প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো অত্যন্ত জরুরি: প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:১৫| আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:১৭
অ- অ+

বিশ্বমানের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে মিল দেখে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো অত্যন্ত জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী।

বুধবার সকাল ১১ টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ২য় তলার সাগর-রুনি মিলনায়তনে বিশ্বমানের প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে যুগোপযোগী প্রস্তাবনা পেশ করার লক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে মন্তব্য করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ৮টি সুপারিশও তুলে ধরেন তিনি।

আমিনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। আর প্রাথমিক শিক্ষা এর মূল ভিত্তি। একটি উন্নত দেশ ও জাতি গঠনে শিক্ষা অপরিহার্য উপাদান। তাই বাংলাদেশকে নতুন ভাবে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশ্বমানের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে মিল রেখে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো অত্যন্ত জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহে ৮ থেকে ১২ বৎসরের বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ চালু রয়েছে। বর্তমান বিশ্বে যেভাবে দ্রুত জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটছে তাতে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় কমপক্ষে ৮ বছর মেয়াদের একটি বাস্তবমুখী, পরিবেশভিত্তিক শিক্ষাক্রম চালু করতে না পারলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সামাজিক পরিবর্তন সম্ভব হবে না। যেহেতু ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ৮ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চলমান সেহেতু শিক্ষক নির্বাচনে কোন প্রকার শিথিলতা বা দুর্বলতাকে প্রশ্রয় দেয়া মোটেই বাঞ্ছনীয় হবে না। কারণ মানসম্মত শিক্ষকই মানসম্মত শিক্ষা উপহার দিতে পারে। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা নেই এমন ব্যক্তি কখনো শিক্ষা বিভাগীয় কর্মকর্তা হতে পারেন না। কারণ শিক্ষায় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ঐ শিক্ষকগণই পরবর্তী পর্যায়ে শিক্ষা বিভাগীয় কর্মকর্তা হিসেবে সফলভাবে প্রশাসন, ব্যবস্থাপনা, পরিদর্শন, তত্ত্বাবধান, মনিটরিং এবং যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাতে সক্ষম।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নিজস্ব ক্যাডার রয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব কোন ক্যাডার সার্ভিস না থাকায় বিশাল জনবলের জন্য অন্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে কর্মকর্তা নিয়োগ করা হচ্ছে। এতে চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ, অভিজ্ঞ, মাঠ পর্যায়ের সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল জনবল প্রাপ্তি সম্ভব হয়ে উঠছে না। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্বলতা ও জটিলতা এড়িয়ে সহকারী শিক্ষকদের (পুরুষ, মহিলা এম.এ) নবম গ্রেডে উন্নীত করণসহ তাদের ক্যাডার সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করে, পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান করে স্বতন্ত্র প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার সার্ভিস চালু করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি বলেন, আমাদের দেশে বর্তমানে বিভিন্ন প্রকার প্রাথমিক শিক্ষা চালু রয়েছে। যেমন সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রাথমিক শিক্ষা, কিন্ডার গার্টেন, ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষা, এনজিও চালিত শিক্ষা, ইংলিশ মিডিয়াম নামে যে সকল প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে তাতে শিক্ষার সার্বজনীনতা বজায় থাকছে কিনা তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। কারণ একটি সাধারণ প্রাথমিক বিদ্যালয় কিন্ডার গার্টেন শিক্ষা ব্যবস্থা ভিন্নধর্মী। একদিকে আছে আটপৌরে জীবনের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানোর তাগিদ। অন্যদিকে রয়েছে আভিজাত্যের দাম্ভিক প্রকাশ, একদিকে জৌলুসবিহীন অবয়বে দারিদ্র্যের ছাপ, অন্যদিকে প্রাচুর্য প্রদর্শনীর মহড়া। প্রতিবেশী দুটি শিশুর মধ্যে যে শিশুটি কিন্ডার গার্টেনের আভিজাত্যের ছায়ায় শিক্ষা লাভ করছে তার মনে ধীরে ধীরে নিজের অজান্তেই দানা বাধছে এক ধরনের অহমিকা। নিজেকে তার প্রতিবেশী শিশুটির চেয়ে শ্রেষ্ঠতর মনে করছে, ধন, মান ও জ্ঞান সকল দিক থেকে। পক্ষান্তরে অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিশুটির অনুভূতিতে হীনমন্যতাবোধ বাসা বাধছে দিনে দিনে। আর এভাবেই দুটি শিশুর মাঝে গড়ে উঠছে এক অদৃশ্য দেয়াল, সমাজ হচ্ছে শ্রেণি বিভক্ত। এরূপ পরিস্থিতি কাম্য হতে পারে না। এই জন্য সারাদেশে একই কারিকুলাম ও পাঠ্যসূচির আওতায় ১ম শ্রেণি হতে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত একীভূত শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা জরুরি প্রয়োজন।

মানসম্মত (বিশ্বমানের) প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সুপারিশসমূহ হলো:

১. প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালু করতে হবে। শুধুমাত্র সহকারী শিক্ষক (পুরুষ/মহিলা) এম.এ পাশ বা সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন, ৯ম গ্রেডে পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান করতে হবে।

২. সহকারী শিক্ষক পদ ব্যতিরেকে উপরের সকল পদে নিয়োগ বন্ধ রেখে শুধুমাত্র সহকারী শিক্ষকদের মধ্য ২ থেকে মেধা, যোগ্যতা যাচাই সাপেক্ষে বিভাগীয় উচ্চপদে শত ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে মহাপরিচালক পদ পর্যন্ত নিয়োগদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

৩. জাতীয়করণকৃত শিক্ষকদের গেজেট, পরিপত্র, দেশের প্রচলিত বিধিবিধানের আলোকে বেসরকারি চাকরিকালের ৫০ শতাংশ ধরে জ্যেষ্ঠতা, পদোন্নতি, উত্তোলিত টাইম স্কেল, গেজেটে বাদ পড়া প্রধান শিক্ষকদের গেজেটভুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. বর্তমানে কর্মরত শিক্ষকদের জন্য যোগ্যতাভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন স্কেল প্রদান করতে হবে।

৫. একই কারিকুলাম ও পাঠ্যসূচির আওতায় ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত সারাদেশে একীভূত শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা জরুরি প্রয়োজন।

৬. প্রতিটি বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও পাঠদানের উপকরণ সামগ্রী সরবরাহ করতে হবে।

৭. প্রতিটি বিদ্যালয়ের কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য একজন অফিস সহকারী নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। বাকী বিদ্যালয়গুলিতে পিওন নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. আই.এল.ও এবং ইউনেস্কো সনদ অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কিত সকল কমিটিতে ফলপ্রসূ সিদ্ধান্তের জন্য শিক্ষক প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মোহাম্মদ মহিউদ্দিন খোন্দকার, সিনিয়র সহ সভাপতি মোহাম্মদ আলী আক্কাছ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম, সহ সভাপতি আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/০৪সেপ্টেম্বর/এমআই/এমআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
‘সাময়িকভাবে’ ফ্লাইট বন্ধ করলো নভোএয়ার
সিরাজগঞ্জে নেশার টাকা না দেওয়ায় ছেলের মারধরে প্রাণ গেল বাবার, মা আহত
আফতাবনগরে পশুর হাট না বসানোর দাবিতে মানববন্ধন
সরকারের হস্তক্ষেপ না থাকায় বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ১৬ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ: তথ্য উপদেষ্টা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা