সবাইকে ট্যাক্স দেওয়ার আহ্বান অর্থ উপদেষ্টার
ট্যাক্স না দিলে সেবা পাওয়া দুরূহ ব্যাপার। তাই সবাইকে ট্যাক্স দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের সম্মেলন কক্ষ ভবনে অনলাইন ইনকাম ট্যাক্স সংক্রান্ত এক মিট দ্যা প্রেসে এই আহ্বান জানান তিনি।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারের কাজ করতে আয়করের প্রয়োজন হয়। রাজস্ব বোর্ডকে কর আদায়ের একটা লক্ষ্যমাত্রা আদায় করতে হয়। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রশাসনসহ সবাই অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু মুখের কথায় তো অংশগ্রহণ হয় না। কর না দিলে সেবা পাওয়া দুরূহ ব্যাপার। কর আদায় করতে অনলাইনকে গুরুত্ব দিচ্ছি; কেননা করদাতা যদি ট্যাক্স অফিসারের চেহারা না দেখে তাহলে একটু স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। আর চেহারা দেখা মানেই জানেন তো অনেক কিছুই।
সঞ্চয়পত্র ও ঝণ নিয়ে দেশ চালানো কঠিন জানিয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কর দাতা যে করটা দেয় সেটা যেনো সরকারের কোষাগারে পৌঁছায়। কোনো লিকেজ যেনো না থাকে। সবার কাছ থেকে কর আদায় করবো। এই জন্য অনলাইনটা করা। কর দেওয়ার সক্ষমতা অনেকের আছে। সবাই কর জালের আওতায় আসে না। টিআইএন অনেকের আছে ফিল আপ করে না। দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা কর দেবেন। এই টাকাটা বিফলে যাবে না।
সবচেয়ে বড় হিস্ট্রি হলো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সবাইকে অংশগ্রহণ করা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আপনারা সবাই কন্ট্রিবিউট করলেন, এটাই সবথেকে বড় ব্যাপার। ট্যক্স যদি আপনারা না দেন তাহলে সেবা দেওয়াটা কিন্তু একটা দূরহ ব্যাপার। আমি মনে করি সর্বজনীন ট্যক্স দেওয়া উচিত।
অনলাইনে ট্যাক্স দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমি পাঁচ বছর ক্যনাডা ছিলাম। আমি একদিনও ট্যাক্স অফিসের চেহারা দেখিনি। কোথায় ট্যাক্স অফিস তাও জানি না। অনলাইনে ট্যাক্স ফাইল করতাম। মাঝে মাঝে ফেরত আসতো টাকা। যে তুমি তো ৫০০ টাকা বেশি দিয়ে ফেলেছো। আমি একটু আশ্চর্য হতাম। কী ব্যপার চিনলাম না জানলাম না টাকা ফেরত আসলো। মানে এতো ট্রান্সপারেন্ট এতো স্বচ্ছতা। ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া মানে কি ট্যক্সটা লিকেজ যেনো না হয়। আপনি যেটা দেবেন সেই টাকাটা যেনো সরকারের কোষাগারে পৌছায়। মিডিল ম্যানের হাতে যেনো চলে না যায়।
স্বাগত বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘অনলাইনে রিটার্নে জমা দেওয়ার পাশাপাশি আয়কর সনদ ও টিআইন সনদ ও রিটার্ন নেওয়া যাবে। পেমেন্ট মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস বা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে করা যাবে।
২০২১ সালে আমরা প্রথম এই রিটার্ন চালু করি। ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন আমাদের সহযোগিতা করছে। অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগিতা করছে। আমরা কম্প্রিহেনসিভ অটোমেশন চাই। ২০২১ সালে মাত্র ৬১ হাজার রিটার্ন পেয়েছিলাম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুই লাখ ৪৪ হাজার পেয়েছি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাঁচ লাখ ২৬ হাজার পেয়েছি। এবার আমরা আশা করছি ব্যক্তিশ্রেণির কর দাতাদের যত ট্যাক্স রিটার্ন পড়বে তার সিংহভাগই অনলাইনে পড়বে।
খুব জোরেশোরে কাজ করছি। অনেক দূর এগিয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে কল সেন্টার চালু করতে পারবো। এদিকে রিটার্ন দাখিল ও কর পরিপালন সহজীকরণের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গতকাল সোমবার (০৯ সেপ্টেম্বর) থেকে অনলাইন রিটার্ন দাখিল সিস্টেম করদাতাদের জন্য উন্মুক্ত করেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের www.etaxnbr.gov.bd ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা সহজে নিজের রিটার্ন তৈরি করে অনলাইনে দাখিল করতে পারছেন।
এ সিস্টেম হতে ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কার্ড পেমেন্ট (ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড) ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে করদাতারা কর পরিশোধ করতে পারছেন এবং দাখিলকৃত রিটার্নের কপি, প্রাপ্তি স্বীকারপত্র, আয়কর সনদ, টিআইএন সনদ ডাউনলোড ও প্রিন্টের সুবিধা পাচ্ছেন। এছাড়া পূর্ববর্তী বছরের দাখিলকৃত ই-রিটার্ন ডাউনলোড ও প্রিন্ট করতে পারছেন।
ই-রিটার্ন সংক্রান্ত যেকোন সমস্যায় করদাতাদের সহায়তা প্রদানের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড একটি কল সেন্টার স্থাপন করেছে। আগামী বৃহস্পতিবার হতে এই কল সেন্টারের ০৯৬৪৩৭১৭১৭১ নম্বরে ফোন করে করদাতাগণ ই-রিটার্ন সংক্রান্ত প্রশ্নের তাৎক্ষণিক টেলিফোনিক সমাধান পাবেন। এছাড়া www.etaxnbr.gov.bd এর (eTaxService) অপশন হতে করদাতাগণ ই-রিটার্ন সংক্রান্ত যেকোন সমস্যা লিখিতভাবে জানাতে পারবেন এবং সমাধান পাবেন।
(ঢাকাটাইমস/১০সেপ্টেম্বর/এমআই/কেএম)