পর্যটন শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে টেকশই উন্নয়ন সম্ভব: করপোরেশন চেয়ারম্যান
পর্যটনখাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে করপোরেশন চেয়ারম্যান একেএম আফতাব হোসেন প্রামানিক বলেছেন, পর্যটন শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে দেশের টেকসই উন্নয়নের প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব। এই খাতে ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব একেএম আফতাব হোসাইন প্রামানিক বলেন, ‘পর্যটন বিচিত্রার আয়োজিত এবারের এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার বাংলাদেশে হওয়া এখন পর্যন্ত সব থেকে বড় ট্যুরিজম ফেয়ার। ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে একটি দেশের রাজনৈতিক, কালচারাল ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রয়োজন আছে। পর্যটন শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে দেশের সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট পূরণ করা সম্ভব। একটি ভালো ইনভেস্টমেন্টের ক্ষেত্র। আমি ট্যুরিজম সেক্টরে ইনভেস্ট করার জন্য সবাইকে আহবান জানাচ্ছি।’
একেএম আফতাব আরও বলেন, ‘পৃথিবীর সকল দেশে যেহেতু প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে এবং অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নের জন্য ট্যুরিজমের বিষয়ে বিভিন্ন দেশ জোড় দিচ্ছে। তাই আমাদের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনকে আরও বেশি সাস্টেইনেবল করতে আমাদেরও ট্যুরিজমের ওপর জোড় দিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চীনা দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলর লি শাওপেং বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের চায়নার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এই এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার বাংলাদেশের এবং চায়নার সম্পর্কের মধ্যে এক নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করবে পর্যটন শিল্পে। এই ফেয়ারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও চায়নার মধ্যে সাংস্কৃতিক বিষয়গুলো আদান প্রদান হবে।’
পর্যটন শিল্প বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় খাত উল্লেখ করে ট্যুরিস্ট পুলিশ বাংলাদেশের ডিআইজি মো. আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, ‘ট্যুরিস্ট পুলিশের কাজ হচ্ছে ডেডিকেটেডলি আমাদের পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়া। এর মাধ্যমে অনেক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা যেমন হয় একইভাবে আমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি পুরো বিশ্বের সামনে তুলে ধরা যাবে। সেজন্য নিরাপত্তার পাশাপাশি এমন পরিবেশ তৈরি করা যেখানে পর্যটকরা নিরাপদ মনে করবে। ট্যুরিস্ট যদি কোনো প্রকার ঝামেলায় পড়ে বা তাদের সাহায্যের প্রয়োজন পরে তারা চাইলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে যেকোনো সময়। এজন্য আমরা কিছু হটলাইন সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছি।’
ট্যুরিস্ট পুলিশের ডিআইজি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি এই এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ারের মাধ্যমে আমাদের পর্যটন শিল্প একটি ভালো প্লাটফর্ম পাবে। যার মাধ্যমে আমরা এই শিল্পকে আরও সামনে এগিয়ে নিতে পারব।’
এসময় মালদ্বীপের হাইকমিশনার শিউনীন রাশেদ বলেন, ‘এবারের এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ারে মালদ্বীপের অনেক প্রতিষ্ঠান যোগ দিয়েছে। এই ট্যুরিজম ফেয়ারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের জনগণের মধ্যে এক প্রকার নতুন সম্পর্ক গড়ে উঠবে। মালদ্বীপ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় পর্যটন খরচ অনেক কম। তাই আমি আহবান জানাবো পর্যটকদের মালদ্বীপে আসার জন্য।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত লিও টিটো এল অসান জুনিয়র বলেন, ‘ফিলিপাইনের এম্বাসেডর হিসেবে আমি বাংলাদেশে মানুষকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি ফিলিপানের ঐতিহাসিক সব স্থানগুলোতে ভ্রমণের জন্য। আমাদের এখানে সমুদ্র, পাহাড় থেকে শুরু করে অনেক আকর্ষণীয় ট্যুরিস্ট স্পষ্ট আছে। আমরা মনেকরি পর্যটন শিল্প মানুষের মধ্যে যেমন সম্পর্ক স্থাপন করে একইভাবে এটি অর্থনীতিকেও অনেক বেশি শক্তিশালী করে।’
এসময় বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফাতেমা রহিম ভিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রাকৃতিক এক অপার সুন্দর দেশ। আমাদের বিশাল সুন্দর বনসহ যে সকল পর্যটন কেন্দ্র আছে যা বিশ্বের অনেক পর্যটকদের আকৃষ্ট করে৷ এবারের মেলার মাধ্যমে বাংলাদেশসহ এশিয়ান দেশগুলোর মধ্যে পর্যটনের এক অপার সম্ভাবনা তৈরি হবে।’
পর্যটন শিল্পে গতি ফেরাতে ঢাকার আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরা (আইসিসিবি)'তে শুরু হতে যাচ্ছে ১১তম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার ২০২৪।
বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় পর্যটন বিচিত্রার আয়োজনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সার্বিক দিক নির্দেশনায়, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এবং ট্যুরিস্ট পুলিশ বাংলাদেশের সহযোগিতায় আয়োজিত ৩ দিন ব্যাপী এই মেলা চলবে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
এবারের ১১তম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ারে মালদ্বীপ, চায়না, ফিলিপিন, শ্রীলংঙ্কা, ভিয়েতনাম, ভুটান, সিঙ্গাপুরের প্রায় শতাধিক পর্যটন সংস্থা অংশগ্রহণ করেছে। মেলায় রয়েছে আসন্ন পর্যটন মৌসুমে দেশ ও বিদেশে বেড়ানোর বিভিন্ন আকষণীয় ভ্রমণ অফার, হোটেল, রিসোর্ট বা প্যাকেজ বুকিংসহ বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা। মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, ক্রুজলাইন্স, এয়ারলাইন্স, ট্যুর অপারেটর ও থিমপার্কসহ বিনোদনের আরও অনেক প্রতিষ্ঠান।
এছাড়া মেলায় বৈচিত্র্যময় আয়োজনে রয়েছে পর্যটন বিষয়ক সেমিনার, শিশুদের জন্য চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বিজনেস টু বিজনেস মিটিং। মেলার প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে চায়না, ফলিপাইন ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
(ঢাকাটাইমস/১৯সেপ্টেম্বর/এমআই/এসআইএস)