কারা সাক্ষাৎ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেওয়া কারাবন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাতের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করা হয়েছে। জেল কোড অনুযায়ী এখন থেকে কারাবন্দিদের সঙ্গে দেখা করা যাবে। গেল মাস থেকে প্রায় দুই সপ্তাহ কারাবন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি স্বজনরা। বিষয়টি নজরে এলে গত মাসে রিট করা হয়।
বুধবার এ রিটের শুনানি করে নির্দেশ দেন আদালত। এখন থেকে কারাবন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাতে আর কোনো বাধা রইল না। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রিট পিটিশনকারী আইনজীবী শাহ মো. বাবর।
আইনজীবী জানান, ২১ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি হয়, যাতে কারাবন্দিদের (কয়েদি বা বিচারাধীন) সঙ্গে সাক্ষাৎ করা নিষেধ করা হয়। এই প্রজ্ঞাপনকে জেল কোড, কারা আইন ১৮৯৪, এবং সংবিধান পরিপন্থী মনে করে সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী রিট দাখিল করেন। হাইকোর্ট বুধবার এই রিট আবেদন শুনানি করে একটি রুল নিশি জারি করেন এবং এই আদেশ স্থগিত করে দেন।
শুনানিকালে রিট আবেদনকারীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তবারক হোসেইন বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের সংবিধান এবং জেল কোডের পরিপন্থী। কারাবন্দি সবার অধিকার তাদের স্বজন এবং আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করার অধিকার একটি অলঙ্ঘনীয় অধিকার। আগের সরকার চলে যাওয়ার পরেও এখন পর্যন্ত এই পরিপত্র কারা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট এ আছে। এইটি অবিলম্বে বাতিল করা প্রয়োজন।
এই রিটের পক্ষের সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা এমন সময় জারি হলো যখন ইন্টারনেট শাটডাউন চলছিল। জেলখানায় সাক্ষাৎ যে বন্ধ, এই তথ্য দেশের ভেতরে কেউ বুঝতে পারে নাই। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে কোনো কারাবন্দি এমনকি যারা বিনা বিচারে আটক, শিক্ষার্থীসহ, কেউ তাদের আইনজীবী বা স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে পারেনি। এটা আমাদের সংবিধান মতে আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সনদের পরিপন্থী।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তবারক হোসেইন এবং সারা হোসেন আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার প্রিয়া আহসান চৌধুরী এবং অ্যাডভোকেট জামিউল ফয়সাল। রিট আবেদনকারী অ্যাডভোকেট শাহ মোহাম্মাদ বাবার হাইকোর্টের এই আদেশ দেয়ার পক্ষে বলেন, ‘এটা গভীরভাবে উদ্বেগজনক যে আমার ক্লায়েন্টরা আমার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে পারছে না। এই অ্যাক্সেসের অভাব ন্যায়বিচারের মৌলিক নীতিকে দুর্বল করে এবং তাদের স্বার্থকে কার্যকরভাবে উপস্থাপন করার আমার ক্ষমতাকে বাধা দেয়। বর্তমান পরিস্থিতি শুধু তাদের অধিকারই লঙ্ঘন করে না বরং আইনি প্রক্রিয়ার অখণ্ডতাকেও আপস করে।
কোটা আন্দোলনের সময় বিভিন্ন ছাত্র এবং সাধারণ জনগণকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিনা দোষে গণহারে গ্রেপ্তার করছিল। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হলে স্বজনরা সাক্ষাৎ করতে পারতো না। গেল মাসে কয়েকজন আইনজীবী কারাগারে গেলে তারা কারাবন্দি কয়েকজন আন্দোলনকারী ছাত্রের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে চান। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে দাবি করে তাদের কাগজ দেখান। এরপর সেই আইনজীবীরা ফেরত আসেন। এরপর এই নিষেধাজ্ঞা অবৈধ এবং নাগরিক আইন লঙ্ঘন করে সংবিধান পরিপন্থী উল্লেখ করে রিট করেন। সেই রিটের শুনানি হলো বুধবার।
(ঢাকাটাইমস/১৪আগস্ট/এলএম/কেএম)

মন্তব্য করুন