পোশাক শ্রমিকদের নৌমন্ত্রীর ‘আশ্বাস’

বেতন বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে নামা পোশাক শ্রমিকদেরকে আরও এক বছর অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের আগে নতুন ওয়েজবোর্ড গঠন করা সম্ভব নয়। তবে তার আগে বেতন বাড়ানোর বিষয়টি শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে আলোচনার করে রিভিও করা যেতে পারে।
শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের ১৫তম দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিলে শাজাহান খান এসব কথা বলেন।
পোশাকখাতে সবশেষ ২০১৩ সালে ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন হয়েছে। ওই বেতন কাঠামোতে বলা হয়েছে পাঁচ বছর পর নতুন ওয়েজবোর্ড হবে। আর প্রতি বছর বেতন বাড়বে পাঁচ শতাংশ হারে।
ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী পোশাক খাতে নবীন শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মূল বেতন পাঁচ হাজার ৬৩০ টাকা। ২০১৩ সালে এটা ছিল পাঁচ হাজার ৩০০। পরে তা রিভিও করে ৩৩০ টাকা বাড়ানো হয়। তবে সম্প্রতি আশুলিয়ার বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা সর্বনিম্ন বেতন ১০ হাজার টাকা করার দাবিতে আন্দোলনে নামে।
আন্দোলনের মুখে আশুলিয়ার ৫৫টি পোশাক কারখানা বন্ধ থাকে প্রায় এক সপ্তাহ। আর চাকরিচ্যুত হয় এক হাজারেরও বেশি শ্রমিক। পোশাক শিল্প মালিকরা এই আন্দোলনকে চক্রান্ত হিসেবে দেখছেন। আর শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, আগামী দুই বছরেও বেতন বাড়ানোর যুক্তি আছে বলে তিনি মনে করেন না।
তবে পোশাক শ্রমিকদেরকে কিছুটা আশ্বাস দিয়েছেন শ্রমিক নেতা হিসেবে পরিচিত নৌমন্ত্রী শাহাজহান খান। তিনি বলেন, ‘ট্রেড ইউনিয়নের নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ বছর পর ওয়েজ বোর্ড হবে। সেই হিসেবে ২০১৮ সালে হবে এই ওয়েজবোর্ড। তবে মজুরির বিষয়টি রিভিউ করা যেতে পারে। শ্রমিক মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এই মজুরি রিভিউ করা হবে।’
একই সমাবেশে যোগ দেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্তী রাশেদ খান মেননও। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির এই নেতা মনে করেন, শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর দাবিতে যুক্তি আছে।
হঠকারী কর্মসূচিতে না যাওয়ার পরামর্শ
হঠকারী আন্দোলনে কোন দিন সফলতা আসে না মন্তব্য করে নৌমন্ত্রী বলেছে, ‘আশুলিয়ায় কি দেখলাম? কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে, কোন নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ করে কিছু শ্রমিক আন্দোলন শুরু করে। মালিক কারখানা বন্ধ করে দিল, আন্দোলন ব্যর্থ হলো।’
বিএনপির পরিণতি থেকে শিক্ষা নিতে পোশাক শ্রমিকদের পরামর্শ দেন শাহাজান খান। বলেন, ‘হঠকারীভাবে খালেদা জিয়াও আন্দোলন করে ব্যর্থ হয়েছে। খালেদা জিয়া গাড়িতে পেট্রল বোমা দিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে। এ কারণে তার আন্দোলন সফল হয় নাই। শ্রমিকরাও এমন কিছু করতে গেলে তারা ব্যর্থ হবে।’
আশুলিয়ায় আন্দোলনে নামা শ্রমিকদের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, ‘আশুলিয়ার আন্দোলনকারীরা আমাদের কথা শুনল না। কার কথা শুনে আন্দোলনে গেল জানি না।’
ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে নৌমন্ত্রী
বেতন বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে নামা পোশাক শ্রমিকদেরকে ছাঁটাইয়ের সমালোচনা করেন নৌমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কথায় কথায় শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করতে হবে। যদি কোন সমস্যা থাকে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করুন। সমাধান না হলে আমাদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করুন।’
শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর দাবি যৌক্তিক
বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর দাবি যৌক্তিক। তিনি বলেন, ‘সরকারি নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি, সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সবার বেতন বেড়েছে। সেখানে শ্রমিকরা প্রশ্ন তুলতেই পারে কেন তাদের বেতন বাড়ছে না?’।
পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনে বল প্রয়োগ করলে সুফল মিলবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন মেনন। বলেন, ‘জেল-জুলুম-নিপীড়ন দিয়ে আন্দোলন দমানো যাবে না। অতীতেও কেউ দমাতে পারেনি। পাকিস্তান আমলে টঙ্গীতে পাটকল বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু শ্রমিকদের আন্দোলন দমাতে পারেনি।’
পোশাক শিল্প মালিকদেরকে উদ্দেশ্য করে মেনন বলেন, ‘শ্রমিকদেরকে মালিকরা দাস মনে করে। কিন্তু শ্রমিকরা মালিকদের দাস নয়। মালিকরা কারখানা বন্ধ করে দিলেও আন্দোলন বন্ধ হয়ে যাবে না।’
(ঢাকাটাইমস/৩০ডিসেম্বর/জিএম/ডব্লিউবি)

মন্তব্য করুন