বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৯| আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৩
অ- অ+

ভিসা জটিলতার কারণে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে ভারতগামী যাত্রীর সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। ভারত সরকার ভিসা কার্যকম সীমিত করায় দু দেশের মধ্যে যাত্রী পারাপার এখন অর্ধেকে নেমেছে। এতে রাজস্ব আয় ও স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, আগে প্রতিদিন যেখানে ৭-৮ হাজার যাত্রী বেনাপোল চেকপোস্ট পারাপার হতেন, এখন সেখানে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছেন ৪ হাজার যাত্রী। যাত্রী পারাপার কমে যাওয়ায় 'ভ্রমণকর' বাবদ রাজস্ব আদায়ও কমেছে। দুঃসময় পার করছে চেকপোস্টকেন্দ্রিক স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। ৫ আগস্টের পর থেকে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

কাস্টমস সূত্র জানায়, বছরে এই বন্দরে ভ্রমণকর থেকে রাজস্ব আদায় হয় ১৮২ কোটি টাকা। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে প্রতিমাসে গড়ে ১৫ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হতো। বর্তমানে রাজস্ব আদায় হচ্ছে মাসে প্রায় ৩ কোটি টাকা।

গত মঙ্গলবার বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ৪ হাজার ৪৫ জন যাত্রী পারাপার হয়েছেন। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ১ হাজার ৮৮৮ জন, এসেছেন ২ হাজার ১২৭ জন। বুধবার ৫ হাজার ২৩১ জন যাত্রী পারাপার হয়েছেন। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ২ হাজার ৬০২ জন, এসেছেন ২ হাজার ৬২৯ জন। আর বৃহস্পতিবার পারাপার হয়েছেন ৫ হাজার ১৫৯ জন। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ২ হাজার ৬৫১ জন, এসেছেন ২ হাজার ৫০৮ জন।

স্থলপথে পারাপারের জন্য দেশের সবচাইতে বড় আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট হচ্ছে বেনাপোল। সরকার পতনের আগে এই চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন ভারত বাংলাদেশের মধ্যে ৭ থেকে ৯ হাজার পাসপোর্ট যাত্রী যাতায়াত করতেন। বেনাপোল থেকে কলকাতার দূরত্ব ৮৪ কিলোমিটার। দূরত্ব কম ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় অধিকাংশ যাত্রী এই পথেই ভারত যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এপথে ব্যবসা, ভ্রমণ (পর্যটন) ও মেডিকেল ভিসার যাত্রীর সংখ্যা সবচাইতে বেশি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বাংলাদেশে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ভারত ভিসা কার্যক্রম সীমিত করেছে। ভিসাকেন্দ্রগুলো এখন কেবল জরুরি মেডিকেল ও স্টুডেন্ট ভিসার জন্য সীমিত পরিসরে স্লট দিচ্ছে। ভিসা বন্ধ থাকায় পর্যটন বা বিভিন্ন কাজে যারা ভারতে যাতায়াত করতেন, তারা পড়েছেন বিপাকে।

শুধু তাই নয়, যাত্রী পারাপার কমে যাওয়ায় বড় ধরনের ধস নেমেছে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টের বিভিন্ন ব্যবসায়। পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল বেনাপোলের মানিচেঞ্জার, স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও চরম দুঃসময় পার করছেন।

বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে ভারত-বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের যাতায়াতকারী পর্যটকদের সহযোগিতার জন্য সীমান্তে গড়ে উঠেছে নানা প্রতিষ্ঠান। মানিচেঞ্জার থেকে শুরু করে দূরপাল্লার পরিবহন কাউন্টার, ট্যুর গাইড, ভিসা সহায়তা কেন্দ্র, বাস-ট্রেন-প্লেনের টিকিট বুকিং এজেন্সি এবং হোটেল, রেস্তোরাঁসহ ছোটখাটো নানা ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন দুঃসময় পার করছে।

বেনাপোল সোহাগ পরিবহনের ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, যাত্রী না থাকায় পরিবহন ব্যবসায় ধস নেমেছে। আগে যেখানে প্রতিদিন বেনাপোল থেকে দেড় শ দূরপাল্লার (পরিবহন) বাস বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ছেড়ে যেত, এখন সেখানে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০টা বাস ছেড়ে যাচ্ছে। তারপরও পরিবহনের অধিকাংশ বাসই খালি যাচ্ছে। পরিবহন ব্যবসা টিকিয়ে রাখতেই কোম্পানির মালিকরা লসের টাকা মাথায় নিয়েই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভারতীয় 'ভ্রমণ ভিসা' প্রদান শুরু না হলে খুব শিগগির পরিবহন ব্যবসা বেনাপোল থেকে গুটিয়ে নিতে হবে বলে তিনি জানান।

চেকপোস্টের রাজা-বাদশা মানিচেঞ্জার মালিক আবুল বাশার ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমরা সাধারণত এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসায়ী ও ভারত যাতায়াতকারী পাসপোর্ট যাত্রীদের টাকা এক্সচেঞ্জ করে থাকি। এদের যাতায়াত কমে গেলে আমাদের কাজও কমে যায়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বাংলাদেশে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর আমরা একেবারেই হাতগুটিয়ে বসে আছি। আয় রোজগার না হলেও অফিস খরচ, নিজেদের হাত খরচ, কর্মচারী বেতন তো হয়েই যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের পথে বসতে হবে।

চেকপোস্টের ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমান বলেন, চেকপোস্ট এলাকায় অন্তত চার শতাধিক বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। যারা শুধুমাত্র পাসপোর্ট যাত্রীদের ওপর নির্ভরশীল। স্থানীয়রা খুব বেশি পণ্য কিনতে এখানে আসে না। পাসপোর্ট যাত্রী কমে যাওয়ায় অনেকের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হচ্ছে।

ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ডাইরেক্টর মতিয়ার রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ভিসাকেন্দ্রগুলো এখন কেবল জরুরি মেডিকেল ও স্টুডেন্ট ভিসার জন্য সীমিত পরিসরে স্লট দিচ্ছে। ব্যবসা ও ভ্রমণ ভিসার যাত্রীদের সংখ্যা নেই বললেই চলে। ভিসা বন্ধ থাকায় বেকায়দায় পড়েছি সবাই। ভারত সরকার ব্যবসা (বিজনেস) ভিসা না দেওয়ায় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যেও প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে আমদানিকারক বাবলুর রহমান ঢাকা টাইমসকে জানান, প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে যেসব পণ্য আমদানি করা হয় তা ক্রয় করার আগে ভারতের বিভিন্ন জায়গাতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের পণ্য পছন্দ করে কিনে থাকেন তারা। কিন্তু ভিসা জটিলতার কারণে এখন তারা এ কাজ করতে পারছেন না। ফলে অনেকেই ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন।

সরেজমিনে কথা হয় বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াতকারী কয়েকজন পাসপোর্ট-যাত্রীর সঙ্গে। তারা জানান, উন্নত চিকিৎসার জন্য মেডিকেল ভিসা নিয়ে ভারতে যাচ্ছেন। ভারতীয় মেডিকেল ভিসা পেতেও আমাদের দুই থেকে তিন মাস সময় লাগছে। আগেও বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে গেছেন। কিন্তু চেকপোস্টের এমন চিত্র কখনো দেখেননি।

বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে আগে ৭ থেকে ৮ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতেন। গত ৫ আগস্টের পর যাত্রী সংখ্যা অনেক কমে গেছে। ভিসা না দেওয়ার পর যাত্রী সংখ্যা নেই বললেই চলে।

তিনি বলেন, নতুন করে ট্যুরিস্ট ভিসা চালু না করলে আগামী এক মাসে দু দেশের মধ্যে যাত্রী পারাপার শূন্যের কোটায় নেমে আসবে।

(ঢাকাটাইমস/২৩নভেম্বর/ইএস)

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
যড়যন্ত্র মোকাবিলায় আমরা সজাগ আছি, ঐক্যবদ্ধ আছি: প্রধান উপদেষ্টা
ক্যানসারে আক্রান্ত বৃদ্ধের পাশে অভিনেত্রী মুক্তি
বৃহস্পতিবার থেকে স্বাভাবিক নিয়মে সাজেক ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা
সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে ১৮ প্রস্তাব ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশের 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা