কিছু ব্যক্তি উসকানি দিয়ে জাতিকে বিভাজন ও অন্ধকারে ঠেলছে: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৭:১০
অ- অ+

সাম্প্রতিক সময়ের ‘অস্থিতিশীলঘটনাবলী বিভেদ-বিভাজনকে উস্কে দেয়ার চক্রান্ত হিসেবে দেখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিছু ব্যক্তি উসকানি দিয়ে জাতিকে বিভাজন ও অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে মন্তব্য করে তিনি এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন।

দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বুধবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, তিনটা মাসও হয়নি। এর মধ্যেই আমাদের সেই আসল চেহারা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এগুলো চেহারা নিয়ে কোনোদিনই সাফল্য অর্জন করা যায় না। যতই বড় বড় কথা বলি, যতই লম্বা লম্বা বক্তৃতা করি, বিশ্বকে এক করার চেষ্টা করি হয় না। আমার নিজের ঘরেই যদি সেই বিভাজন থেকে যায়, বিভেদ থেকে যায় এটা কখনোই ঠিক করতে পারব না।

সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই কয়েকটা দিনে আমরা খুব চিন্তিত, ভয়াবহভাবে উদ্বিগ্ন। আপনি চিন্তা করতে পারেন ধর্মকে কেন্দ্র করে কী উন্মাদনা শুর হয়েছে বাংলাদেশে। আপনি চিন্তা করতে পারেন যে, মুক্ত স্বাধীন মিডিয়ার জন্য, প্রেসের জন্য, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য আমরা এতোদিন লড়াই করলাম তার অফিস পুঁড়িয়ে দিচ্ছে। এই বাংলাদেশ তো আমরা দেখতে চাই না, আমি দেখতে চাই না। আমি তীব্রভাবে নিন্দা জানাচ্ছি প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ অন্যান্য সমস্ত পত্রিকাগুলোতে যে আক্রমণ শুরু হয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানাই।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির পোস্টের কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কী উন্মাদনা; যখন দেখি জ্বালিয়ে দাও, পুঁড়িয়ে দাও আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। চিন্তা করতে পারেন কোন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশকে। আমরা কি বুঝি আমাদের ভয়টা কোথায়? আমরা কি বুঝি আমাদের আতঙ্কটা কোথায়? আমরা কি বুঝি আততায়ী কোথায় ছুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের পেছনে? বুঝি না, বুঝলে আজকের এই সমস্ত দায়িত্বহীন, ইরেন্সপনসেবল কথাবার্তা আমাদের মুখ দিয়ে বেরুতো না। দুর্ভাগ্য আমাদের!

তিনি বলেন, কিছু সংখ্যক মানুষ তারা নিজেদের অত্যন্ত জনপ্রিয় মনে করেন। সবচেয়ে দেশপ্রেমিক মনে করেন। আর গোটা জাতিকে আজকে তারা বিভাজনের দিকে ঠেলে দিয়ে, উস্কে নিয়ে একটা অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। আপনারা গভীরভাবে চিন্তা করবেন। আমি কারো নাম বলব না, বলতে চাই না। তবে আপনারা (চিকিৎসক) সমাজের শিক্ষিত মানুষ। গভীরভাবে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করবেন যে আজকে বিভেদের দিকে ঠেলছে, যারা আজকে বিভাজনের দিকে ঠেলছে, অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলছে তারা আমাদের আসল শত্রু না মিত্র এই জিনিসগুলো বুঝতে হবে।

বিভাজন ছেড়ে এক হতে হবে

দেশ রক্ষায় ‘বিভাজনছেড়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘আমরা জীবনের শেষ অংশে চলে আসছি। আমরা একেবারে জীবন সায়াহ্নে এসে আপনাদের বলতে চাই, যদি আপনারা দেশকে রক্ষা করতে চান, আপনারা স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে চান, আপনাদের অধিকারকে রক্ষা করতে চান তাহলে আপনারা সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন। বিভাজনের কাছে আপনারা কখনো মাথা নোয়াবেন না, অন্যায়ের কাছে মাথা নোয়াবেন না, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না।

‘আসুন আমরা ডা. মিলন যে কারণে প্রাণ দিয়েছেন তাকে স্মরণ করে সেটাকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে একটা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে জন্য প্রাণ দিয়েছেন একটা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজকে যে কারণে ৬ বছর ধরে তিলে তিলে ভুগেছেন কারাগারের অন্ধকারে এটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, তারেক রহমান সাহেব আজকে দীর্ঘ বছর ধরে প্রবাসে নির্বাসিত হয়ে দিন কাটাচ্ছেন, তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা সেই গণতন্ত্র, গণতন্ত্র ও গণতন্ত্রকেই প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করি।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের প্রতি ফখরুলের যে অনুরোধ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিন্তু কারো দয়া দান নয়। দয়া করে করেনি এটাকে। এটাকে এদেশের ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দিয়ে এই সরকার তৈরি করা হয়েছে। সুতরাং এই সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে সেটাকে স্বীকার করে নিয়ে পুরোপুরিভাবে এদেশের জনগনের যে মূল লক্ষ্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের, সেই লক্ষ্যে যাওয়াটাই তাদের জন্য সর্বোত্তম বলে আমরা মনে করি।

আরেকটা কথা পরিস্কার করে বলতে চাই, যারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বে রয়েছেন তারা এমন কোনো কথা বলবেন না দয়া করে যা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।

জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে বিএনপির চিকিৎসক সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন-ড্যাবের উদ্যোগে নব্বইয়ের স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে শহীদ ডা. শামসুল আলমের স্মরণে ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও রাষ্ট্র গঠনে চিকিৎসক সমাজের ভূমিকা শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

১৯৯০ সালের এই দিনে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে চিকিৎসক নেতা ডা. মিলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। ডা. মিলনের রক্তদানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নতুন গতি সঞ্চারিত হয় এবং ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে ৬ ডিসেম্বর স্বৈরশাসনের পতন ঘটে। সেই থেকে প্রতি বছর দেশের বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনীতিক দল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনটি শহীদ ডা. মিলন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গনে ডা. শামসুল আলম স্মৃতি সৌধে নব্বইয়ের ছাত্র ঐক্যের নেতৃবৃন্দ নব্বইয়ের ডাকসু ভিপি আমান উল্লাহ আমানের পুস্পমাল্য অর্পণ করেন। সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন ও সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরীর নেতৃত্বে চিকিৎসকরাও মিলনের স্মৃতি সৌধে পুস্পমাল্য অর্পণ করে।

ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, অধ্যাপক একেএম আজিজুল হক, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ড্যাবের মহাসচিব আব্দুস সালাম, সিনিয়র নেতা আবদুস সেলিম, মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ডাম্বেল, জহিরুল ইসলাম শাকিল, শহিদুর রহমান, শহীদুল আলম, সিরাজুল ইসলাম, মোস্তাক রহিম স্বপন, মেহেদী হাসান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

(ঢাকাটাইমস/২৭নভেম্বর/জেবি/ইএস)

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরও ১০৫ বাংলাদেশি
পঞ্চগড় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত, বিজিবির কড়া প্রতিবাদ
গোপালগঞ্জে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডোবায়, চালক নিহত
অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ: পাকিস্তানকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে বাংলাদেশ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা