ট্রান্সফ্যাট খাবার জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি, বাঁচার উপায়

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:০৯
অ- অ+

বাজারে এখন প্রক্রিয়াজাত খাবারের ছড়াছড়ি। কর্মব্যস্ত মানুষ কাজের ফাঁকে দ্রুত দুপুরের এবং বিকেলের খাবারটা সেরে ফেলেন প্রক্রিয়াজাত খাবার দিয়ে। পনির, সিরিয়াল, চিপস, রোল, সালামি, সসেজ, কেক এরকম অসংখ্য প্রক্রিয়াজাত খাদ্য আমরা প্রতিদিন কিছু না কিছু পরিমাণে খেয়ে থাকছি। যারা দীর্ঘ সময়ে এভাবে খাবার গ্রহণ করেন, তাদের জন্য দুঃসংবাদ হল বাইরের প্রক্রিয়াজাত খাবারের কারণে তারা যে কোনো সময়ে জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

উচ্চ তাপমাত্রায় তৈরিকৃত খাদ্য এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারে সাধারণত উচ্চ মাত্রার ট্রান্সফ্যাট থাকে। সাধারণত রেস্টুরেন্টে খাবারের স্বাদ-গন্ধ বাড়ানোর জন্য ট্রান্সফ্যাট ব্যবহার করা হয়। এ সমস্ত ট্রান্সফ্যাট খাবার জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।

খাবারের ট্রান্সফ্যাট হলো ক্ষতিকর চর্বিজাতীয় খাবার। এটি রক্তের ‘ভালো’ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং ‘খারাপ’ কোলেস্টরেলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। রক্তে অতিরিক্ত মাত্রার খারাপ কোলেস্টেরল হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই আপনি যত বেশি ট্রান্সফ্যাট খাবেন, আপনার হার্ট ও রক্তনালি রোগের ঝুঁকিও তত বাড়বে। ট্রান্সফ্যাট এত অস্বাস্থ্যকর যে আমেরিকার খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন সংস্থা এফডিএ সম্প্রতি খাদ্য প্রস্তুতকারীদের খাবার ও পানীয়গুলোয় কৃত্রিম ট্রান্সফ্যাটের প্রধান উৎস যোগ করতে নিষেধ করেছে। সংস্থাটি আশা করে, এ পদক্ষেপ প্রতিবছর হাজার হাজার হার্ট অ্যাটাক এবং মৃত্যু প্রতিরোধ করবে।

ট্রান্সফ্যাট শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং এর প্রভাব সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যাপক তথ্য–প্রমাণ রয়েছে। এটি প্রধানত কৃত্রিমভাবে উৎপন্ন হয়, যেমন আংশিক হাইড্রোজেনেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভিজ্জ তেল থেকে এবং কিছু প্রাকৃতিকভাবে, যেমন গরু–মহিষের মাংস বা দুগ্ধজাত পণ্যে অল্প পরিমাণে পাওয়া যায়। ট্রান্সফ্যাট শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং এর কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই। এটি হৃদ্‌রোগ, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার, কিডনি ও ক্যানসার রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

বিভিন্ন ধরনের বেকারিপণ্য, যেমন: কেক, কুকিজ ট্রান্সফ্যাট–সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে অন্যতম। প্রক্রিয়াজাত বিভিন্ন রকমের খাবার, ফ্রোজেন খাবার এবং নানা ভাজাপোড়া খাবার, ফ্রাইড চিকেন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইও ট্রান্সফ্যাটের অন্যতম উৎস। ডালডা বা বনস্পতি ঘি এবং তা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার, ফাস্টফুডও ট্রান্সফ্যাট থাকে। বিশ্ব জুড়ে হৃদরোগ ও হৃদরোগজনিত অকাল মৃত্যু ঝুঁকি হ্রাস করতে ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বের খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খল থেকে ট্রান্সফ্যাট নির্মূলের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

বেশির ভাগ ট্রান্সফ্যাট তৈরি হয় শিল্পপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিজ্জ তেল তৈরির সময় তাতে হাইড্রোজেন যুক্ত হয়। এই আংশিক হাইড্রোজেনযুক্ত উদ্ভিজ্জ তেল, যা স্বাভাবিক কম তাপমাত্রায় শক্ত হয়ে যায়, সেটিই হলো ট্রান্সফ্যাট। এটি খুব বেশি ক্ষতিকর না হলেও খাবার তৈরির সময় উদ্ভিজ্জ তেল পরিবর্তন না করে ভাজার জন্য বারবার ব্যবহার করলে তা বেশি বেশি ট্রান্সফ্যাটে পরিণত হয়, যা শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর।

উদ্ভিজ্জ তেলের হাইড্রোজেনেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ট্রান্সফ্যাট তৈরি করা হয়, যেখানে তেলের অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো হাইড্রোজেন যুক্ত হয়ে যায়, ফলে তেলটি শক্ত হয়ে যায় এবং এর শেল্ফ লাইফ বাড়ে। কিছু প্রাকৃতিক উৎস থেকেও ট্রান্সফ্যাট পাওয়া যায়, যেমন - দুধ, মাখন, ঘি, গরুর বা ছাগলের মাংস। শিল্পে উৎপাদিত ট্রান্সফ্যাটের প্রধান উৎস হলো হাইড্রোজেনেটেড তেল। সাধারণত প্যাকেটজাত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও বেকারি পণ্যে ট্রান্স-ফ্যাটি অ্যাসিড (টিএফএ) বেশি পরিমাণে থাকে। কৃত্রিম- মার্জারিন, শর্টেনিং, প্রক্রিয়াজাত খাবার (যেমন চিপস, কেক, বিস্কুট, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই) ও ফাস্ট ফুড। মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্যে অল্প পরিমাণে (তবে এর প্রভাব কৃত্রিম ট্রান্সফ্যাটের মতো তীব্র নয়)।

বাংলাদেশে সয়াবিন তেলে ট্রান্সফ্যাটের পরিমাণ বিভিন্ন কারণের ওপর নির্ভর করে, যেমন তেলের উৎপাদনের প্রক্রিয়া, পরিশোধনের পদ্ধতি ও ব্র্যান্ড। বাংলাদেশের বাজারে প্রচলিত সয়াবিন তেলে ট্রান্সফ্যাটের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা–এর স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী, দৈনিক মোট ক্যালরির ১ শতাংশের কম ট্রান্সফ্যাট গ্রহণ করা উচিত এবং সম্ভব হলে সম্পূর্ণ বর্জন করা উচিত।

কেমন হবে প্রতিদিনের খাওয়াদাওয়া

সুষম ডায়েট রোজকার যাপনে মেনে চলা উচিত। কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল সব থাকবে রোজের খাদ্যতালিকায়। সবুজ শাকসবজি, সালাদ যেন রোজের খাদ্যতালিকায় থাকে। ডাল, রুটি ফাইবারের জোগান অটুট রাখবে। গোটা ফলেও প্রচুর ফাইবার থাকে। আবার ঘি, সর্ষের তেল, তিলের তেল, আখরোট, কাজু, আমন্ড ফ্যাটের চাহিদা পূরণ করবে। তবে বাইরে থেকে কেনা খাবার, ট্রান্স ফ্যাট আছে এমন খাবার খাওয়া চলবে না। রোজের খাবার থেকেই কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট ছেঁকে নিতে হবে। প্রোটিনের জন্য ডাল, পনির, ছানা, ডিম, চিকেন, ছোলা-মুগ, ছাতু, মাছ সবই খাওয়া যেতে পারে।

কোন খাবার কতটুকু

প্রতি দিন ২০০০ কিলো ক্যালোরি পেতে হলে পাতে কী কী থাকবে?

১) সবুজ শাকসব্জি অন্তত ৪০০ গ্রাম (পুষ্টিবিদেরা বলছেন, সারাদিনে খাবারকে যদি ৬টি ছোট ছোট ভাগে ভাগ করি, তাহলে দিনে অন্তত চার থেকে পাঁচ বাটি (১০০-১৫০ গ্রাম) সবজি খাওয়া জরুরি।)

২) তাজা ফল ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম (আধ কাপের মতো)

৩) নানা রকম দানাশস্য (গম, বাজরা, ওট্‌স, মিলেট ইত্যাদি) ২৫০ গ্রাম (আড়াই কাপের মতো)

৪) ডাল জাতীয় খাবার ৮৫ গ্রাম (৩/৪ কাপ)

৫) দই/দুধ ৩০০ মিলিলিটার (এক মেট্রিক কাপ প্রায় ২৫০ মিলিলিটারের সমান। সুষম ডায়েটে দিনে এক থেকে দেড় কাপ দুধ বা দই রাখলে ভাল।)

৬) বাদাম, বীজ ৩৫ গ্রাম (৩ চা চামচের মতো)

৭) ফ্যাট ২৭ গ্রাম (আড়াই চা চামচের মতো)

৮) চিনি মেপে খেতে হবে, দিনে ২০-২৫ গ্রামের বেশি নয়। (সাধারণত দিনে দুই চা চামচ চিনিই যথেষ্ট।)

(ঢাকাটাইমস/১২ এপ্রিল/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
গণতন্ত্রের সমাজভূমি নির্মিত হলেই শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে: তারেক রহমান
শেখ পরিবারের ৫ সদস্যের জমি-বাড়ি ক্রোক, রিসিভার নিয়োগের আদেশ
ধাওয়া খেয়ে পিছু হটল ভারতের চার যুদ্ধবিমান
নিজের ওপর চলা নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বিচার চাইলেন রাশেদ খান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা