অঢেল সম্পদের মালিক ঝিনাইদহ জেলা আ.লীগের সম্পাদক কে এই মিন্টু?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৩ জুন ২০২৪, ১৬:০০| আপডেট : ১৩ জুন ২০২৪, ১৬:৪৯
অ- অ+

এমপি আনার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে নিয়ে রাজনৈতিক মহলসহ সবখানেই আলোচনা চলছে।

গেল দশ বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকা মিন্টুকে নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে খোদ দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যেই। বিশেষ করে এক সময়ের ‘অসচ্ছল’ মিন্টুর গত দেড় দশকে ‘বিত্তশালী’ হওয়া নিয়েই আলোচনা হচ্ছে বেশি।

অভিযোগ রয়েছে, প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল কুদ্দুসের ছেলে মিন্টু গত দেড় দশকে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক বনেছেন। কেবল ঝিনাইদহ শহরেই মিন্টুর তিন ডজন ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, একাত্তরে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মিন্টুর বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবা রুহুল কুদ্দুস সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন। বাবার মৃত্যুর পর অনেক অভাব-অনটনে পড়তে হয় মিন্টুর পরিবারকে।

যেভাবে মিন্টুর উত্থান

জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মিন্টুকে। তিনি ২০১২ সাল থেকে ১১ বছর ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র ছিলেন। পাশাপাশি ২০১৪ সাল থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, পৌর মেয়র থাকা অবস্থায় পৌরসভায় কাজ না করে প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এছাড়াও দোকান বরাদ্দ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন>মিন্টুর ফোনে কি আনারের নগ্ন ছবি ছিল? একারণেই গ্রেপ্তার?

জানা গেছে, মিন্টু ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দিনে দিনে অনেক বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। নামে-বেনামে অঢেল সম্পত্তি রয়েছে তার। ব্যাংকে রয়েছে প্রচুর অর্থ। ঝিনাইদহ শহরের প্রাণকেন্দ্রে (আরাপপুর) আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন তিনি। সেখানে ৩৬টি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। ঢাকার মোহাম্মদপুরেও তার ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জানা গেছে।

অর্থসম্পদ অর্জনের পাশাপাশি ফৌজদারি অপরাধ ও খুন-হত্যায় নাম জড়িয়ে তার। শ্রমিক নেতা গাফফার হত্যা মামলার আসামি ছিলেন তিনি। এছাড়া আরও একটি হত্যা মামলায় ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে তার নাম উঠে আসে। ছাত্রলীগ নেতা মোম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ধর্ষণ, গুম, নারী সম্পৃক্ততার একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু ক্ষমতার দাপটে তা আর আলোর মুখ দেখেনি।

জানা গেছে, ঝিনাইদহ ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি, চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, ঝিনাইদহ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও ঝিনাইদহ চক্ষু হাসপাতালের সভাপতি মিন্টু। এছাড়া ঝিনাইদহ বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির সভাপতি এবং সমবায় ব্যাংকের পরিচালকসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।

জেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জানান, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগে মিন্টুর শক্তিশালী একটি গ্রুপ রয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনের পাঁচবারের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইয়ের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধ ছিল তার। রাজনৈতিক বিরোধ ছিল ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের সঙ্গে। ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতার অবস্থান একদিকে এবং সাইদুল করিম মিন্টু একাই একদিকে। তার কারণে বিভেদ রয়েছে, যুবলীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উপজেলা ইউনিটগুলোতে।

তাছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি গত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হলেও তার বিরুদ্ধেও মাঠে সক্রিয় অবস্থান নেন মিন্টু। নমিনেশন না পেয়ে টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে তার অবস্থান গড়ে তোলেন। দলীয় পদ ধরে রাখতে তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে গড়ে তোলেন সখ্য। নিজের পদ অর্জিত হলে কাজী কামাল আহম্মেদ বাবু বা গ্যাস বাবুদের মতো সন্ত্রাসী ও কালো ব্যবসায়ীদের দলের বিভিন্ন পদে স্থান করে দেন।

গত মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে মিন্টুকে আটক করে ডিবির একটি দল। তাকে আনার হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছিল। পরে তদন্তে এমপি হত্যায় জড়িতদের সঙ্গে মিন্টুর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।

গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র বলছে, কিলার শাহীন এমপি আনারকে হত্যার পর সেই ছবি মিন্টুকে দিয়েছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/১৩জুন/ইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মোহাম্মদপুরে ৩৮০০ পিস ইয়াবাসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার
সাংবাদিক সাইদুরের প্রাণনাশের হুমকির প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ 
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যার তদন্ত রিপোর্ট দাখিল সোমবার
এবার বাংলাদেশের চার টিভি চ্যানেল ইউটিউবে বন্ধ করল ভারত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা