জীবনে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি মেলেনি, বাবার হয়ে লড়ছে ছেলেরা

তৌহিদুল বকসী ঠান্ডা, কুড়িগ্রাম
 | প্রকাশিত : ১৪ নভেম্বর ২০১৬, ০৮:৪১

১৯৭১ সালে ৬ নম্বর সেক্টরের অধীনে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে ১৪ বছর ধরে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়িয়েছেন, কিন্তু স্বীকৃতি মেলেনি তার। অবশেষে এই অতৃপ্তি আর দুঃখ নিয়ে তাকে চলে যেতে হয়েছে পরপারে। তবে তার সন্তানরা বাবার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়ার আশায় এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এই মুক্তিযোদ্ধা কুড়িগ্রামের পলাশবাড়ীর পাঠানপাড়া গ্রামের মৃত শহর উদ্দিনের ছেলে লাল মিয়া।

জানা যায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ৬ নম্বর সেক্টরের অধীনে সুবেদার আরব আলীর কোম্পানিতে ছিলেন লাল মিয়া। পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধে তিনি অংশ নেন। দেশ স্বাধীনের পর সহায়-সম্বলহীন লাল মিয়া অভাবের তাড়নায় দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজের সন্ধানে ছুটে বেড়ান। সেই সুবাদে অন্যত্র পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করেন। এ জন্য তার মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেয়া সম্ভব হয়নি।

২০০০ সালের দিকে কুড়িগ্রামে ফিরে আসেন তিনি। তখন থেকে মুক্তিযোদ্ধার সনদ পেতে জেলা ইউনিট কমান্ড, উপজেলা কমান্ডারদের কাছে বারবার ধরনা দেন শিক্ষাবঞ্চিত লাল মিয়া। কিন্তু লাভ হয়নি কোনো। বছর দুয়েক আগে মারা যান তিনি।

এরপর থেকে তার ছেলে রাজু আহমেদ ও আফজাল আহমেদ বাবার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি আদায়ের জন্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসনে কয়েক দফা দরখাস্তসহ দেনদরবার করলেও কাজে আসেনি।

লাল মিয়ার মুক্তিযোদ্ধার সত্যতা নিশ্চিত করে ৬ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা ও বীরপ্রতীক মো. আব্দুল হাই সরকার বলেন, লাল মিয়া ৬ নম্বর সেক্টরের অধীনে সুবেদার আরব আলীর কোম্পানির অধীনে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।’

কুড়িগ্রাম সদর কমান্ডের সাবেক উপজেলা কমান্ডার মো. আফজাল হোসেন জানান, ‘১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমি যখন সাহেবগঞ্জ ভারত সেক্টর হেডকোয়াটারে অবস্থান করি, তখন লাল মিয়া সেখানে ছিলেন। পরে ইপিআর সুবেদার আরব আলীর কোম্পানিতে থেকে ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধে সে ও আমি সশরীরে অংশ নিই।’ একই কথা জানালেন কুড়িগ্রাম পুরাতন স্টেশন পাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হানিফ উদ্দিন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা কমান্ডের কমান্ডার আব্দুল বাতেন জানান, সরকার বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন করে তালিকাভুক্ত করার জন্য অনলাইনে দরখাস্ত নিচ্ছে। শিগগির যাচাই-বাছাই কমিটি তৈরি হবে। ওই কমিটি ও সাক্ষীদের মাধ্যমেই বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতিসহ তালিকা করা হবে।

লাল মিয়ার ছেলে রাজু আহমেদ বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছে তার মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার গল্প শুনে বড় হয়েছি। এমনকি তার সঙ্গের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছেও অনেক গল্প শুনেছি। বাবার শেষ ইচ্ছা ছিল, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সাহায্য পাওয়া নয়, মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া। তিনি এ বেদনা নিয়েই পরকালে চলে গেছেন। আমি তার সন্তান হিসেবে সরকারের কাছে দাবি করছি, আমার বাবা যদি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়ে থাকেন, তাকে যেন মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।’

(ঢাকাটাইমস/১৪নভেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :