কুমিল্লায় আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, আহত অর্ধশতাধিক

কোটা সংস্কারের দাবিতে 'বাংলা ব্লকেড' কর্মসূচির অংশ হিসেবে পঞ্চম দিনের মত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করতে গেলে পুলিশের বাধার মুখোমুখি হন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় মহাসড়ক থেকে শিক্ষার্থীদের সরাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন তারা। আহতরা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে পুলিশের লাঠিচার্জ করার পরও রাস্তা ছাড়েনি শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যার পর মোমবাতি জ্বালিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করছে তারা।
বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আনসার ক্যাম্প এলাকায় পুলিশের লাঠিচার্জের শিকার হন তারা। তবে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বিকাল ৫টার দিকে শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অবরোধ করেন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবরোধ চলমান রয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক অতিক্রম করে আনসার ক্যাম্প আসলে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার জন্য বলে। শিক্ষার্থীরা কথা না মেনে মহাসড়কের দিকে এগোতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পরবর্তীতে ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে।
এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্বাস উদ্দীন, আইন বিভাগের শিক্ষার্থী বায়েজিদ হোসেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ফরহাদ মিয়া কাওছার, তৌহিদুল ইসলাম জিসান, আল শাহরিয়ার অন্তু, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের মো. ইমরান হোসেনসহ আর অনেকে আহত হন। এছাড়া সাংবাদিকদের মধ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্তা টুয়েন্টি ফোরের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি অনন মজুমদার এবং চ্যানেল আইয়ের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি সৌরভ সিদ্দিকী, ক্যাম্পাস টাইমসের আল শাহরিয়ার অন্তু আহত হয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ক্যাম্পাস থেকে অবরোধ চলাকালে শিক্ষার্থীরা 'লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’, আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই, লেগেছেরে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে, একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার, সারা বাংলা খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে। এরপর মহাসড়কে এসে টায়ার জ্বালিয়ে স্লোগান চালিয়ে যান।
শিক্ষার্থীদের উপরে হামলার বিষয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তাওহীদ সানি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের জন্য কোটবাড়ি বিশ্বরোড যাচ্ছিলাম। রাস্তায় পুলিশ আমাদের বাধা দেয় এবং আমাদের উপর হামলা চালায়। এতে আমাদের অনেক শিক্ষার্থী আহত হন। আমরা পুলিশের এই ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ কেন আমাদের বাধা দিবে? কেনই বা আমাদের উপর হামলা চালাবে? আমরা তো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি না। আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলনে যাচ্ছি। তাহলে কেন পুলিশ উগ্র আচরণ করবে?
লোকপ্রশাসন বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী রবিউল হোসেন বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশের অতর্কিত হামলার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। তাদের হামলায় আমার অসংখ্য ভাই আহত হয়ে মেডিকেলে আছেন। এর সুষ্ঠু বিহিত ও আমাদের অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ছি না। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ভূমিকারও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। কারণ পুলিশ তাদের সামনেই আমাদের উপর আক্রমণ চালিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী রানা বলেন, 'আমি নিশ্চিত নই কত জন আহত হয়েছে। আমিও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আছি। তবে তিনজনকে হাসপাতালে নিতে দেখেছি।'
এই বিষয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান রাফি বলেন, 'আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম। আমরা তাদের প্রতিপক্ষ না। বিষয় হচ্ছে তারা যদি দেশের কোনো ব্যস্ততম রাস্তা বেআইনিভাবে আটকে রাখে সেক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব সেটিকে ক্লিন রাখা। আমরা শুধু আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি।'
উল্লেখ্য, এর আগে একই দাবিতে গত ৪, ৭, ৮ এবং ১০ জুলাই ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক প্রায় চার ঘণ্টা করে অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা।
(ঢাকাটাইমস/১১জুলাই/পিএস)

মন্তব্য করুন