আদানিকে নিয়ে ফের বিস্ফোরক প্রতিবেদন হিন্ডেনবার্গের!
ভারতের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী আদানি গ্রুপকে নিয়ে দেড় বছর ফের বিস্ফোরক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন শর্ট সেলার ফার্ম হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। এবারের অভিযোগ, আদানি শিল্পগোষ্ঠীর বিদেশে পাচার করা অর্থে অংশীদারিত্ব রয়েছে ভারতের শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়ার (সেবি) প্রধান মাধবী বুচ এবং তার স্বামীর।
শনিবার এক্স পোস্টে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ বলেছে, ‘শীঘ্রই ভারতে বড় কিছু হতে চলেছে।’ যদিও কী ঘটনা ঘটতে চলেছে, তার কোনো পরিষ্কার ইঙ্গিত দেয়নি হিন্ডেনবার্গ। একদিন পার হতেই রবিবার আদানিগোষ্ঠীকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে মার্কিন সংস্থাটি।
ঠিক কী বলেছে হিন্ডেনবার্গ?
হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ জানিয়েছে, সেবির বর্তমান চেয়ারপার্সন মাধবী বুচ এবং তার স্বামীধবল বুচ আদানির অফশোর কোম্পানিতে অংশীদারিত্ব রয়েছে।
হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বুচ দম্পতি মরিশাস ও বারমুডার এমন সব ভুয়া বিদেশি সংস্থায় বিনিয়োগ করে রেখেছেন যাদের সঙ্গে গৌতম আদানির ভাই বিনোদ আদানি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এই সব বিনিয়োগ করা হয়েছে ২০১৫ সালে। তার পর ২০১৭ সালে সেবির পূর্ণ সময়ের সদস্য হিসেবে নিয়োগ করা হয় মাধবী বুচকে। সেই সময়েই নজরদারি এড়াতে মাধবীর নামে থাকা সমস্ত বিদেশি বিনিয়োগ নিজের নামে করে নিয়েছিলেন ধবল। পরে ২০২২ সালে সেবির চেয়ারপার্সন হন মাধবী।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ ভারতের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী আদানি এন্টারপ্রাইজের পরিকল্পিত শেয়ার বিক্রির আগে তাদেরকে নিয়ে তীব্র সমালোচনামূলক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যার জেরে গ্রুপের শেয়ারের মূল্য ৮৬ বিলিয়ন ডলার কমে যায়। যার প্রভাব পড়ে শেয়ার বাজারে। একই সঙ্গে বিশ্বের শীর্ষধনীদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থান থেকে ৩৬ নম্বরে নেমে আসেন গৌতম আদানি।
আদানী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হিন্ডেনবার্গের অভিযোগের তদন্তভার সেবির ওপরেই দিয়েছিল দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। তবে হিন্ডেনবার্গ এই প্রতিবেদনে আসলে বোঝাতে চেয়েছে, যাদের ওপর তদন্তভার দেওয়া হয়েছে আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে তলে তলে তাদের আঁতাত রয়েছে।
হিন্ডেনবার্গ আরও বলেছে, তাদের রিপোর্ট প্রকাশের পর ১৮ মাস কেটে গেছে অথচ আদানির ব্যাপারে সেবি বিস্ময়কর ভাবে নিশ্চুপ!
এদিকে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বুচ দম্পতি। তাদের দাবি যাবতীয় আর্থিক তথ্য তারা প্রকাশ্যে আনতে পারেন। এ বিষয়ে তাদের কোনও রাখঢাক নেই। এমনকি তারা যখন কোনও সরকারি পদে ছিলেন না, চাইলে তখনকার তথ্যও কেউ খতিয়ে দেখতে পারে! শুধু তাই নয়, পূর্ণাঙ্গ স্বচ্ছতার স্বার্থে খুব শিগগিরই তারা একটি বিস্তারিত বিবৃতি প্রকাশ করবেন।
অন্যদিকে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের সর্বশেষ প্রতিবেদনটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে আদানি গ্রুপ। তাদের দাবি মার্কিন সংস্থাটির আগের প্রতিবেদনটি ‘ভিত্তিহীন’ প্রমাণিত হয়েছে, যা সুপ্রিম কোর্টেও খারিজ হয়েছিল। সংস্থাটি আরও বলেছে, হিন্ডেনবার্গের অভিযোগগুলো আইনকে উপেক্ষা করে ব্যক্তিগত স্বার্থ অর্জনের লক্ষ্যেই করা হয়েছে।
গত বছর হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদন প্রকাশের পর ভারতের প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসসহ সব বিরোধী দল লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিজেপি সরকারকে চেপে ধরে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আদানি গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীসহ কংগ্রেস ও বিরোধী দলগুলের নেতাকে নজিরবিহীনভাবে সংসদ থেকে বরখাস্তও করা হয়।
খুব স্বাভাবিক ভাবেই হিন্ডেনবার্গের এবার প্রতিবেদন হাতিয়ার করে রবিবার থেকেই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে নেমে পড়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে বিরোধী গোষ্ঠী।
(ঢাকাটাইমস/১১আগস্ট/এমআর)