‘গালগপ্পের’ অভিযোগে অর্থায়ন বাতিল করে বিশ্বব্যাংকের সেই বিবৃতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৯:৪৫| আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৫:১৭
অ- অ+

গালগপ্প হিসেবে কানাডার আদালতে প্রমাণ হওয়া অভিযোগের ভিত্তিতেই পদ্মাসেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিলের কথা জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছিল বিশ্ব্যাংক। ওই বিবৃতিতে তারা দাবি করেছিল, এই প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ও কানাডার এসএনসি লাভালিনের কর্মকর্তার মধ্যে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য তথ্য প্রমাণ বিশ্বব্যাংকের কাছে রয়েছে।

পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠার পর থেকেই সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারাবর বলেছেন, রাজনৈতিক কারণে এই অভিযোগ তোলা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনাও করেছে সরকার। তাদের চাহিদা অনুযায়ী দুদকের একটি বিশেষ দল গঠন করে তদন্তও করা হয়েছে। ওই দলের সঙ্গে বিশ্বব্যাংক বৈঠকও করেছিল। কিন্তু সরকারের কোনো পদক্ষেপই বিশ্বব্যাংকের কাছে যথেষ্ঠ মনে হয়নি। আর ২০১২ সালের ৩০ জুন গণমাধ্যমের কাছে ওই বিবৃতি পাঠিয়ে অর্থায়ন বাতিলের কথা জানায় বিশ্বব্যাংক।

এই প্রকল্পে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাটির ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ছিল। উন্নয়ন সংস্থা এডিবিসহ আরও বেশ কয়েকটি সংস্থারও অর্থায়নের কথা ছিল। চুক্তি অনুযায়ী বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ায় অন্য সংস্থাগুলোও সরে যায় এবং পরে সরকার নিজ অর্থায়নে সেতুর কাজ শুরু করে।

কানাডার আদালত যে অভিযোগকে গালগপ্প বলেছে, সাড়ে চার বছর আগে বিশ্বব্যাংক তাকে ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ দাবি করে অর্থায়ন বাতিলের কথা জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সরকার থেকে পর্যাপ্ত বা ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সহায়তায় ১.২ বিলিয়ন ডলার ঋণ বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যা অবিলম্বে কার্যকর হবে।’

কানাডার আদালত যাকে গুজব ও উড়োকথা বলেছে তাকেই প্রমাণ হিসেবে দাবি করে বিশ্বব্যাংকের সেই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এবং ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে দুটি তদন্তের তথ্য প্রমাণ প্রদান করেছে। আমরা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টির পূর্ণ তদন্ত করতে এবং যথাযথ বিবেচিত হলে দুর্নীতির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তিদেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমরা এ পদক্ষেপ নিয়েছিলাম, কারণ আমরা আশা করেছিলাম যে সরকার বিষয়টিতে যথাযথ গুরুত্বআরোপ করবে।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘কানাডায় যেখানে এসএনসি লাভালিনের সদরদপ্তরে অবস্থিত, সেখানে বিশ্বব্যাংকের রেফারেলের ভিত্তিতে ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসেস কয়েকটি সার্চ ওয়ারেন্ট তামিল করে এবং এক বছর ব্যাপী তদন্ত চালিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুজন সাবেক এসএনসি লাভালিনের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দাখিল করেছে। তদন্ত ও বিচার কাজ অব্যাহত রয়েছে। আদালতে পেশকৃত তথ্য এই ঘটনার গুরুত্ব তুলে ধরেছে। তা স্বত্বেও, বাংলাদেশ তথা এ অঞ্চলের উন্নয়নের ক্ষেত্রে পদ্মাসেতুর ভূমিকা বিবেচনা করে আমরা প্রকল্পের বাস্তবায়নের জন্য বিকল্প উপায় তথা `টার্ন-কি' পন্থায় প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছিলাম এই বিবেচনায় যে সরকার আমাদের দ্বারা উন্মোচিত উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে। সুশাসন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে এসব হুমকির ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণে জোর না দেওয়া বিশ্ব ব্যাংকের জন্য দায়িত্বহীনতার পরিচয় হবে।"

বিকল্প `টার্ন-কি' পন্থায় অগ্রসর হওয়ার জন্য বিশ্বব্যাংক কী কী পদক্ষেপের প্রস্তাব করেছিল সেটিরও বর্ণনা দেয়া হয় ওই বিবৃতিতে। এগুলো হলো. ১. যেসব সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের ছুটি দেয়া, ২. তদন্তের জন্য দুদকের অধীনে একটি বিশেষ দল নিয়োগ, এবং (৩) আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত বিশ্বব্যাংকের নিয়োগ করা একটি প্যানেলের কাছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সব তথ্যের পূর্ণ ও পর্যাপ্ত প্রবেশাধিকারে সরকারের সম্মতি প্রদান, যাতে এই প্যানেল তদন্তের অগ্রগতি, ব্যাপকতা ও সুষ্ঠুতার ব্যাপারে উন্নয়ন সহযোগীদের নির্দেশনা দিতে পারে।

বিবৃতিতে বলা হয়, `আমরা সরকার ও দুদকের সঙ্গে ব্যাপক ও গভীরভাবে কাজ করেছি এটি নিশ্চিত করতে যে অনুরোধকৃত সকল পদক্ষেপে সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের নিজস্ব আইন ও বিধি-বিধানের আওতায় থাকে।'

বিবৃতিতে বলা হয়, `আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম যে প্রথমবার দরপত্র আহ্বান করা হলে বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীরা প্যানেলের মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রকল্প অর্থায়নের ব্যাপারে অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে যদি পূর্ণ ও সুষ্ঠু তদন্ত চলছে এবং যথাযথ অগ্রগতি হচ্ছে তা প্রতীয়মান হয়।'

বিবৃতিতে বলা হয়, `বাড়তি প্রয়াস হিসেবে, আমরা বিশ্বব্যাংকের অবস্থান ব্যাখ্যা করা এবং সরকারের জবাব জানার জন্য ঢাকায় একটি উচ্চ পর্যায়ের দল পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সরকারে প্রতিক্রিয়া বা জবাব সন্তোষজনক ছিলো না।’

পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির চেষ্টা হয়েছে দাবি করে ওই বিবৃতিতে তখন বলা হয়, `বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির ঘটনায় চোখ বুঁজে থাকতে পারে না, তা উচিত নয় এবং থাকবেও না। আমাদের শেয়ারহোল্ডার ও আইডিএ দাতা দেশগুলোর প্রতি আমাদের সুষ্ঠু আর্থিক দায়বদ্ধতা এবং সুষ্ঠু আর্থিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত দায়িত্ব রয়েছে। এটি নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব যে আইডিএ সম্পদ কাঙ্খিত লক্ষ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং কেবল তখনই একটি প্রকল্পে আমরা অর্থায়ন করবো যখন আমরা যথেষ্ট নিশ্চয়তা পাবো যে প্রকল্পটি পরিস্কার ও স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হবে।'

(ঢাকাটাইমস/১১জানুয়ারি/ডব্লিউবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মিরাজের নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আজ মাঠে নামছে টাইগাররা
প্রথম প্রেমের স্পর্শ: পর্ব ৭- মন না জাগলেও শরীর জাগে
আশুলিয়ায় গণহত্যা ও ছয় লাশ পোড়ানো মামলায় ১৬ জনকে আসামি করে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র
উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তরুণদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার: রাবাতে আসিফ মাহমুদ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা