হিউম্যান হলারে অন্যরকম ঝুঁকি

‘চাইপ্যা বহেন’
‘ওই ব্যাটা, এখানে কয়জনকে বসাবি’
‘ছয় জন বইবো, পুশাইলে বহেন, তাইলে নাইম্যা জান’
রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত চলাচলকারী একটি হিউম্যান হলারের ভেতর যাত্রীর সঙ্গে চালকের সহকারীর বাদানুবাদের সময় এই কথা বলাবলি হচ্ছিল। বাহনটির পেছনে দুটি সারিতে ছয় জন করে তুলতে চাইছে চালকের সহকারী। কিন্তু যাত্রীরা বলছেন বসবে পাঁচজন।
এই বসচা নিত্য দিনের। রাজধানীতে বাস-হিউম্যান হলারসহ সব বাহনেই ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করার অভিযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে হিউম্যান হলারের পেছনের পাশাপাশি সামনের অংশেও বহন করা হয় অতিরিক্ত যাত্রী। কোনো গাড়ির সামনেই দুই জনের বেশি বসা না গেলেও হিউম্যান হলারে চালকের পাশাপাশি বসানো হয় দুই জন যাত্রী।
ঝুঁকিতে পুরুষত্ব
একজন বসানোর কথা থাকলেও হিউম্যান হলারের সামনে একজন যাত্রী বসে জানলার পাশে এবং একজনকে বসানো হয় চালক ও ওই যাত্রীর মাঝখানে। এ ক্ষেত্রে যাত্রীকে গিয়ারের দুই পাশে দুই পা দিয়ে বসতে হয়। গিয়ার টান দিলে এমনটি পুরুষাঙ্গেও আঘাত লাগার আশঙ্কা থাকে। এ নিয়ে অনেক রসিকতাও আছে যাত্রীদের মধ্যে।
গাড়ি চালানোর সময় গিয়ার একটি অপরিহার্য বস্তু। একবার ধাক্কা দিয়ে সামনে আরেকবার পেছনে দিতে হয়। পেছনে দিতে গিয়ে হয় মূল সমস্যা। মূত্রদ্বারে একবার বড়সড় ধাক্কা লাগলেই ঘটে যেতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এনামুল করিম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘গাড়ি চালানোর সময় হঠাৎ গিয়ারের আঘাতে পুরুষত্ব নষ্ট হয়ে যেতে পারে। নিম্নাংশে ধাক্কা বেশি জোরে হলে মৃত্যুও হতে পারে। কারণ এই অংশটি শরীরের সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশ।’
অতিরিক্ত যাত্রী বহন: ব্যবস্থা নেয় না পুলিশ
হিউম্যান হলারের দুর্নাম ছাড়া যাত্রীরা কোনো সুনাম করেছেন- এমন কখনও শোনা যায় না। পেছনে দুইপাশে চার জন করে বসানোর অনুমোদন নিয়ে চলা গাড়িগুলোতে বসানো হয় ছয় জন করে। শীতে যেমন তেমন, গরমের মৌসুমে হিউম্যান হলারে যাতায়াত দুঃসহ হয়ে উঠে। কোনো একজন একটি মোটা হলে তিনিসহ বাকি পাঁচ যাত্রীরই নাভিশ্বাস উঠে যাত্রাপথে।
এর মধ্যে স্বাভাবিকের চেয়ে মোটা কেউ উঠলে তাকে দুই জনের ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। নয় জনের জায়গায় ১৪ জন বসিয়েও হয় না চালক ও সহকারীর। পেছনে ঝুলিয়ে তোলা হয় আরও এক-দুইকে। এতে তাদের লোভে দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে থাকে সব যাত্রীই। অথচ পুলিশ কখনও ব্যবস্থা নিয়েছে-এমন ঘটনাই বিরল।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ শামসুল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এসব যানবাহন রাজধানীতে চলার কথাই না। বিআরটিএ আর পুলিশের দুর্নীতি আর দায়িত্বে অবহেলার কারণে দিন দিন বেড়েইে চলছে অবৈধ যানবাহনের সংখ্যা।’
রামপুরা সেতু থেকে বনশ্রী হয়ে মাদারটেক রোডে চলছে ৭০টির মতো হিউম্যান হলার। সফি আলম নামে একজন সহকারী ঢাকাটাইমসকে জানান, পুলিশকে দিনে ২৫০ টাকা করে দিতে হয় তাদেরকে। আর এ কারণেই পুলিশ কিছু বলে না।
তবে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ স্বীকার করে না পুলিশ। জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (দক্ষিণ) উপকমিশনার (ট্রাফিক) মাইনুল হাসান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রতিদিনই এসব ঘটনায় মামলা হয়। কিন্তু তারপরেও কমে না। মামলা হলে ফাইনও দেয়। বন্ধ তো হয় না।’
(ঢাকাটাইমস/৩১ডিসেম্বর/এসএ/ডব্লিউবি)

মন্তব্য করুন