আনিসুল হকের বান্ধবী তৌফিকা করিমের ৩৮টি ব্যাংক হিসাব জব্দ

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ‘বান্ধবী’ তৌফিকা আফতাব ওরফে তৌফিকা করিমের ৩৮ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব হিসাবে ৪৩ কোটি ৬৬ লাখ ৬৬ হাজার ১৬০ টাকা রয়েছে।
বুধবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, তৌফিকা আফতাব ওরফে তৌফিকা করিমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে স্বনামে-বেনামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৬ সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, তিনি অপরাধলব্ধ অর্থ ব্যাংক হিসাব হতে উত্তোলন, হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার প্রচেষ্টায় রয়েছেন। এ কারণে তার নামীয় নিম্নবর্ণিত ৩৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন। তার ব্যাংক হিসাবসমূহ অবরুদ্ধ করা না গেলে বিচারকালে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না। এতে রাষ্ট্রের অপূরণীয় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মন্ত্রণালয় চালাতেন তৌফিকা:
আইন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজি আরিফুল জামান ও মন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা দিপংকর রায়কে দিয়ে তৌফিকা করিম আইন মন্ত্রণালয় চালাতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, বিপুল টাকার বিনিময়ে চট্টগ্রাম জেলার দায়রা জজ আদালতের এক মামলার রায়ে প্রভাব বিস্তার করেন তৈফিকা করিম। সারা দেশে আদালতের নিয়োগ বাণিজ্য করতেন এ নারী। অপকর্মে সহযোগিতা করতে না চাওয়ায় আরেক যুগ্ম সচিব বিকাশ কুমার সাহা বিপাকে পড়েন। তৌফিকার কথা না শোনায় দীর্ঘ নয় বছর তার কোনো পদোন্নতি হয়নি।
মামলায় রায় বদল ও নিয়োগ বাণিজ্য:
অভিযোগ আছে, দেশজুড়ে আলোচিত দুটি মামলার রায় পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন আনিসুল ও তৌফিকা জুটি। এর মধ্যে রয়েছে, ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ বনানীর রেইন ট্রিতে সংঘটিত ধর্ষণ মামলার রায়। এ মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার হোসেনের ছেলে সাফাত হোসেন। ২০২১ সালের নভেম্বরে গুলশানের একটি তারকা হোটেলে তৌফিকা করিম বৈঠক করেন দিলদার হোসেন সেলিমের সঙ্গে। তারপরই নাটকীয়ভাবে পাল্টে যায় মামলার রায়।
অর্থের বিনিময়ে আইন মন্ত্রণালয়ে মামলার রায়ের নথি লেখা হয়। এ নথি ২১ নভেম্বর পাঠ করেন বিচারপতি মোসাম্মত কামরুন নাহার। ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মামলা না করায় নির্যাতিতের প্রতি নেতিবাচক মন্তব্য করেন তিনি। এতে সুশীল সমাজ ক্ষুব্ধ হয়। ফলে কামরুন নাহারকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়। এ ঘটনায় কামরুন নাহারের গোপনে ধারণ করা অডিও প্রকাশ পায়। যেখানে কামরুন নাহারকে মন্ত্রীর প্রতি ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা যায়।
ওই অডিও রেকর্ডে বলা হয়, ২০২০ সালে ঢাকার দায়রা জজ আদালত ও চিফ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৮ জন গাড়িচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে দুই বছরের অভিজ্ঞতার কথা বলা হলেও নিয়োগপ্রাপ্ত অনেক গাড়িচালকের গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্সই ছিল না। তারা সবাই সাবেক এ মন্ত্রীর এলাকা আখাউড়া-কসবার বাসিন্দা। এসব কাজে আনিসুল তৌফিকাকে ব্যবহার করতেন বলে জানা গেছে।
এছাড়াও ২০১৪ সালের পর বিভিন্ন আদালতে হাজার হাজার জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে শুধু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/২৩এপ্রিল/এসএস/এমআর)

মন্তব্য করুন