ওজন কমায় কাঁচা পেঁপে! ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও সেরার সেরা
প্রাচীনকাল থেকেই কাঁচা পেঁপে বহু রোগের মহৌষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকায় পেঁপের অবস্থান অন্যতম। এটি কাঁচা ও পাকা দুইভাবেই খাওয়া যায়। কাঁচা অবস্থায় সবজি ও পাকা অবস্থায় ফল হিসেবে খাওয়া হয় পেঁপে। ফলটি পাওয়া যায় সারা বছরেই।
কাঁচা পেঁপে ভাজি ও ডাল দিয়ে নানারকম ভাবে খাওয়া হয়ে থাকে। এমনকি এটি বিভিন্ন মাংসে দিয়েও রান্না করা হয়। এছাড়া কাঁচা পেঁপের হালুয়া আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয়। পুষ্টিবিদরা বলছেন, কাঁচা পেঁপের মধ্যে এমন কিছু প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা সারিয়ে তুলতে পারে বহু জটিল রোগ।
ভিটামিন, প্রোটিন, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস এবং প্যাপেইন ও কাইমোপাপেইনের মতো এনজাইমের প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে সমৃদ্ধ কাঁচা পেঁপের স্বাস্থ্য উপকারিতাও অসীম। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং ক্ষত নিরাময় বৈশিষ্ট্য তো রয়েছে, কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় এবং হজমশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে।
বিশেষজ্ঞরা পেঁপেকে ‘সুপারফুড’ হিসেবেও আখ্যায়িত করে থাকেন। শরীরকে সুস্থ রাখতে ও শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করার পাশাপাশি এটি জ্বর নিরাময়ে, পেটের সমস্যা দূর করতে, গ্যাস্ট্রিক এবং বদহজমেও অনেক উপকারী। তাই আর দেরি না করে জানুন কাঁচা পেঁপের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
সবুজ পেঁপেতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রয়েছে। এগুলো শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এই খনিজগুলো ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়াতেও সহায়ক। এটি মূল এনজাইমের বিরুদ্ধেও কাজ করতে পারে, যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী।
ওজন কমাতে সহায়ক
ওজন কমাতে প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে কাঁচা পেঁপে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি দূর হয়। এ জন্য দইয়ের সঙ্গে গ্রেট করে কাঁচা পেঁপে খাওয়া যায়, কিংবা স্যালাড হিসেবেও খাওয়া যায়। আবার কাঁচা পেঁপে কামড়ে কামড়ে আমড়া, পেয়ারার মতোও খেতে পারেন।
হজমে সাহায্য করে
কাঁচা পেঁপে ডায়েটারি ফাইবারে সমৃদ্ধ। যা গাঁজানো স্টার্চ তৈরি করতে সাহায্য করে, যা শেষ পর্যন্ত অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার জন্য খাদ্য (প্রিবায়োটিক) হয়ে ওঠে। ফলে অন্ত্র থাকে সুস্থ সবল।
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি
কাঁচা পেঁপেতে বেশ কিছু স্বাস্থ্যকর এনজাইম থাকে। এগুলো পেট পরিষ্কার রাখে এবং টক্সিনমুক্ত হজম প্রক্রিয়া পেতে সাহায্য করে। কাঁচা পেঁপে প্রকৃতিতে অ্যান্টি-পরজীবী এবং অ্যামিবিক বিরোধী। ফলে পেট ঠান্ডা থাকে। গ্যাস্ট্রিক সিস্টেমকে অস্বাস্থ্যকর গ্যাস সংগ্রহে বাধা দেয়।
এনজাইমের ঘাটতি পূরণ করে
যে মহিলারা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান তাদের পুষ্টির প্রয়োজন বেশি। তাই তাদের কাঁচা পেঁপে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ এটা শরীরের সমস্ত এনজাইমের ঘাটতি পূরণ করে দুধ বাড়াতে সাহায্য করে।
বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশনে উপকারী
কাঁচা পেঁপে এবং এর বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি এবং ই, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। কাঁচা পেঁপে সর্দি-কাশি সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করে। এটি প্রস্রাবের সমস্যায় উপকারী হতে পারে। কাঁচা পেঁপে শরীরে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি বন্ধ করে।
পেটের রোগ দূরে করে
পাকা পেঁপে আমাদের পেটের জন্যও খুব উপকারী। একইভাবে পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কাঁচা পেঁপেও উপকারী। এটি খেলে গ্যাস, পেটব্যথা এবং হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
জয়েন্টের সমস্যা দূর করে
কাঁচা পেঁপে বাত ও জয়েন্টের জন্য উপকারী। গ্রিন টি-র সঙ্গে ফুটিয়ে চা তৈরি করে খেলে বাতের সমস্যায় আরাম মেলে।
অবাঞ্ছিত লোম থেকে পরিত্রাণ পেতে
শরীরের অবাঞ্ছিত লোমগুলো খুব কুৎসিত দেখায় এবং তা থেকে মুক্তি পাওয়াও কঠিন। কাঁচা পেঁপে দিয়েও অবাঞ্ছিত লোমের পুনঃবৃদ্ধি রোধ করা যায়। কাঁচা পেঁপেতে প্যাপেইন নামে একটি শক্তিশালী এনজাইম রয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ফার্মাসিউটিক্যালস-এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, প্যাপেইন আপনার অবাঞ্ছিত লোমের ফলিকলগুলিকে দুর্বল করে এবং তাদের বাড়তে বাধা দেয়, এভাবে অবাঞ্ছিত লোম থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে।
পুষ্টির উৎস
ব্রিটিশ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কাঁচা পেঁপেতে গাজর ও টমেটোর চেয়েও অনেক বেশি ক্যারটিনয়েডস পাওয়া যায়। তাই এটি আমাদের শরীরের ক্যারটিনয়েড ও ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে পুষ্টির উৎস হিসেবে কাজ করে।
ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়
সবুজ পেঁপেতে রয়েছে ফাইবার, যা ত্বক থেকে টক্সিন শোষণ করে। এর সাহায্যে আপনি ব্রণ, ফ্রেকলস এবং পিগমেন্টেশনের সমস্যা এড়াতে পারেন। এতে থাকা ভিটামিন এবং অন্যান্য পুষ্টি আপনার ত্বককে সুস্থ রাখে। সেই সঙ্গে কাঁচা পেঁপে খেলে শরীরের যেকোনো ক্ষত সেরে যায় দ্রুত।
(ঢাকা টাইমস/১৮নভেম্বর/এজে)
মন্তব্য করুন