দেশের বাজারের ৪০ শতাংশই অবৈধ মোবাইল ফোন, এক আইএমইআইয়ে চলছে দেড় লাখ
দেশে ১৬ হাজার কোটি টাকার হ্যান্ডসেটের বাজারের প্রায় ৪০ শতাংশই অবৈধ মোবাইল ফোনের দখলে। এতে বছরে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। প্রতিটি মোবাইল ফোনের জন্য ১৫ সংখ্যার একটি স্বতন্ত্র আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নম্বর থাকে। কিন্তু দেশে শুধু একটি আইএমইআই নম্বরেই দেড় লাখেরও বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহৃত হচ্ছে।
দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনে ‘চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে বৃহস্পতিবার এসব তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরে এই সেমিনারের আয়োজন করে টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টারস নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ। সেমিনারের শুরুতে দেশের মোবাইল ফোনের উৎপাদন, বাজার পরিস্থিতি, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমআইওবি) সভাপতি জাকারিয়া শহিদ।
সেমিনারে মোবাইল অপারেটর রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, দেশে শুধু একটি আইএমইআই নম্বরেই দেড় লাখেরও বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহৃত হচ্ছে। ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্টার (এনইআইআর) কার্যকর না হওয়ায় দেশে অবৈধ ফোনের সংখ্যা বাড়ছে।
শাহেদ আলম বলেন, এনইআইআর বাস্তবায়ন করে উজবেকিস্তানে ৭০০ শতাংশ রাজস্ব বেড়েছে। আজারবাইজানের ৯৮ শতাংশ ফোনসেট এখন নিবন্ধিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, এনইআইআর সিস্টেম হালনাগাদ করা হবে। করবো। এনবিআর ডেটাবেজে ঢুকে অনিবন্ধিত ফোন ব্যবহারকারীদের ট্র্যাক করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে, সেই সুযোগ তৈরি করা হবে। পাশাপাশি হ্যান্ডসেট রপ্তানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হবে।
সেমিনারে জানানো হয়, দেশে হ্যান্ডসেট সংযোজনে বর্তমানে দুই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে ১৭টি প্রতিষ্ঠান। এরপরও ১৬ হাজার কোটি টাকার হ্যান্ডসেটের বাজারের প্রায় ৪০ শতাংশ লাগেজ-ব্যাগেজে আনা অবৈধ মোবাইল ফোনের দখলে। এতে বছরে ১ হাজার কোটি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। টিকতে না পেরে উদ্যোক্তারা স্মার্ট ও ফিচার ফোন মিলিয়ে উৎপাদন ৩০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটতে হবে হ্যান্ডসেট উৎপাদকদের।
অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগ গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, অভিযানে দেখা যায়, চীনসহ বিভিন্ন স্থান থেকে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ এনে অবৈধভাবে মোবাইল বানানো হচ্ছে। দুই-তিন মাস চালানোর পর এগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
হারুন বলেন, বিমানবন্দরে লাগেজ পার্টির মাধ্যমে লাখ লাখ মোবাইল ফোন দেশে ঢুকে পড়ে। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কম দামে সেগুলো ভিন্নপথে দেশে আনা হচ্ছে। রাজধানীর মোতালেব প্লাজা, গুলিস্তান পাতাল মার্কেট, যমুনা ফিউচার পার্কসহ নামিদামি মার্কেটে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে কর ফাঁকির ফোন। মোতালেব প্লাজায় যাবেন, দেখবেন সেখানে একটা আইএমইআই দিয়ে ৫০টা মোবাইল ফোন তৈরি করছে। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। একই সঙ্গে দেশীয় মোবাইল ফোন উৎপাদনকারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
টিআরএনবির সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, বিটিআরসির মহাপরিচালক মনিরুজ্জামান জুয়েল, বাংলালিংক ডিজিটালের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান, এমটব মহাসচিব লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার, টিআরএনবি সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রবিন প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/১৩জুন/কেএম)