বিদেশি দালাল হিসেবেই আওয়ামী সরকার দেশ ও ধর্মবিরোধী এজেন্ডায় কাজ করেছে: সৈয়দ রেজাউল করীম

বিগত আওয়ামী সরকার এই দেশের নয় বরং বিদেশি দালাল সরকার হিসেবেই শিক্ষানীতিসহ বিভিন্ন সেক্টরে দেশ ও ধর্মবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের (আেইএবি) এর আমির মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম।
মুফতী সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, ‘বিগত আওয়ামী সরকার এই দেশের নয় বরং বিদেশি দালাল সরকার হিসেবেই শিক্ষানীতিসহ বিভিন্ন সেক্টরে দেশ ও ধর্মবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছিল। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, রক্তের সাগর পেরিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়ে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা ক্ষমতায় বসিয়েছি তাদের মধ্যেও শিক্ষানীতিতে ইসলাম ও মুসলমানদের বিশ্বাস ও আদর্শকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যাপারে আন্তরিকতার ঘাটতি আছে বলে মনে হচ্ছে।’
শনিবার রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) মিলনায়তনে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
আইএবি আমির বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জন্য দেশের রাজনৈতিক মাঠ এখন যথেষ্ট উর্বর। এদেশের মানুষ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কার্যক্রমকে পর্যবেক্ষণ করে সন্তুষ্ট হয়েছে, আগামীতে তারা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে ক্ষমতার ভার অর্পণ করতে চায়।’
রাজনৈতি ঐক্যের ব্যাপারে চরমোনাই পীর বলেন, ‘জন্ম থেকেই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঐক্যকামী দল। আমাদের মরহুম আমির শায়খ সৈয়দ ফজলুল করীম রহ. ঐক্যের ব্যাপারে অধীর আগ্রহী ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের কাছে গিয়ে গিয়ে ঐক্য ও সম্প্রীতির বাণী ছড়িয়ে গেছেন আমৃত্যূ। আমরাও সেই পথ ধরে ঐক্যের বার্তা দিয়ে যাচ্ছি।’
সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, ‘আমাদের নেতৃবৃন্দের কারো কথায় যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন বা ঐক্যবিরোধী বার্তা পেয়ে থাকেন, আমরা তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। আমরা সবাইকে নিয়ে ইসলামকে ক্ষমতায়ন করতে চাই ইনশাআল্লাহ।’
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও তার অঙ্গসংগঠন সমূহের অনন্য ভূমিকা ছিলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলনে ৭৩জন হাফেজ আলেম শহীদ হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন শতাধিক। সুতরাং আলেম ওলামারা এদেশের সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সব সময় সজাগ ছিলেন তা প্রশ্নাতীতভাবে প্রমাণিত।’
প্রতিনিধি সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, ‘আমরা বহু আগেই বলেছিলাম, হাসিনার সরকার টিকবে না। তার সরকার খুন, গুম, লুটপাটের মাধ্যমে দেশটাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। হাসিনার কৃতকর্মই তার পতন তরান্বিত করেছে। তবে গণভবনের পতন হলেও ফের হাওয়া ভবন প্রতিষ্ঠিত হতে দেওয়া হবে না। স্বৈরাচারদের পতন ঘটিয়েছি কোনো দুর্নীতিবাজকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য নয়।’
এসময় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম (শায়খে চরমোনাই) বলেন, ‘স্বৈরাচারী সরকার বিদায়ের পর রাজনীতির প্রতি চরিত্রবান মানুষদের আগ্রহ বেড়েছে। নোংরা রাজনীতির কারণে ভদ্র-সভ্য মানুষেরা রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ভূমিকার কারণে সর্বজনের আস্থার পাত্রে পরিণত হয়েছে। এখন পাড়া-মহল্লায় যোগ্য, চরিত্রবান লোকদেরকে খুঁজে খুঁজে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দাওয়াত দিতে হবে। এক্ষেত্রে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।’
শায়খে চরমোনাই বলেন, ইসলাম, দেশ ও মানবতার স্বার্থে ঐক্যের প্রশ্নে আমরা সবসময় আন্তরিক ছিলাম এম এখনও আছি। কিন্তু কর্মীদেরকে এসব প্রশ্ন এড়িয়ে কাজে মনোযোগী হতে আহ্বান জানান।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমদ বলেন, ‘স্বৈরাচারের বিদায়ের পর বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কার চলছে, কিন্তু সংস্কারের নামে কুসংস্কার চাপিয়ে দিলে পরিণতি ভালো হবে না।’
শিক্ষা সংস্কার কমিটিতে কোনো বিজ্ঞ আলেম শিক্ষাবিদ না রাখায় আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষা হতে হবে দেশের সংখাগরিষ্ঠ জনতার বোধ বিশ্বাস ও আদর্শের প্রতি সম্মান জানিয়ে। কিন্তু কোনো বিদেশি সভ্যতা আমদানি করার অপচেষ্টা করলে এদেশের জনগন তা মেনে নেবে না।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করেছি, কিন্তু স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৫৩বছর সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার ছিল ইসলাম ও মুসলমানরা। ধর্মনিরপেক্ষতার হুজুগ তুলে বিগত সময়ে ইসলাম বিরোধীতার চর্চা করা হয়েছে। ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোকে বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে কোনঠাসা করে রাখা হয়েছিল। যদিও সাধারণ জনতা ইসলামী দলগুলোকেই বেশি ভালোবাসে।’
সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ নেছার উদ্দিন বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা সার্বভোমত্বকে ধারণ করে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ এদেশের যুব সমাজের মাঝে রাজনীতি করে যাচ্ছে। আমরা এদেশে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পেশি শক্তিভিত্তিক রাজনীতির অবসান চাই। এবং এজন্যই স্বৈরাচার হাসিনার পতন ঘটিয়েছি।’
আন্দোলনে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ-এর লাখো নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেছে উল্লেখ করে যুব আন্দোলন সভাপতি বলেন, আন্দোলনে অনেক হতাহত হয়েছে। সুতরাং এই দেশে আর কাউকে সন্ত্রাস চাঁদাবাজি করতে দেওয়া হবে না। পীর সাহেব চরমোনাইর নির্দেশে আমরা দেশ গড়ার যেকোনো কর্মসূচিতে সর্বাগ্রে থাকব ইনশাআল্লাহ।’
ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মুফতী মানসুর আহমদ সাকীর সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন আইএবির সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম আতিকুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) মাওলানা নূরুল ইসলাম আল আমীন, সহ-প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা নূরুল করীম আকরাম, সহ-প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বরকত উল্লাহ লতিফসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
(ঢাকাটাইমস/২৮সেপ্টেম্বর/এমআই/এসআইএস)

মন্তব্য করুন