শাহবাগে প্রাথমিকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রতিবন্ধী চাকরি প্রত্যাশীদের মানববন্ধন

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ২০২০ এর ভাইভা থেকে বাদ পড়া প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রার্থীরা রাজধানীতে মানববন্ধন ও পদযাত্রা করেছেন।
রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত পদযাত্রা করেন নিয়োগ প্রত্যাশীরা।
সেখানে বক্তারা অবিলম্বে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০২০ এর চূড়ান্ত তালিকায় বাদ পড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানান। অবিলম্বে ভাইভা থেকে বাদ পড়া প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ প্রদান করা না হলে কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবেন বলেও জানান।
চূড়ান্ত পর্বে বাদ পড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রার্থী মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা সদ্য ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আমলে বৈষম্যের শিকার হই। সেই বৈষম্য নিরসনের জন্য বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব ও একান্ত সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সকল নথিপত্র দাখিল করেছি। সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি এবং দফায় দফায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু কিছুতেই আমাদের কথা কেউ আমলে নিচ্ছে না। তাহলে আমরা যাব কোথায়? আগামী এক মাসের মধ্যে নিয়োগ না পেলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিতে বাধ্য হবো।’
নিয়োগ বঞ্চিত ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র প্রতিবন্ধী প্রার্থী পার্থ প্রতিম মিস্ত্রি বলেন, ‘তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয় প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ১৩ তম গ্রেড, নন গেজেটেড অর্থাৎ তৃতীয় শ্রেণীর চাকরি। যেখানে প্রতিবন্ধী কোটা এখনো বহাল আছে। অথচ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গায়ের জোরে অন্যান্য কোটা অনুসরণ করলেও একজন প্রতিবন্ধী চাকরী প্রার্থীকেও নিয়োগ দেয়নি। আমরা সেখানে চরমভাবে বৈষম্যের স্বীকার হই।’
নারী প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রার্থী পারুল বেগম বলেন, ‘বৈষম্যের স্বীকার হয়ে আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি এবং উচ্চ আদালতের রায়ও পেয়েছি গত ১৪ জানুয়ারি। কিন্তু ৮ মাসেও নিয়োগের খোঁজ পাইনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিবন্ধী কোটাকে অকুণ্ঠ সমর্থন করছে। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা যৌক্তিক দাবি লিখিতভাবে জানাতে বলেছেন। যা ইতোমধ্যেই আমরা জানিয়েছি। যেহেতু বর্তমান সরকার বৈষম্য নির্মূলে অক্লান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সেহেতু এবার সময় হয়েছে চিরবৈষম্যের শিকার প্রতিবন্ধী মানুষদের দিকে দৃষ্টি ফেরানোর।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী গ্রাজুয়েট পরিষদের আহ্বায়ক মো. আলী হোসেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বঞ্চিত প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯-এর ৮(৩)-এর বিধিতে উল্লেখ আছে, ‘উপ-বিধি(২) এর দফা (গ) তে উল্লিখিত মহিলা, পোষ্য ও পুরুষ কোটা পূরণের ক্ষেত্রে, আপাতত বলবৎ অন্য কোনো বিধি বা সরকারি সিদ্ধান্তে কোনো বিশেষ শ্রেণির কোটা নির্ধারিত থাকিলে উক্ত কোটা সংক্রান্ত বিধান অনুযায়ী নিয়োগ করিতে হইবে।’ এই নিয়োগ বিধিতেও সুযোগ আছে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় থেকে প্রাপ্ত প্রতিবন্ধী কোটা অনুসরণ করে বঞ্চিত প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের নিয়োগ প্রদান করার। ২০১৩ এবং ২০১৮ সালের প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিধিতে কোনো পরিবর্তন হয় নি। অথচ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিবন্ধীদের বুড়ো আঙ্গুল দেখাচ্ছে।’
ভাইবা থেকে বাদ পড়া চাকরী বঞ্চিত শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রার্থী মো. তৌহিদুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, ‘গত ১৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত চূড়ান্ত ফলাফলে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক হিসাবে চাকরি না পাওয়ার হতাশা নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পাশ করা যশোরের হাবিবুর রহমান নামের এক প্রতিবন্ধী ভাই আত্মহত্যা করেন। পরিবারের বোঝা না হয়ে হয়তো আমাদেরকেও একই পথ অনুসরণ করতে হবে।’
নিয়োগ বঞ্চিত প্রতিবন্ধী নারী প্রার্থী সীমা খাতুন বলেন, এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে সরকারের নীত বিবেচনায় আমরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯-এর আলোকে চলতি নিয়োগেই চাকরি দাবি করছি।’
(ঢাকাটাইমস/০১সেপ্টেম্বর/এসআইএস)

মন্তব্য করুন