শেখ পরিবারে ভদ্রতা-শিষ্টাচারের কালচার নেই: রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘শেখ পরিবার ভদ্রতা শিষ্টাচারের কালচার শেখেনি, তাদের মধ্যে আছে শুধু ধৃষ্টতা, ঔদ্ধত্য আর অহংকার। এসব করতে গিয়ে যখনই তাদের পতন হয়েছে অত্যন্ত ভয়াবহভাবে। আমরা কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতেই বলেছি তার পতন হবে অত্যন্ত ভয়াবহ হবে।’
রিজভী বলেন, ‘উনি (শেখ হাসিনা) কানে লাগাননি, গ্রাহ্য করেননি। করবেন কেন? উনি দেখেছেন এই যে সাদ্দামের বেহেশত, নমরুদের বেহেশত; তিনি যে বানিয়েছেন, সেসব ছেড়ে তিনি সরে যাবেন কেন? এটা তিনি ভাবতেই পারেননি জনগণ ধেয়ে এসে তার সাধের গণভবনের দিকে যাবে। তিনি কল্পনাই করতে পারেননি। পারেননি বলেই আজকে তার ময়ূরের সিংহাসন মাটিতে লুটে পড়েছে।’
বৃহস্পতিবার আওয়ামী স্বৈরাচার বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদ সৈকত চন্দ্র দে এবং শহীদ পারভেজ-এর পরিবারের প্রতি তারেক রহমানের নির্দেশে সমবেদনা ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘দেশটা একেবারেই পারিবারিক সম্পত্তি বানিয়েছিল শেখ হাসিনা। তার বাবা তার পরিবারের লোকজনদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা যেত না। তার ঘনিষ্ঠ লোকজনরা লুটপাট করবে, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা যেত না। জ্বালানি নেই কিন্তু বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো কার? শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ লোকজনের তার আত্মীয়-স্বজনের। জনগণের পকেট কেটে পকেটমার শেখ হাসিনা হাজার হাজার কোটি টাকা লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। এই কারণেই তিনি আন্দোলনের কথা শুনলেই আন্দোলনকারীদের ওপর বর্বর আক্রমণ চালিয়েছেন।’
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘এই যে জুলাই বিপ্লব, এই বিপ্লবে নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে শেখ হাসিনা। স্কুল-কলেজের কত মাছুম বাচ্চার জীবন কেড়ে নিলেন তারপরও তার কোনো বিকার নেই। তার প্রতিহিংসা কিন্তু এখনো রয়েছে। দুই তিন দিন আগে বগুড়ার শিশু শিক্ষার্থী রাতুল মারা গেল ৪৫ দিন ধুঁকতে ধুকতে। শেখ হাসিনার বর্বর হিংসা, রক্ত ঝরানোর হিংসা তার প্রতিফলন এখনো কিন্তু আমরা দেখছি।’
রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতারা কতই না কথা বলেছেন; তারা বলেছিলেন শেখ হাসিনা না থাকলে কি বীভৎসতা বাংলাদেশে দেখা যাবে। ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন শেখ হাসিনা না থাকলে একদিনে ১ লক্ষ লোক মারা যাবে, আরেকদিন বলেছিলেন ১০ লক্ষ লোক মারা যাবে। ৫ই আগস্ট তার পতন হয়ে গেল শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেন কিন্তু কই ওবায়দুল কাদের যে বললেন তার মন্ত্রীরা বললেন হাসানুল হক ইনু বললেন কিছুই তো হল না। একজন আওয়ামী লীগারের ওপরও তো হামলা করা হয়নি। এই কথাগুলো বলে তারা শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রেখেছিল। কারণ শেখ হাসিনা টিকে থাকলে টেলিভিশনের মালিক হওয়া যায়, রেডিওর মালিক হওয়া যায়, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিক হওয়া যায় এবং জনগনের টাকা বিদেশে পাচার করা যায়।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘সজীব ওয়াজেদ জয় সুদূর আটলান্টিকেরপাড় থেকে মাঝে মাঝে দু-একটা বাণী ছাড়েন। এর আগে কত কথাই তো তিনি বলেছেন। আমি শুধু এখন এই কথাটাই বলবো শেখ হাসিনা আপনারতো সন্তান দুইজন একটা ছেলে একটা মেয়ে আপনি কিন্তু তাদেরকে ভদ্রতা শিষ্টাচারের কালচার শেখাননি। এই সজীব ওয়াজেদ জয় দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তুই বলে সম্বোধন করেছেন তার কয়েকটি বক্তৃতায়। আমরা কিন্তু কখনোই শেখ হাসিনার বর্বরচিত আচরণের পরেও তার দ্বারা আমরা যে কত নিপীড়ন নির্যাতনের শিকার হয়েছি মাসের পর মাস আমাদেরকে শুধু রিমান্ডেই থাকতে হয়েছে; কিন্তু তারপরেও কখনোই আমরা শেখ হাসিনাকে তুই বলে সম্বোধন করিনি। আপনি বলেই সম্বোধন করেছি সব সময়।’
রিজভী বলেন, ‘আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ভেতরে তারা ভিনদেশী আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকদেরকে ঢুকিয়েছিল। আমরা এই কথাগুলো শুনেছিলাম শেখ হাসিনার আমলেই কিন্তু অতটা আমলেও নেইনি। কিন্তু এখন জিনিসটা অত্যন্ত সুস্পষ্ট হয়ে গেছে এখন অনেকেই বলছেন। গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটার অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেছেন— ভিনদেশী নাগরিকদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীতে ঢুকানো হয়েছে।’
বিএনপি নেতা রিজভী আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা এই কাজগুলো করেছেন। এই কাজগুলো করেছেন এই কারণে নিজের দেশের লোকেরা বিট্রয় করতে পারে তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে আমি আমার প্রিয় দেশের কিছু সদস্য রাখি। তা না হলে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিন্দিতে কথা বলবে কেন? আমাদের আন্দোলন দমন করার জন্য শেখ হাসিনা হিন্দুদেরকে ভাড়া করে নিয়ে আসলেন এটা কী বড় ধরনের অপরাধ নয়? আপনি মাসুম বাচ্চাদেরকে গুলি করেছেন গুম করেছেন রাজনৈতিক নেতাদেরকে আপনি ক্রসফায়ার দিয়েছেন, রাজনৈতিক নেতাদেরকে নিজের গদি রক্ষার্থে ভিনদেশী মানুষদেরকে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে ঢুকিয়ে আপনি তাদেরকে দিয়ে কোমলমতি বাচ্চাদেরকে হত্যা করেছেন আপনার মতো এত বড় ঘাতক পৃথিবীতে আর কেউ ছিল বলে মনে হয় না।’
সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘একটা পর্যায়ে গিয়ে তারা জনগণের পক্ষে এসে দাঁড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা যতটুকু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছি এটা ছাত্র জনতার আন্দোলন তাদের আত্মত্যাগের কারণে, তাদের জীবন উৎসর্গের কারণে এবং এর সাথে সেনাবাহিনীর যে সমর্থন ছিল এটা অনেকটাই কাজে লেগেছে।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, আহ্বায়ক সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, আমরা বিএনপি পরিবারের সদস্য সচিব কৃষিবিদ মিথুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মুস্তাফিজুর রহমান মনির, আরিফুর রহমান তুষার প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/২৬সেপ্টেম্বর/জেবি/এসআইএস)

মন্তব্য করুন