‘দাবি আদায়ের পর রাজপথ থেকে আমার লাশ দাফন করো’

মো. রাজীব হোসেন, টঙ্গী-পূবাইল (গাজীপুর)
  প্রকাশিত : ০২ আগস্ট ২০২৪, ১৪:৪১| আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২৪, ১৪:৪৬
অ- অ+

‘মা, আমার জন্য দোয়া করো। আমি মারা গেলে আমার লাশ রাজপথে রেখে দিও। দাবি আদায়ের পর দেশ শান্ত হলে আমার লাশ রাজপথ থেকে এনে দাফন করো।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনে যাওয়ার আগে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মাকে নিজের এই অভিপ্রায় বলে যান ঢাকার উত্তরায় নিহত টঙ্গী সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র শেখ ফাহমিন জাফর।

বৃহস্পতিবার ( আগস্ট) ফাহমিনের মা প্রায় বাকরুদ্ধ কাজী লুলুল মাখমিন এসব কথা বলেন। ১৮ জুলাই সকাল ১০টার দিকে আন্দোলনে যোগ দিতে বাসা থেকে বের হন ফাহমিন।

ঘটনার দিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে ফাহমিনের মা বলেন, ‘আমার ছেলে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বলে যায়, আমি মারা গেলে আমার লাশ রাজপথে রেখে দিও। দাবি আদায় হওয়ার পর দেশ শান্ত হলে আমার লাশ রাজপথ থেকে এনে দাফন করো। আমার মতো অনেকের মৃত্যু হলে সবার লাশ রাজপথে থাকবে। অনেক মা- তোমাকে সহযোগিতা করবে, চিন্তা করো না।’

‘এটাই ছিল আমার সঙ্গে ফাহমিনের শেষ কথা। তারপর বেলা পৌনে তিনটার সময় খবর পাই আমার ছেলে হাসপাতালে ভর্তি। আমি উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার ছেলের লাশ। ছেলের সারা শরীরে অসংখ্য গুলির চিহ্ন দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি আমি।’ বলছিলেন ফাহমিনের মা।

ছেলের লাশ নিয়ে মা গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলার আত্রাইয়ে যান। সেখানে তারটিয়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয় ফাহমিনের।

কাজী লুলুল মাখমিন জানান, ফাহমিনের লাশের কোনো ময়না তদন্ত হয়নি। কেউ কোনো খবরও নেয়নি। ছেলে হত্যার বিচারের জন্য কোনো মামলাও করেননি। কারণ হিসেবে বলেন, এখন পুলিশ মামলা নেবে না। সময় হলে ছেলে হত্যার বিচার চাইব।’

প্রশাসনের কেউ তার মঙ্গে এখনো যোগাযোগ করেননি জানিয়ে ফাহমিনের মা বলেন, ‘আমি এখন ছেলের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছি। আমার কখন দিন যায়, রাত হয়, জানি না।’

তিন ভাইয়ের মধ্যে ফাহমিন ছিলেন সবার ছোট। খুব মেধাবী ছিলেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি কবিতাও লিখতেন। আজ সবই স্মৃতি হয়ে অবিরাম চোখে ভাসে মা কাজী লুলুল মাখমিনের।

টঙ্গী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. রফিকুল ইসলাম শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ফাহমিন জাফরের আইডি নম্বর ২৩০১০৫১৬৪। তার বাবার নাম শেখ আবু জাফর। ফাহমিন তার মায়ের সঙ্গে ঢাকার দক্ষিণখান থানার গাওয়াইর মাদরাসা রোডে বসবাস করতেন। সেখান থেকে টঙ্গী সরকারি কলেজে পড়াশোনা করত।’

ফাহমিনের বাবা রাজশাহীতে একটি ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করেন। ফাহমিন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে জিপিএ- পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

১৮ জুলাই ঢাকার উত্তরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমপ্লিট শাটডাউন চলাকালে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশের গুলিতে ফাহমিনসহ বেশ কয়েকজন হতাহত হন।

(ঢাকাটাইমস/২আগস্ট/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ট্রেনে কাটা পড়ে দক্ষিণখান থানার এসআইয়ের মৃত্যু
গরমে আমের সঙ্গে যেসব খাবার খেলে হতে পারে বিষক্রিয়া
নোয়াখালীর চাটখিলে ইয়াবাসহ হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার
ভারতের নতুন মহাকাশ অভিযান ব্যর্থ, মাঝপথেই ধ্বংস
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা