বিএনপির জন্মই সংস্কারের মধ্য দিয়ে: মির্জা ফখরুল 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১০ জুলাই ২০২৫, ১৫:৪৬| আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৫, ১৬:২১
অ- অ+

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন,' সংস্কার তো আমাদের মজ্জায়, সংস্কার আমাদের রক্তে, আমাদের জন্মই সংস্কারের মধ্য দিয়ে। তাই আজকে যদি বলা হয়, বিএনপি সংস্কার আটকে দিচ্ছে , এটা আমি মনে করব যে এটা অত্যন্ত অন্যায়ভাবে এটা বলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, আমরা সংস্কার চাই না। সংস্কার রুখে দিচ্ছি। তাহলে এর চেয়ে বড় সত্যের অপরাধ তো আর কিছু হতে পারে না। এইযে কমিশন হয়েছে এখন ঐক্যমত কমিশন হছে প্রত্যেকটা কমিশনের প্রতিটি মিটিংয়ে আমাদের প্রতিনিধি টিম গেছে, আমরা প্রত্যেকটি বিষয়ে আমাদের মতামত সংস্কার কমিটিগুলো সামনে তুলে ধরেছি ।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে 'জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সাংবাদিকের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদ সাংবাদিক পরিবারের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ( বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ( ডিইউজে) ।

মির্জা ফখরুল বলেন, '১৫ টা বছর রাজনৈতিক দলগুলো স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে, তারা ভয়াবহভাবে একটা দানবীয় শাসনের শিকার হয়েছে। আমার এই দলে ১৫ বছরে ৬০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে এবং এই মানুষগুলো প্রতিদিন আদালতে গেছেন, উকিলের কাছে গেছেন, বাড়ি থেকে পালিয়ে থেকেছেন, পুলিশের দাবরানিতে অনেকে কেউ অন্য পাড়ায় গিয়ে, অন্য গ্রামে এবং কেউ কেউ গ্রাম ছেড়ে, দেশ ছেড়ে, জেলা ছেড়ে, ঢাকায় এসে রিক্সা চালিয়েছে, কেউ হকারের কাজ করেছেন। কেউ বড় বড় বাড়িগুলোতে দারোয়ানের চাকরি নিয়ে থাকেন। এগুলো হচ্ছে একদম বাস্তবতা'।

তিনি বলেন, প্রায় ১৭০০ বিএনপির নেতাকর্মী গুম হয়ে গেছেন , দলের প্রায় ২০ হাজার মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের নেত্রী চেয়ারপার্সন তার বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দিয়ে এবং একটা মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তাকে ছয় বছর কারান্তরীণ রাখা গিয়েছিল। তারেক রহমান সাহেবকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এগুলো সব ঘটনা সত্য'।

'বিএনপি সংস্কারে বাধা দিয়েছে' গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশে সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ৭৫ সালে যখন আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ঘোষণা করে এবং পট পরিবর্তনের পরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। প্রথম যে সংস্কারটি তিনি করেছিলেন একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র রুপান্তর করেন এবং তারপরে তিনি সমস্ত বাক স্বাধীনতা দিয়েছেন। তার আগে মাত্র চারটি পত্রিকা সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সব ছিল বন্ধ।

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া নয় বছর দীর্ঘ সংগ্রাম করে স্বৈরাচার হটিয়ে তিনি সকলকে নিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছিলেন। এ একটা বিশাল একটা মৌলিক সংস্কার। তত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এর মাধ্যমে তিনটি ইলেকশন সেই তিনটি ছিল সবচাইতে ভালো ইলেকশন। অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান ট্যাক্স আরোপের প্রমাণ হয়েছে এটা বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতিকে শক্ত জায়গায় নিয়ে আসার পেছনে কাজ করেছে।

তিনি বলেন, জুলাই সনদ সম্পর্কে বলা হয়। জুলাই সনদের প্রথম যখন কথা উঠল , তখনই আমরা আমাদের মতামত দিয়ে দিয়েছি। গতকাল রাত্রে আবার মতামত পত্র দিয়েছি। তাহলে প্রবলেমটা কোথায়? প্রবলেমটা হচ্ছে , যে নারী দেখতে তার চলন বাকা।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমি খুব আশাবাদী মানুষ। নির্বাচন হবে কি হবে না, অনেকে জানতে চেয়েছেন? কেন হবে না। নির্বাচন তো দেশের মানুষ চায়, নির্বাচনের জন্য মানুষ প্রাণ দিয়েছে । মানুষ একটা নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব চায়।

' সমস্যা গুলো যত দ্রুত সম্ভব আমরা এই কাজগুলো করে আমরা একটা নির্বাচিত সরকারের দিকে যাই, গণতন্ত্র উত্তরণের পথে যাই, ডক্টর প্রফেসর ইউনুসকে ধন্যবাদ দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি ( ইউনুস ) নির্দেশ দিয়েছেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি রাখতে নির্বাচন কমিশনকে।এটা একটা অত্যন্ত ইতিবাচক। আশা করব, নির্বাচন কমিশন এই কাজটা খুব দ্রুততার সঙ্গে করে তার নির্বাচন প্রস্তুতি সম্পন্ন করবেন।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের উপরে ৩৫ শতাংশ ট্যারিফ আরোপ করেছে। রপ্তানি পোশাক শিল্পের উপরে যদি ৩৫ শতাংশ ট্রারিফ আসে তাহলে পোশাক শিল্প মাটিতে শুয়ে পড়বে উঠতে পারবে না অর্থাৎ আমাদের অর্থনীতির মেরুদন্ড ধ্বংস হয়ে যাবে।এটা অত্যন্ত একটা সমস্যা বড় সমস্যা । আমি মনে করব, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তারা কতটুকু এ ব্যাপারে মনোযোগ দিয়েছেন আমি জানিনা। তবে আরো অনেক বেশি মনোযোগ দিয়ে সবচাইতে যোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করাটা প্রয়োজন ছিল। তো সময় এখনো চলে যায়নি, এখনো সময় আছে । এ বিষয়গুলো আলোচনা করে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি বেঁচে থাকে, আমাদের মেয়েদের কর্মসংস্থান যেন নষ্ট না হয়, আমাদের অর্থনীতি যেন প্রতিষ্ঠিত হয় সে বিষয়টা তারা অবশ্যই দেখবেন ।

মির্জা ফখরুল বলেন, সীমান্তে হত্যা এবং পুশইন ব্যাপারটাকে সিরিয়াসলি রাখার জন্য ,এটা কোন হালকা ব্যাপার নয়। প্রতিদিন এটা সীমান্তে ঘটছে। সুতরাং এই বিষয়টাকে আরো গুরুত্ব সহকারে জনমত সৃষ্টি করার ব্যাপারে গণমাধ্যমে নিয়ে আসার দরকার এবং এ ব্যাপারে সরকারের প্রতিও আহবান জানাবো , যেন সরকার এ বিষয়টাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ভারতের সঙ্গে এটা দরকষাকষিটা চূড়ান্ত পর্যায়ে যায়। অত্যন্ত জোরালোভাবে এই পানির হিস্যার ব্যাপারগুলো পানি বন্টনের বিষয়গুলোকেসরকারকে নিশ্চিত আহবান জানান তিনি।

নিজের বয়স হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তরুণ উপরেই আমাদেরকে নির্ভর করতে হবে। তাদেরকেই মোটিভেট করতে হবে যেন সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করার ব্যাপারে তারা এগিয়ে আসে এবং সেখানেই তারা সফল হয়'।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে ) সভাপতি মো. শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেলারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আব্দুল হাই সিকদার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও কালেরকণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বিএফইউজের সহকারী মহাসচিব বাছির জামাল, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান,বিএফইউজের সহ-সভাপতি এ কে এম মহসিন, বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য মাইনুল ইসলাম, প্রবাসী সাংবাদিক ইমরান আনসারী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক এম সাইদ খান, যুগ্ম সম্পাদক ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা - বিএসএস এর প্রধান প্রতিবেদক দিদারুল আলম দিদার, সহ সভাপতি রাশেদুল হক, কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসেন প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/১০জুলাই/এলএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
১২ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১০৭ কোটি মার্কিন ডলার
নিবন্ধন স্থগিত হলেও ইসির তফসিলে থাকছে ‘নৌকা’, অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না ‘শাপলা’
ঋণের টাকার চাপে গৃহবধূর আত্মহত্যা
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়োগে বিএনপির নতুন প্রস্তাব
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা