বরগুনায় ছাত্রলীগ নেতাদের লাঠিপেটা: বিভাগীয় মামলায় অব্যাহতি পেলেন পুলিশ সুপার তারেক
বরগুনার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্তমানে এসপি হিসেবে ঢাকা রেঞ্জে কর্মরত) এস এম তারেক রহমানকে বিভাগীয় মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
জানা গেছে, জেলা পুলিশে কর্মরত অবস্থায় ২০২২ সালে শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স, শেখ রাসেল স্কয়ার, বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমির অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। জেলা আওয়ামী লীগ পুষ্পস্তবক অর্পণ করার পর ছাত্রলীগের বিরোধী গ্রুপ সবুজ মোল্লা-রাজ আরিয়ানদের নেতৃত্বে ২০০/২৫০ কর্মীসহ বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।
এসময় শিল্পকলা একাডেমিতে চলমান আলোচনা সভায় এস এম তারেক রহমানসহ এমপি (গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে) ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এবং জেলা প্রশাসক উপস্থিত থাকার সময় বিরোধী গ্রুপের নেতাকর্মীর শিল্পকলা একাডেমির ওপরে, নিচে এবং ভিতরে অবস্থান নেয়। অনুমোদিত রেজা-ইমরান গ্রুপ ও অপর গ্রুপ সবুজ মোল্লা-আরিয়ান গ্রুপের কর্মীরা সামনা-সামনি বিরোধে জড়িয়ে পড়লে পুলিশ কোনো হতাহতের ঘটনা ছাড়া ছত্রভঙ্গ করেন।
এসময় রেজা-ইমরান গ্রুপ শিল্পকলা একাডেমি এলাকা ছেড়ে শেখ রাসেল স্কয়ারের দিকে চলে যায়। অপরদিকে সবুজ গ্রুপ শিল্পকলা একাডেমির ভিতরে স্থান নেয়।
উত্তেজিত জনতার ইট পাটকেলের আঘাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মহরম আলীর গাড়ির সামনের কাচ ভাঙার বিষয়ে এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সঙ্গে বাক-বিতণ্ডা লিপ্ত হন এবং অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু পুলিশের গাড়ি ঠিক করে দিবেন মর্মে আশ্বাস দেন। কিন্তু অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক রহমানের উপস্থিতিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলী উত্তেজিত হয়ে গাড়ির কাচ ভাঙার প্রতিশোধ নিবেন বলে হুমকি দেয়। তারেক রহমান ঘটনাস্থলে থাকাকালীন বাক-বিতণ্ডা চলাকালীন সবুজ গ্রুপের একজন নেতা মহরম আলীর সঙ্গে তর্কে জড়ান।
ডিবি পুলিশের এসআই এবং কয়েকজন সদস্য তাকে মারধরপূর্বক থানায় নিয়ে যাওয়া, এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনায় তারেক রহমান যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এলাকায় তীব্র উত্তেজনাকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। শিল্পকলা একাডেমির ভিতরে থাকা পুলিশ সদস্যরা সেখানে বিভিন্ন ফ্লোরে, বাথরুমে, সিঁড়িতে এবং ছাদে অবস্থানরত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বেধড়ক লাঠিপেটা করে। নেতাকর্মীরা দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে থাকলে দুদিক থেকে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা ইউনিফর্ম ও সিভিলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বেধড়ক লাঠিপেটা করে। সেই ভিডিও দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও মোতায়েনকৃত ফোর্সকে যথাযথভাবে কমান্ড করে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হন। যাতে জনসম্মুখে পুলিশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়। এই অভিযোগে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। ১১ মার্চ তাকে কারণ দর্শানোর জবাব এবং তার আবেদনের ভিত্তিতে ৭ মে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পর্যালোচনা করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হওয়ায় বিধিমতে তিনজন তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তারা ১২ নভেম্বর তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ হয়নি মর্মে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়। তাই তারেক রহমানকে বিভাগীয় মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
(ঢাকাটাইমস/০১ডিসেম্বর/এসএস/এমআর)
মন্তব্য করুন