কীভাবে সুন্দর হবে দাম্পত্য সম্পর্ক
সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে অনেক নতুন ধরনের নাম যোগ হচ্ছে ‘সম্পর্কের’ তালিকায়। ‘সিচুয়েশনশিপ’, ‘বেঞ্চিং’, ‘জাস্ট ফ্রেন্ড’সহ এমন অসংখ্য সম্পর্কের মাঝেও এখনো টিকে আছে বৈবাহিক সম্পর্ক বা দাম্পত্য সম্পর্কের ভিত।
বলা যায়, সবকিছুকে ছাপিয়ে যুগ যুগ ধরে দাম্পত্য সম্পর্কের ওপর মানুষের প্রবল আস্থা ছিল, ছিল বিশ্বাস আর শ্রদ্ধাবোধ।
সম্পর্কের রকমফের যা-ই হোক না কেন, প্রতিটি সম্পর্কই নিজ নিজ ক্ষেত্রে যত্নের দাবিদার। দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি যেন আরও বেশি প্রয়োজনীয়। কারণ বৈবাহিক সম্পর্ক যেমন এই সমাজে প্রচুর আছে, তেমনি আছে বিচ্ছেদের ঘটনাও। পর্যাপ্ত যত্ন ও পরিচর্যার অভাবে আপনার ভালোবাসার দাম্পত্যজীবন যাতে সব রঙ হারিয়ে বিবর্ণ না হয়ে যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখার দায়িত্ব ‘সম্পর্কে’ থাকা দুজন ব্যক্তিরই। চলুন জেনে আসি কীভাবে দাম্পত্যজীবনকে আরও সুন্দর করে তোলা যায়—
বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ:
আপনি যদি জীবনসঙ্গীর বন্ধু হয়ে উঠতে না পারেন, সেক্ষেত্রে আপনার দাম্পত্যজীবন হয়ে উঠতে পারে গৎবাঁধা, বিরক্তিকর। কারণ একমাত্র বন্ধুর সঙ্গেই আমরা আমাদের সুখ-দুঃখ ভাগ করে জীবনকে সহজ করে তুলতে চাই। প্রিয়জনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বজায় রেখে তার ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে উঠুন, সতেজ থাকবে দাম্পত্য সম্পর্ক।
প্রশংসা করা:
আমরা অনেক সময়ই সঙ্গীর কাজ কিংবা তার পাশে থাকাকে ‘টেকেন ফর গ্র্যান্টেড’ হিসেবে নিয়ে ফেলি। কিন্তু এমনটা করা উচিৎ নয়। সময়ের হিসাবে সম্পর্কের বয়স যত পুরনোই হোক, আপনাকে আপনার সঙ্গীর প্রতি স্নেহশীল হতে হবে। তার যেকোনো ভালো কাজের প্রশংসা করতে হবে এবং তা আপনার জীবনসঙ্গীর আড়ালে নয়, সামনাসামনি।
মনোযোগী হওয়া:
সব সময় একে অপরের প্রতি অখণ্ড মনোযোগ দিলে আপনার সম্পর্কে কখনো চিড় ধরবে না। আপনাকে সবসময় বোঝাতে হবে, আপনি আপনার সঙ্গীকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন। আপনি আপনমনে কাগজ পড়ছেন আর সঙ্গী কথা বলে চলেছে, আপনি শুধু হু হু করলেন, এতে সম্পর্কে অভিমান বাসা বাধতে পারে। আর অভিমান জমে পাহাড় হয়ে গেলে তা পেরোনো মুশকিল।
সম্পর্ক ধরে রাখতে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করুন:
পরম আকাঙ্ক্ষিত বস্তু পেয়ে গেলে নাকি মানুষের আগ্রহ ফুরিয়ে যায়। বিয়ের পর যদি মনে করেন তাকে পেয়ে গেছি, এখন আর নতুন করে কিছুই দেওয়ার নেই বা প্রমাণ করার নেই, তাহলে ভুল ভাবছেন। মনে রাখবেন, সম্পর্ক গড়ে তোলার চাইতে টিকিয়ে রাখা কঠিন। আপনি যদি দায়সারাভাবে সম্পর্কে নিজের দায়িত্বটুকু পালন করেন তাহলে নিজেও যেমন সুখ পাবেন না, তেমনি সঙ্গীকেও সুখে রাখতে পারবেন না। সম্পর্ককে ধরে রাখতে অবশ্যই আপনাকে কাজ করতে হবে। নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে হবে।
একসঙ্গে সময় কাটানো:
ভবিষ্যতের কথা ভেবে যে বর্তমানে নিজেকে কাজে ডুবিয়ে সঙ্গীর কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছেন, তার ভবিষ্যৎ কী- তা কি একবার ভেবে দেখেছেন? বিয়ের পর সম্পর্কের বয়স যত বেশিই হোক না কেন, সময় দেওয়ার বেলায় কারোই কার্পণ্য করা উচিৎ নয়।
আপনি মানুন বা না মানুন, প্রাপ্য সময়টুকু দুজন দুজনকে দেওয়ার মাধ্যমেই সম্পর্কে মধুরতা আসে, সম্পর্ক মজবুত হয়। এই সময়টুকু হেলায় পার করে দেওয়ার পর দাম্পত্য জীবনে সুখ খোঁজা খড়ের গাঁদায় সুচ খোঁজার মতো ব্যাপার।
ক্ষমা করা:
মানুষ মাত্রই ভুল হয়ে থাকে। সঙ্গীর কোনো ভুল যদি ক্ষমার অযোগ্য না হয়, তবে তা ধরে বসে না থাকাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। ঠাণ্ডা মাথায় স্বামী অথবা স্ত্রীকে ভুলটা ধরিয়ে দিন অথবা বুঝিয়ে বলুন। আপনি তার কোনো কাজে বা কথায় কষ্ট পেলে তা খুলে বলুন এবং তাকে ক্ষমা করে দিন। ক্ষমা করার পর এই ভুল নিয়ে আর কখনো কোনো কথা বলবেন না। ভুলের কথা সম্পূর্ণভাবে ভুলে যান। তবেই সম্পর্ক সুন্দর থাকবে।