গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের নাম প্রকাশ ও হত্যার বিচারসহ ৮ দাবি ইউপিডিএফের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৭ আগস্ট ২০২৪, ১৪:৪৪
অ- অ+

জুলাই- আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় নিহত সকল নিহতের নাম প্রকাশ ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করাসহ ৮ দফা দাবি জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিত্তিক একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।

এসময় দলের সংগঠক মাইকেল চাকমা গোপন বন্দীশালা ‘আয়না ঘর’ থেকে যাদের এখনো মুক্তি দেওয়া হয়নি, তাদের মুক্তির দাবিও তোলেন।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) আয়োজিত জামিনে মুক্তদের জেল গেইটে পুনঃগ্রেপ্তার বন্ধ, আনন্দ প্রকাশ চাকমাসহ ইউপিডিএফ ও দেশের রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতির ওপর অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাইকেল চাকমা বলেন, ‘অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে। দেশের মানুষ এখন মুক্ত হাওয়ায় প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ এখনো স্বাধীনতার সেই স্বাদ পায়নি। পাহাড়ে এখনো পরিবর্তনের হাওয়া পৌঁছেনি। সমতলে অন্যায়ভাবে আটক রাজবন্দিরা মুক্তি পেতে শুরু করলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে বন্দি ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের এখনো ছেড়ে দেওয়া হয়নি। এই বন্দিদের অনেকে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিনা বিচারে কারাগারে অন্তরীণ রয়েছেন। হাসিনার আমলে জামিন পাওয়ার পরও জেল গেট থেকে পুনরায় গ্রেপ্তার করার কারণে তারা এখন নতুন করে আদালতে জামিনের আবেদন করতে সাহস পাচ্ছেন না।’

পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন বা নিপীড়নমূলক অবস্থা জারি রেখে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে গণতন্ত্র কায়েম সম্ভব নয় বলে মনে করেন মাইকেল চাকমা। তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে দেশে প্রকৃত অর্থবহ সংস্কার সম্ভব না। পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুক্তি না দিয়ে সমতলের জনগণও প্রকৃত মুক্তি পেতে পারে না।’

এসময় পার্বত্য চট্টগ্রামের সংস্কারে ইউপিডিএফের ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন তিনি। সেগুলো হলো-

অবিলম্বে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের সময় নিহত সকল শহীদের নাম প্রকাশ ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ফ্যাসিস্টদের গ্রেপ্তারপূর্বক বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

অবিলম্বে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলে আটক ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মুক্তি দিতে হবে।

আদালত থেকে জামিন লাভের পর জেল গেট থেকে পুনরায় গ্রেপ্তার বন্ধ করতে হবে এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নামে দায়ের করা সকল মিথ্যা মামলা ও হুলিয়া প্রত্যাহার করতে হবে।

ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে নব্য মুখোশ বাহিনী ও মগ পার্টি ভেঙে দিতে হবে এবং তাদের মধ্যে যারা খুন, গুম, অপহরণ ও সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, তাদের গ্রেপ্তারপূর্বক শাস্তি দিতে হবে।

এছাড়া স্বনির্ভর গণহত্যা ও পানছড়িতে চার যুবনেতা হত্যাসহ ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করতে হবে এবং তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে যুক্ত করতে হবে।

অবিলম্বে নির্দলীয়, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠন করতে হবে। অবিলম্বে বান্দরবানে চলমান কেএনএফ-বিরোধী অভিযানের নামে বম জাতিগোষ্ঠীকে নিশানা করে জাতি-নিধন অভিযান বন্ধ করতে হবে এবং শিশু ও নারীসহ আটককৃত বমদের মুক্তি দিতে হবে।

খাগড়াছড়ির রামগড়ে গৃহবধূকে ধর্ষণকারীদের গ্রেপ্তার এবং রাঙামাটি ও বান্দরবানে ধর্ষণ প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দিতে হবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য অপারেশন উত্তরণ বাতিলপূর্বক সেনাশাসন প্রত্যাহার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১১ দফা নির্দেশনা বাতিল করতে হবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির সংস্কার চান কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মাইকেল চাকমা বলেন, ‘যে শান্তি চুক্তি আছে সেটি পরিপূর্ণ নয়। আমরা অবশ্যই এর পরিবর্তন চাই।’ ইউপিডিএফ এবং তাদের সমর্থকদের ২৯ জন সদস্য বর্তমানে কারাগারে রয়েছে বলে জানান মাইকেল চাকমা।

জামিনে মুক্তির পর জেলগেটে ইউপিডিএফের কতজন কর্মী ও সমর্থককে পুনঃগ্রেপ্তার করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের তিনজন সমর্থককে জামিনের পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনকে তিনবার, একজনকে দুইবার এবং একজনকে চারবার পুনঃগ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

দীর্ঘদিন আয়নাঘরে বন্দি ছিলেন মাইকেল চাকমা। আয়নাঘর সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আয়নাঘরে অমানবিকভাবে আটকে রাখা হতো। হিটলার যেভাবে তার কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে ধরে নিয়ে রাখতো, আয়নাঘর ধরে নিতে পারেন ঠিক তেমন একটি জায়গা। যেখানে মানুষকে তার সমস্ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করে রাখা হতো।’

২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক একটি রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফ-এর সংগঠক মাইকেল চাকমা। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাকে গোপন বন্দিশালায় আটকে রাখা হয়েছিল, যেটি ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত। পরে ছাত্র জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ৬ আগস্ট তাকে চট্টগ্রামের একটি সড়কের ধারে চোখ বেঁধে ছেড়ে দেওয়া হয়।

মুক্তি পাওয়ার প্রায় তিন সপ্তাহ পর ঢাকায় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এলেন মাইকেল চাকমা। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি সুনয়ন চাকমা, ইউপিডিএফ সদস্য থুইখোচিং মারমা।

(ঢাকাটাইমস/২৭আগস্ট/এমআই/এজে)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
দোহার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল হক গ্রেপ্তার
‘প্যালেস্টাইন-২’ হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালাল ইয়েমেন
সুবর্ণচর এক্সপ্রেস দ্রুত চালুর দাবিতে নোয়াখালীতে দেড়ঘণ্টা রেলপথ অবরোধ 
জেফারের তীরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দর্শক-শ্রোতার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা