ঐতিহ্যের আওয়ামী লীগে তারুণ্যের জয়গান

দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগ। প্রতিষ্ঠার ৬৮ বছর পার করেছে এই দল। দলটি সম্প্র্রতি ২০তম জাতীয় সম্মেলন করেছে। এর মধ্য দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন কমিটি পেয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রতিষ্ঠার সময় থেকে এখন পর্যন্ত দলটি প্রবীণের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছে। কাজে লাগিয়েছে তরুণদের সাহসিকতা। সর্বশেষ সম্মেলনে কিন্তু এটাই দেখা গেছে।
আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয় মুসলিম লীগের তরুণ কর্মী ও যুব নেতাদের উৎসাহ-উদ্দীপনায়। প্রতিটি জাতীয় নির্বাচন, আন্দোলন-সংগ্রামে তরুণরা দলটিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তারুণ্যের প্রাধান্য থাকার কারণেই একপর্যায়ে তুলনামূলক কম বয়সেই দলটির সাধারণ সম্পাদক থেকে সভাপতি হতে পেরেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর হাত ধরেই আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত হয়। আর জাতির জনকের সুদক্ষ নেতৃত্বেই স্বাধীন ভূখ- হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ।
দেশি-বিদেশি চক্রান্তে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির জনক নিহত হলে আওয়ামী লীগের অগ্রযাত্রা কিছুটা থেমে যায়। অনেকটা তরুণ বয়সে জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন আওয়ামী লীগের হাল ধরেন, তখন আবার ঘুরে দাঁড়াতে থাকে দলটি। বঙ্গবন্ধু কন্যা সময়ের প্রয়োজনে দলটির নেতৃত্বে এলেও তিনি যে রাজনীতিতে নতুন ছিলেন তা কিন্তু নয়। তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এখন শুধু আওয়ামী লীগের নন, তিনি সারা বাঙালি জাতির প্রদীপ এবং বিশ্ব রাজনীতির রোল মডেল ও আইকন। জননেত্রী আওয়ামী লীগের হাল ধরেন ১৯৮১ সালে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে। এখন তার বয়স ৭০ বছর। অর্থাৎ ৭০ বছরের জীবনে ৩৫ বছরই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে আছেন অত্যন্ত বিশ্বস্ততা, সততা ও দৃঢ়তা নিয়ে। এখন তিনি বিশ্বনেতাদের মর্যাদার তালিকায় নাম লিখিয়ে জাতির জন্যে গৌরব বয়ে এনেছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সফলতার গল্প সারা বিশ্ব জেনে গেছে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণে দক্ষিণ এশিয়ার দুই বড় দেশ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছি আমরা। আসলে তরুণ বয়সে তৃণমূলে রাজনীতি করার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসতে হয়। ১৯৭৫ সালে ঘাতকদের নৃশংসতায় অকালে প্রয়াত না হলে যাদের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শীর্ষে নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনা ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম শেখ ফজলুল হক মনি ও শেখ কামাল। তারাও ছাত্ররাজনীতি করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ তো বটেই, এর আগের আন্দোলন-সংগ্রামে নিবেদিত প্রাণ হয়ে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন।
১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগের সুদক্ষ নেতৃত্বের কারণেই লাল-সবুজের পতাকা ছিনিয়ে আনতে তরুণ জনগোষ্ঠী অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দেয়।
মুক্তিযুদ্ধের পরের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ বিচার করলে দেখা যায় ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি কাছে টানতে পেরেছে রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক তরুণ জনগোষ্ঠীকে। মূলত বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র এবং জননেত্রী তনয় সজীব ওয়াজেদ জয় প্রণীত ডিজিটাল বাংলাদেশ স্লোগান তরুণ-যুবাদের দারুণভাবে আকর্ষণ করে। সেই নির্বাচনে বিশাল বিজয়ের পর মন্ত্রিসভায় তরুণ কয়েকজনকে যুক্ত করার বিষয়টি ছিল দারুণ চমক। সেই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা সফলও হয়েছেন। এ জন্যই দশম জাতীয় সংসদীয় সরকারেও জায়গা পান আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন তরুণ নেতা। তারা এখন পর্যন্ত সফলতার সঙ্গেই সরকারি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
মাস কয়েক আগে হওয়া আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের সময় দেখা গেছে তরুণ নেতাদের মধ্যে পদ-পদবী পাওয়ার মধুর প্রতিযোগিতায়। আমাদের জাতীয় ক্রিকেট দলে মেধাবীদের ছড়াছড়ি থাকায় দলে বা একাদশে জায়গা পেতে এখন যেমন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই এটা তেমনি ইতিবাচক দিক।
১৯৭১ সালে একটি স্বল্পন্নোত রাষ্ট্র হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও এখন আমরা নি¤œ-মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে পৌঁছে গেছি। ধাপে ধাপে উন্নত রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে চলেছি আমরা। ২০২০ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালিত হবে। ২০২১ সালে বিজয়ের ৫০ বছর পালন করবে বাংলাদেশ। এই দিনগুলো সামনে রেখে আওয়ামী লীগের তরুণ-তুর্কিরা কাজ করে যাচ্ছেন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকরের দাবি জোরালো করতে ঢাকার শাহবাগে ২০১৩ সালে যে গনজাগরণ হয়, তাতে নেতৃত্বে ছিলো তরুণরা। আর এতে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের অনেকে সক্রিয় ছিল।
আরও একটি বিষয় বলতে হয় আওয়ামী লীগে যে তরুণদের ছড়াছড়ি তার পেছনে রয়েছে দলে এবং এর অঙ্গ সংগঠনে ঠিক সময়ে নেতৃত্বে পরিবর্তন। এ ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ছাত্রলীগ। আর এই ছাত্রলীগই আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মী তৈরির প্রধান সূতিকাগার। আওয়ামী লীগ যে তরুণ প্রজন্ম বা আগামীর চিন্তাভাবনা আগেই করে রাখে তার অন্যতম উদাহরণ রূপপ্রকল্প ২০২১ ও ২০৪১। তার মানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলে ও সরকারে দুই ক্ষেত্রেই বিচরণ সমানভাবে প্রযোজ্য। এ জন্য প্রতিষ্ঠার পর অনেক রাজনৈতিক দল দুর্বল, বিলুপ্ত হয়ে গেলেও বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়েই টিকে আছে আওয়ামী লীগ। জনগণের রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ বিপুল বিক্রমে মাথা উঁচু করে আছে আজকের বাংলাদেশে।
মনিরুজ্জামান মনির : সাবেক ছাত্রনেতা

মন্তব্য করুন