক্রম। তারা জামিনও পাবে না। বিনা দোষে তাদের সাজা ভোগ করতে হবে। বিচারকের আসনে বসানো হয়েছে বাছাই করা দলীয় লোকজন। বিচারের বাণী আক্ষরিক অর্থে আজ নিভৃতে কাঁদছে।’

তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, সাবেক ছাত্রদল নেতা, শরীয়তপুর (গোসাইরহাট-ডামুড্যা-ভেদরগঞ্জ) আসনের ধানের শীষের জনপ্রিয় প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দিন অপুকে গত প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর কারারুদ্ধ রেখে তার ওপর চলছে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের প্রতিহিংসাপরায়ণতার চরম হিংস্রতা। গুরুতর অসুস্থ অপুর জীবন হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে। বিভিন্ন সাজানো মামলায় কারাগারে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে অপুকে। যেসব মিথ্যা মামলায় অপুকে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে তার কোনোটিই প্রমাণ করতে পারেনি আজ্ঞাবহ আদালত। যে মামলায় তাকে আটক রাখা হয়েছে একই ধারার মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা-সন্ত্রাসী, লুটেরা-ব্যবসায়ীরা জামিনে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর অপুর মামলায় জামিনের শুনানি করার তারিখও দিচ্ছে না আদালত।

গণমাধ্যমের তথ্য উদ্ধৃত করে রিজভী বলেন, ‘গত ২৭ মে ২০২৪ তারিখে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে দেশের আক্রান্ত উপকূলীয় ১৯ জেলা, পার্বত্য তিন জেলা ও সিলেট বিভাগের মৎস্য ঘের ও খামারের প্রায় ১০০০ কোটি টাকার মাছ এবং ভেঙে যায় হাজার হাজার মৎস্য ঘের ও খামার। যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৪০০০ কোটি টাকা। এমনিতে গত ২২ মে ২০২৪ তারিখ হতে সাগর ও নদীর মোহনায় ৬৫ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞায় মাছ ধরা বন্ধ। তার ওপর ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস যা নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত জেলেদের মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। ১ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত দেশের এক-পঞ্চমাংশ জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনে সরকারি কোনো কার্যকর উদ্যোগ বা পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। যা অতি দুঃখ ও বেদনাদায়ক। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, দলের স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, নির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল আলম তেনজিং, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম প্রমুখ।

ঢাকাটাইমস/০৪জুন/জেবি/ইএস

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পাবনায় বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ: মোটরসাইকেল ও অফিস ভাঙচুর, হাসপাতালে ভর্তি ৫
বিএনপি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চায়: আমিনুল হক 
অভ্যুত্থানের পর সরকারের কর্তব্য ছিল শিক্ষাখাতের সংস্কারে মনোযোগ দেওয়া: সাকি
৫ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করেছে বিএসএফ 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা