কুমিল্লায় বাড়ি বানাতে গিয়ে ইতিহাসের সন্ধান, মিলল প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের একটি বসতভিটায় মাটি খননের সময় উন্মোচিত হলো লাল ইটের প্রাচীন দেয়াল। মাটির নিচে লুকিয়ে ছিল শতবর্ষ, এমনকি তারও বেশি সময় আগে নির্মিত কোনো এক স্থাপনার অংশ। ধারণা করা হচ্ছে, এটি কোনো রাজা বা জমিদার আমলের বাসস্থান বা প্রশাসনিক ভবনের ধ্বংসাবশেষ হতে পারে।

সম্প্রতি এই আবিষ্কার ঘিরে ধর্মপুরে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক চাঞ্চল্য। চারা বাড়ি এলাকার মানুষজন এখন প্রতিদিন ভিড় করছেন পুরোনো সেই দেয়াল দেখতে। ছোট্ট এক মাটির খোঁড়াখুঁড়ি যেন খুলে দিচ্ছে বৃহৎ এক ইতিহাসের দরজা।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. জসিম উদ্দিন তার বাড়ির নির্মাণকাজ শুরুর আগে জমির মাটি সমান করছিলেন। ঠিক তখনই শ্রমিকদের হাতের কোপে উঠে আসে অস্বাভাবিকভাবে পাথরের মতো শক্ত কিছু ইটের গাঁথুনি। সেসব ইট ছিল আকারে বড়, অনেকটা মুঘল আমলের স্থাপনায় ব্যবহৃত ইটের মতো।

“প্রথমে ভেবেছি পুরনো কোনো ভিটা, কিন্তু ইটের ধরন দেখে বোঝা যায় এটি সাধারণ কিছু নয়,” বলেন জসিম উদ্দিন।

খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কুমিল্লা আঞ্চলিক কার্যালয়ের একটি দল। শুরু হয়েছে প্রাথমিক পর্যায়ের খনন ও অনুসন্ধান কাজ।

স্থানীয় তরুণ ফয়সাল সদ্দার বলেন, “ইতিহাস বইয়ে আমরা যে কুমিল্লার কথা পড়েছি, সেই ইতিহাস যদি নিজের চোখে দেখতে পারি, সেটাই হবে বড় পাওয়া।”

ধর্মপুরের স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা চাই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এখানকার সব নিদর্শন সংরক্ষণ করুক। এতে ভবিষ্যতে এটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।”

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক সুমি আক্তার বলেন, “১৭৩৩ সালে বাংলার নবাব সুজাউদ্দিন খান ত্রিপুরা রাজ্য আক্রমণ করে এর সমতল অঞ্চল বাংলার অন্তর্ভুক্ত করেন। এই অঞ্চলটি ত্রিপুরা ও বাংলার মধ্যবর্তী একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ছিল। এমন আবিষ্কার সেই সংযোগের প্রমাণ দেবে হয়তো।”

ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবির মনে করেন, এই খনন কুমিল্লার প্রাচীন শাসনব্যবস্থার ইতিহাস জানার এক গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হয়ে উঠতে পারে।

“সপ্তম শতক থেকেই এই অঞ্চলে নানা রাজবংশের শাসন ছিল। ধর্মপুরের আবিষ্কার সেসব ইতিহাসের নতুন সূত্র দিতে পারে,” বলেন তিনি।

জেলা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মোছা. নাহিদ সুলতানা বলেন, “আমরা মাত্র খনন কাজ শুরু করেছি। এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। খনন কাজ শেষ হলে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।”

তিনি আরো বলেন, তারা পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণ করে পূর্ণাঙ্গ খনন পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। নিদর্শন ও ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহ করে প্রাথমিক বিশ্লেষণের পর বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/০৫মে/এফএ)