সাবেক এমপি এনামুল হকের বিরুদ্ধে আদালতের জব্দকৃত সম্পত্তি দখলের অভিযোগ

​​​​​​​নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১০ জুলাই ২০২৪, ২১:০৭| আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৪, ২০:৩৪
অ- অ+

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে আদালতের জব্দ করা সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের বিরুদ্ধে।

ভূমি মালিক ও মেট্রো হোমস লিমিটেডের মধ্যে মামলা জটিলতার কারণে মেট্রো হোমসের তত্ত্বাবধানে নির্মাণাধীন একটি বাণিজ্যিক ভবন ও জায়গা আদালত কর্তৃক জব্দ ও স্থিতাবস্থার আদেশ থাকা সত্ত্বেও ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের এনা গ্রুপ ওই জায়গায় সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দখল করেছেন বলে অভিযোগে উঠেছে।

গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) এনা গ্রুপের লোকজন সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ওই সম্পত্তি দখল করেছে এবং মেট্রো হোমসের চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তাদের প্রান নাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মেট্রো হোমস এর পক্ষ থেকে মোহাম্মদ পুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর মোহম্মদপুর থানার ২২/৩ বাবর রোডে একটি প্লটে যৌথ মালিকানায় বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করার জন্য ২০১০ সালে ভূমি মালিকগণ মেট্রো হোমস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। প্লটটির বাস্তব দখল গ্রহণ করার পর ২০১৩ সালে মেট্রো হোমস রাজউক থেকে নির্মাণ অনুমোদন গ্রহণ করে পাইলিং কাজ সম্পন্ন করে।

এরই মধ্যে অজ্ঞাত কারণে ভূমি মালিকগণ চুক্তি ও পাওয়ার বাতিল ও অন্যান্য প্রতিকার চেয়ে ২০১৯ সালে ঢাকায় আরবিট্রাল ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় মেট্রো হোমস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড রেসপনডেন্ট হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০২০ সালের ৩১ অক্টোবর আদালত আদেশ প্রদান করেন। ওই আদেশে মেট্রো হোমস লিমিটেডকে প্লটটির দখল হস্তান্তর করাসহ ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য ভূমি মালিকগণকে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ভূমি মালিকগণ ওই আদেশ পালন না করায় মেট্রো হোমস লিমিটেড ঢাকা জেলা জজ আদালতে মানী ডিক্রি জারি মামলা করেন যা বর্তমানে চলমান আছে। ইতোমধ্যে ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর আদালতের এক আদেশে ওই সম্পত্তিটি ক্রোকাবদ্ধ রয়েছে।

এ আদেশও অমান্য করে ভূমি মালিকগণ ওই সম্পত্তিতে কাজ করতে গেলে মেট্রো হোমস লিমিটেড আদালতে স্থিতাবস্থার আবেদন করে। আদালত ২০২৪ সালের ১৭ জানুয়ারি সম্পত্তিতে স্থিতাবস্থার আদেশ প্রদান করেন। কিন্তু সেই আদেশ অমান্য করে পেশি শক্তি ব্যবহার করে ভূমি মালিকদের সঙ্গে জোট বেঁধে ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের মালিকানাধীন এনা প্রোপার্টিজ ওই সম্পত্তিতে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দখল করে নেন এবং সম্পত্তিতে গেলে মেট্রো হোমস লিমিটেডের চেয়ারম্যানসহ অন্য কর্মকর্তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেন।

এ বিষয়ে গত সোমবার (৮ জুলাই) মোহাম্মদপুর থানায় মেট্রো হোমসের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম ও তার কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা চেয়ে কোম্পানির ডেপুটি ম্যানেজার আজগর আলী একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

এ বিষয়ে মেট্রো হোমসের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, জমিটির ওপর একটি ১৩ তলা বাণিজ্যিক ভবন করার জন্য ২০১০ সালে সাড়ে ৪ বছরের জন্য চুক্তি করা হয়। জমির মালিক ১৩ জন হলেও এদের মধ্যে চারজন ২০১০-১১ সালের মধ্যে কয়েক দফায় তাদের অংশের জমির মালিকানা ও ফ্ল্যাটের শেয়ার ২ কোটি টাকায় বিক্রি করেন আমাদের কাছেই। তাদের সব টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এরপর ২০১৩ সালে রাজউক থেকে নকশা অনুমোদন করিয়ে ১৮৯টি পাইলিংয়ের কাজ শুরু করা হয়। এর মধ্যেই মুহিত বিভিন্নভাবে আমাদের হয়রানি করা শুরু করেন। এ নিয়ে মামলা করলে আদালত কোম্পানির পক্ষে রায় দেন। আদালত মালিক পক্ষকে এক কোটি টাকা জরিমানা করেন এবং আমাদের কাজ করার জন্য জমি বুঝিয়ে দিতে ৬০ দিন সময় দেন। আর নির্ধারিত সময় শেষ হলে প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা করে জরিমানারও আদেশ দেওয়া হয়।

ফখরুল ইসলাম বলেন, জমিটি আদালতের আদেশে ক্রোকাবদ্ধ রয়েছে। এর মধ্যেই মুহিত জমির মালিক না হয়েও তিনি পেশিশক্তি খাটিয়ে ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের সঙ্গে জোট বেঁধে এনার সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন। সাইনবোর্ড কেন লাগানো হয়েছে জানতে চাইলে তারা আমার কোম্পানি উড়িয়ে দেওয়ার ও আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন।

জানতে চাইলে ভূমির সহ মালিক (যিনি পরবর্তীতে তার মালিকানা অংশ বিক্রি করেছেন) মুহিত বলেন, ‘২০১০ সালে ফখরুল সাহেব (মেট্রো চেয়ারম্যান) জমিটি নিয়েছেন। ১৪ বছরে সেখানে একটি ইটও গাঁথেননি। ১৪ বছর অপেক্ষার পর এনাকে জমিটি দেওয়া হয়েছে। এনা চেয়ারম্যান আমাকে বলেছেন, ‘আপনি জমিটি আমাকে দেন। আমি ফখরুল সাহেবের দেনা-পাওনা মিটিয়ে দেব।’

আপনি কি জমির শেয়ার মেট্রোর কাছে বিক্রি করেছেন প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। এটি সরকারি জমি লিজ নেওয়া। এখানে চাইলেও কেউ জমি বিক্রি করতে পারবে না।’

মেট্রোর চেয়ারম্যানকে প্রাণনাশের হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি হুমকি দিইনি। তিনিই পুলিশ ও লোকজন নিয়ে এসে সাইনবোর্ড নামানোর জন্য হুমকি দিয়েছেন।’

এ বিষয়ে এনা প্রোপার্টিজের কর্ণধার এনামুল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমি দখল করিনি। আমি ভূমি মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করেছি। এ সম্পত্তি আদালতের কাছে জব্দ করা আছে এবং আদালত কর্তৃক স্থিতাবস্থার আদেশ আছে, এটি জানেন কিনা। এমন প্রশ্নের জবাবে এনামুল হক প্রথমে বলেন, এসব কিছু নেই। ঢাকা টাইমসের কাছে আদালতের আদেশের সকল কপি সংরক্ষিত আছে বলার পর তিনি বলে, আমার জানা নেই। থাকলেও সেটি ভূমি মালিক এবং মেট্রো হোমসের বিষয়। আমিতো ভূমি মালিকদের সঙ্গে শুধু চুক্তি করেছি অন্য কিছু না।

সাধারণ ডায়েরির বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘জিডির বিষয় আমরা অবগত রয়েছি। মেট্রো হোমসের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে।’ হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মেট্রোর চেয়ারম্যানসহ অন্য কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে। কেউ অপরাধ করলে ছাড় পাবে না।

(ঢাকাটাইমস/১০জুলাই/পিএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ঈদুল ফিতরে ৯ দিন বন্ধ থাকবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সোনামসজিদ স্থলবন্দর
জ্বর হলে যে পাঁচ খাবার খেলেই বিপদ! জানুন, সাবধান হোন
এশিয়ার দেশগুলোকে সমৃদ্ধির জন্য স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান ড. ইউনূসের
স্বাধীনতা দিবসে ড. ইউনূসকে মোদির বার্তা, যা বললেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা