সাবেক নেতাদের ক্ষোভ

ছাত্রলীগ নেতারা মাঠে ঝুঁকি নেয়, আর আ.লীগ নেতাদের সন্তানরা বিদেশে পড়াশোনা করে

​​​​​​​নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ৩১ জুলাই ২০২৪, ১৭:০০| আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৪, ১৭:৩৯
অ- অ+

সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের তোপের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সাবেক ছাত্রনেতাদের মতবিনিময়ের জন্য ডেকে কথা বলতে না দেওয়ায় তাকে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। সাবেক নেতারা বলেন, মাঠে ছাত্রলীগ নেতাদেরকে সব সময় খাটানো হয়। সব ধরনের ঝুঁকি নেয় ছাত্রনেতারা। আর আওয়ামী লীগ নেতাদের সন্তানরা বিদেশে পড়াশোনা করে, একজন আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে-মেয়ে ছাত্রলীগ করে না।

বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঘটনা ঘটে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা সাংবাদিকদের ওপরও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সাংবাদিকরা কেন এখানেএমন প্রশ্নের মুখে অনুষ্ঠান বয়কট করে চলে যান সাংবাদিকরা।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে মতবিনিময়ের উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ। বেলা ১১টায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাবেক ছাত্রনেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বলে দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকেও আগের দিন জানানো হয়। অন্যদিকে ছাত্রনেতারা জানান, তাদেরকেও মতবিনিময় সভার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।

নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষণ পর সভায় যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের সামনে কথা শুরু করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সভায় উপস্থিত একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ওবায়দুল কাদের যেটা করেছেন, সেটা নতুন কিছু নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠনকে নিয়ে ডাকা যৌথ সভাগুলোতে সাধারণত কাউকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয় না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একাই কথা বলেন।

কিন্তু বুধবার মতবিনিময়ের আমন্ত্রণ পেয়ে আসা ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা সামনে থেকে হট্টগোল শুরু করেন। একজন বলে ওঠেন, ‘ডেকে এনে আপনি একাই কথা বলা শুরু করলেন, আমাদেরওতো বহু কথা আছে।এ সময় অনেকে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে অনুষ্ঠান শেষ না করেই সভাস্থল ত্যাগ করেন ওবায়দুল কাদের।

অনেক সাবেক ছাত্রনেতা মত বিনিময় সভার মাঝেই বের হয়ে চলে যান, যাওয়ার সময় কেউ কেউ ক্ষোভও প্রকাশ করেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক এক সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা ডেকেছেন, আগে তো আমাদের কথা শুনবেন, আমাদের কথা বলার সুযোগ দেবেন। কিন্তু তা না করে মতবিনিময় সভার জন্য ডেকে মিডিয়ার সামনে কথা বলা শুরু করে দিয়েছেন। এটা ঠিক না, এটা স্বেচ্ছাচারিতা।

এর আগে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক মতবিনিময় সভায় এলে অনেকেই হইহুল্লোড় করে ওঠেন। সাবেক ছাত্রনেতাদের একজন চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘উনি এখানে কেন? উনার ছেলে তো সরকারের বিরুদ্ধে পোস্ট (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম) দেয়।

সাবেক নেতাদের হট্টগোলের মধ্যে মতবিনিময় শেষ না করে ওবায়দুল কাদের দলীয় কার্যালয়ে তার অফিসে চলে যান। কিছুক্ষণ পর তিনি কেন্দ্রীয় কার্যালয় ত্যাগ করেন।

বৈঠকে উপস্থিত ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল সাংবাদিকদের বলেন, এটা কেমন কথা ভাই! আমাদের ডেকে আনা হয়েছে মতবিনিময় করবেন, কিন্তু আমাদের সঙ্গে কথা না বলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছেন। আমাদেরও তো কথা আছে। আমরা তো উনার সংবাদ সম্মেলন দেখতে আসি নাই, আমাদের ডাকা হয়েছে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলবেন এই জন্য।

আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ছাত্রলীগ নেতাদেরকে সব সময় মাঠে খাটানো হয়, সব ধরনের রিস্ক নেয় ছাত্রনেতারা, আর তাদের (আওয়ামী লীগ নেতাদের) সন্তানরা বিদেশে পড়াশোনা করে, একজন আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে মেয়ে ছাত্রলীগ করে না।

ছাত্রলীগের সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, তাদের (আ.লীগের) সন্তানদেরও দেশে থেকে ছাত্রলীগ করতে হবে। আমরা খেটে যাব আর তারা গাড়ি বাড়ি করে সন্তানদের বিদেশে পড়াশোনা করাবে, এটা কেমন কথা? এসব কারণে আমাদের দলের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে।

এর আগে একাধিকবার ঢাকা মহানগর উত্তর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে যৌথসভা ডেকে ওবায়দুল কাদের বক্তৃতা করে সভা শেষ করে দিয়েছেন। অন্যরা কোনো বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাননি। এমনকি দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক ডেকেও একাই বক্তৃতা করে বৈঠক শেষ করার নজির আছে ওবায়দুল কাদেরের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে তারা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন যে ওবায়দুল কাদের নিজে বক্তৃতা করে চলে যাবেন। বৈঠকে এসে তা দেখতে পান। এতে নেতারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন।

সাবেক ছাত্রনেতারা বলেন, হট্টগোল শুরু হলে প্রথমে ওবায়দুল কাদেরকে বলতে শোনা যায়, ‘কে, কে, থামো।কিন্তু এরপরও হট্টগোল চলতে থাকে। এরপর সংবাদ সম্মেলন অন্যান্য দিনের মতো দীর্ঘ না করে সভাস্থল ত্যাগ করেন ওবায়দুল কাদের। সময় পেছনে বসা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতাভুয়া, ভুয়াবলে আওয়াজ করেন। তারপর অনেকেইভুয়া, ভুয়াবলে ওঠেন।

পরে সাবেক ছাত্রনেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় না করেই আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নিজের কক্ষে চলে যান ওবায়দুল কাদের। অন্য কেন্দ্রীয় নেতারাও যার যার মতো করে চলে যান।

(ঢাকাটাইমস/৩১জুলাই/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এক দফা দাবিতে নার্সিং কলেজ শিক্ষার্থীদের শাহবাগ অবরোধ
আইএমএফের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১.৩ বিলিয়ন ডলার মিলবে জুনে 
আইপিএলে ডাক পেলেন মুস্তাফিজ, খেলবেন দিল্লির হয়ে 
আইজিপির সঙ্গে রবার্ট এফ কেনেডি মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা