পিলে চমকানো ‘দুর্নীতি’ তাদের, অনুসন্ধানে নামল দুদক

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব শাহ কামাল, বিএসএমএমইউয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ ও তার পিএস ডা. রাসেল এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দ্বিতীয় সচিব আরজিনা খাতুনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (১৯ আগস্ট) দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন ঢাকা টাইমসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এবং তার পিএস ডা. রাসেল ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যে ও প্রায় ১০০ কোটি টাকা ঘুষ আদায়ের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও যোগ্যতার ঘাটতি নিয়ে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি, উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণে অনিয়মের আশ্রয়, নিয়ম বহির্ভুতভাবে পরিবারের সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া, অনৈতিক অর্থ উত্তোলন, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত কমিশন সভায় গৃহীত হয়।
অন্যদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব শাহ কামালের বিরুদ্ধে চাকরি জীবনে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, অসদাচরণ, ঘুষ ও নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুদক।
দুদক সূত্রে জানা যায়, শাহ কামাল বিভিন্ন প্রকল্পের নামে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থেকে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্প (যা দেশব্যাপী ৪০ দিনের কর্মসূচি নামের প্রকল্প নামে পরিচিত), গ্রামীণ সড়কে ছোট-বড় সেতু কালভার্ট নির্মাণ, এইচবিবি, বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প থেকে এই অর্থ লোপাট করেছেন। কামালের নামে টঙ্গি মৌজায় পাঁচ কাঠার প্লট, উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরে ৩ কাঠার প্লট এবং মোহাম্মদপুরে স্ত্রীর নামে একটি ফ্ল্যাট থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।
এছাড়াও গত ১৬ আগস্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামালের রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাবর রোডের বাসা থেকে ৩ কোটি টাকার বেশি নগদ অর্থ এবং ১০ লাখ টাকা মূল্যের বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ দল।
উদ্ধার হওয়া অর্থের মধ্যে ছিল নগদ ৩ কোটি ১ লাখ ১০ হাজার ১৬৬ টাকা, ৭৪ হাজার ৪০০ টাকা দামের ১০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং ১০ লাখ ৩ হাজার ৩০৬ টাকা মূল্যমানের বিদেশি মুদ্রা। আর বিদেশি মুদ্রার মধ্যে ৩ হাজার মার্কিন ডলার, ১ হাজার ৩২০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, ২ হাজার ৯৬৯ সৌদি রিয়াল, ৪ হাজার ১২২ সিঙ্গাপুরিয়ান ডলার, ১ হাজার ৯১৫ অস্ট্রেলিয়ান ডলার, ৩৫ হাজার কোরিয়ান ইউয়ান ও ১৯৯ চীনা ইউয়ান মুদ্রা পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রামের মুসক মনিটরিং, পরিসংখ্যান ও সমন্বয়, কাস্টমস হাউজের দ্বিতীয় সচিব আরজিনা খাতুনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
দুদক সূত্র জানায়, ছাগলকাণ্ডে বহুল আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্য সাবেক সদস্য মতিউর রহমানের সঙ্গে সখ্য ছিল আরজিনা খাতুনের। এছাড়াও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে কর্মরত থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে আরজিনা খাতুন আমদানি পণ্য খালাসের নামে একশ্রেণির ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের থেকে হাতিয়ে নিতেন মোটা অংকের টাকা। এভাবে দুর্নীতির টাকায় তিনি গড়েছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ।
আরজিনা খাতুন অবৈধভাবে উপার্জন করা অর্থে ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৫০০ ভরি স্বর্ণ কিনেছেন। তার বার্ষিক আয়কর নথিতে উল্লেখ করেছেন, বিয়ের সময় ১০০ ভরি স্বর্ণ উপহার পেয়েছেন। কিন্তু তার বিয়ের কাবিননামায় এসব স্বর্ণের কথা উল্লেখ নেই।
অন্যদিকে ক্রয়মূল্য গোপন করে ঢাকার মিরপুরে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন আরজিনা খাতুন। ফ্ল্যাটটি কিনেছেন ২ কোটি টাকায়। কিন্তু কেনার চুক্তিনামায় উল্লেখ করেছেন ১ কোটি ২১ লাখ টাকা। এছাড়া ফ্ল্যাট কেনার পর সেখানে ইনটেরিয়র ডিজাইনের পেছনে খরচ করেছেন ২৭ লাখ টাকা। ফ্ল্যাটের ইলেক্ট্রনিক্স ও ফার্নিচারের পেছনে ব্যয় করেছেন ৩৫ লাখ টাকা।
(ঢাকাটাইমস/১৯আগস্ট/ডিএম

মন্তব্য করুন