বিশ্বজিৎ হত্যা: ১৩ খুনি ধরা পড়েনি তিন বছরেও

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর ২০১৬, ০৮:১০| আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০১৬, ০৯:০৯
অ- অ+

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের চাপাতির কোপে নিহত যুবক বিশ্বজিৎ দাসের মামলার রায় হয়েছে প্রায় তিন বছর। কিন্তু এখনো ধরা পড়েনি পলাতক ১৩ খুনি। তাদের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার তামিল প্রতিবেদনও ফিরে আসেনি আদালতে। এ ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই কোথাও।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ কর্মসূচির সময় পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে খুন হন বিশ্বজিৎ।

২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ বি এম নিজামুল হক এই মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আটজনের মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন। একই সঙ্গে যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া আসামিদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেয়া হয়।

মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আটজন হলেন রফিকুল ইসলাম ওরফে শাকিল, মাহফুজুর রহমান ওরফে নাহিদ, জি এম রাশেদুজ্জামান ওরফে শাওন, কাইয়ুম মিয়া, ইমদাদুল হক ওরফে এমদাদ, সাইফুল ইসলাম, রাজন তালুকদার ও নূরে আলম ওরফে লিমন। তাদের মধ্যে রাজন তালুকদার ও নূরে আলম পলাতক। বাকি ছয়জন বর্তমানে কারাগারে।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ১৩ জন হলেন এ এইচ এম কিবরিয়া, গোলাম মোস্তফা, খন্দকার ইউনুস আলী, তারেক বিন জোহর, আলাউদ্দিন, ওবায়দুল কাদের, ইমরান হোসেন, আজিজুর রহমান, আল আমিন শেখ, রফিকুল ইসলাম, মনিরুল হক পাভেল, কামরুল হাসান ও মোশাররফ হোসেন। তাদের মধ্যে এস এম কিবরিয়া ও গোলাম মোস্তফা কারাগারে আছেন। বাকি ১১ জন পলাতক।

বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার রায়ের তিন বছরেও ধরাছোঁয়ার বাইরে দণ্ড পাওয়া ১৩ খুনি। তাদের গ্রেপ্তারের কোনো প্রতিবেদন বা তথ্যও নেই ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে।

আদালত সূত্র জানায়, বিশ্বজিৎ দাসের হত্যায় সাজাপ্রাপ্ত কোনো আসামি গ্রেপ্তারের বা আত্মসমর্পণের খবর আসেনি। যত দিন পুলিশ আসামিকে গ্রেপ্তার না করবে, তত দিন সংশ্লিষ্ট থানায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পেন্ডিং থাকবে। শুধু আসামিরা মারা গেলে পুলিশ তাদের মারা যাওয়ার তথ্য দিয়ে আদালতে একটি প্রতিবেদন পাঠাতে পারবে।

ওই সূত্র আরো জানায়, মামলার রায়ের দুই দিনের মাথায় আসামিদের স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। কিন্তু এখনো কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানার তামিল প্রতিবেদন ফেরত আসেনি।

র‌্যাবের একটি সূত্র জানায়, বিশ্বজিৎ দাসের পলাতক খুনিদের গ্রেপ্তারে কোনো তৎপরতা নেই প্রশাসনের। এ ব্যাপারে কোনো তথ্যও নেই তাদের কাছে। র‌্যাবও নির্বিকার।

জানতে চাইলে সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘পলাতক আসামিদের বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা যে থানায় ওই থানায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা গেছে। তাছাড়া আমি মাত্র ১৪ দিন আগে এ থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেছি। ফলে এ বিষয়ে আমার তেমন কিছুই জানা নেই।’

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ চলাকালে বাহাদুর শাহ পার্কের পাশ দিয়ে ছাত্রলীগের একটি মিছিল যাওয়ার সময় বোমা বিস্ফোরণ হয়। এ সময় অন্যান্য আতঙ্কিত পথচারীদের সঙ্গে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য দৌড়াচ্ছিলেন বিশ্বজিৎ। তখন বিশ্বজিৎকে মিছিল থেকে ধাওয়া করে কয়েকজন তাকে মারতে থাকে। মার খেতে খেতে পাশের একটি ভবনে উঠলে সেখানেও তাকে চাপাতি, রট, কাঠের টুকরা দিয়ে মারতে থাকে আসামিরা। এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়ে নিচে নেমে শাঁখারীবাজারের গলির মুখে গিয়ে পড়ে যান বিশ্বজিৎ। সেখান থেকে একজন রিকশাওয়ালা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বিশ্বজিৎ হত্যার পর ওই রাতেই অজ্ঞাতনামা ২৫ জনকে আসামি করে সূত্রাপুর থানায় হত্যা মামলা করেন ওই থানার তখনকার এসআই জালাল আহমেদ। পরদিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও টেলিভিশনে সম্প্রচারিত খবরের ভিডিও দেখে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বতপ্রণোদিত হয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন।

তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ৫ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২১ জন কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ।

(ঢাকাটাইমস/১০নভেম্বর/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি, ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস 
সরাইলে আমগাছ থেকে পড়ে ব্যবসায়ীর মৃত্যু 
আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ ব্লকের ঘোষণা এনসিপির
রাঙ্গাবালীতে কৃষক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নেতা গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা