ভোলায় সরকারি জমি উদ্ধার,বইয়ের দোকান সিলগালা

ভোলা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১২ মার্চ ২০১৭, ২১:২৭

অবশেষে ভোলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে সরকারি ‘ক’ তালিকাভুক্ত ভিপি (অর্পিত) সম্পত্তিতে বসানো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘হাসান বুক হাউজ’ সিলগালা করেছে প্রশাসন।

রবিবার দুপুর একটায় ভোলা সদর উপজেলার সহকারী ভূমি কমিশনার (এসিল্যান্ড) মো. রুহুল আমিন পুলিশ নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করেন।

স্থায়ীভাবে দখল করে বইয়ের দোকান দিয়ে বসিয়েছিলেন মো. কামাল উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী। সিলগালার সময় তিনি পলাতক ছিলেন।

তিনি এর আগে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি সরকারের প্রতিপক্ষ মো. গিয়াস উদ্দিনের নিকট জমি ও ঘর ভাড়া নিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী, মামলার নথিপত্র ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- ভোলা পৌরসভার চরজংলা মৌজার বাংলাস্কুল মোড়ে প্রায় ২৪ শতক জমির মালিক ছিলেন চুনীলাল সেন।

তার পরিবার ১৯৬৫ সালে ভারতে চলে যায়। এরপর বন্দোবস্ত সূত্রে ওই জমির মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেন স্থানীয় ব্যবসায়ী নাছির আহমেদ। আদালত ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে জমিটিকে অর্পিত ও অনাবাসী সম্পত্তি (ভিপি) বলে রায় দেন। বর্তমানে দুই শতক ছাড়া বাকি জমি দুটি পক্ষের ১৩ জন ব্যবসায়ীর দখলে রয়েছে। এক পক্ষের দাবি, তারা জমিটি নিলামে কিনেছেন। অন্য পক্ষটি ১৯৮২ সালে আদালতের রায়ের পর জমিটি সরকারের কাছ থেকে বার্ষিক ইজারা নেন। বর্তমানে সরকার ও নিলামে খরিদকারীদের মধ্যে পুরো জমিটি নিয়ে মামলা চলছে।

আরও জানা যায়, ওই দুই শতক জমিতে তিনটি দোকান ছিল। গত তত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সরকার তাদের উচ্ছেদ করে দোকানগুলো সিলগালা করে দেয়। পরে দোকানগুলো ভেঙেচুরে ডাস্টবিনে পরিণত হয়। সেখানে ২০১৬ সালে একটি ফলের ও দুটি চায়ের অস্থায়ী দোকান বসে। দোকান তিনটির একটি চায়ের দোকান সরিয়ে গিয়াস উদ্দিন ও মো. কামাল উদ্দিন গত ২৭ জানুয়ারি শুক্রবার সকালে লোহা দিয়ে স্থায়ী দোকান নির্মাণ শুরু করেন। দখল করা জমির পরিমাণ দশমিক ৬৬ শতাংশ। দখলের খবর পেয়ে ভোলা সদর উপজেলা ভূমি অফিস ও ভোলা থানা-পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বলেন। অসম্পূর্ণ দখল শেষ না হলেও মো.কামাল উদ্দিন ও তার ভাইয়েরা রাতের আধারে গত একমাস ধরে বাকি দখলের কাজ সম্পন্ন করেন। গত শনিবার মো. কামাল উদ্দিন বইয়ের দোকানটি চালু করে।

জানতে চাইলে দখলকারী মো. কামাল উদ্দিন বলেন, আমি সরকার থেকে বন্দোবস্ত পাওয়া মৌ. মো. জালাল আহমেদর ওয়ারিস মো. গিয়াস উদ্দিনের নিকট থেকে ভাড়া নিয়েছি। দখল করিনি।

মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমার বাবা মৌ. মো. জালাল আহম্মেদসহ কয়েকজনকে সরকার এ জমি বন্দোবস্ত দিয়েছে। আমি জালাল আহমেদের ওয়ারিস হিসাবে জমিটি দখল করে ভাড়া দিয়েছি। বিক্রি করিনি।

সরকার থেকে ইজারাদার পক্ষের জাফর আহমেদ, জাহাঙ্গীর আলমসহ একাধিক জন বলেন, প্রতিপক্ষ কয়েকটি ভুয়া কাগজ দিয়ে সরকারকে বিবাদী করে মামলা করেছে। তারা বছরের পর বছর ধরে সরকারের পক্ষে জমিটি উদ্ধারের জন্য প্রতিপক্ষের করা মামলার সঙ্গে আইনি লড়াই করছেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ওই জমির দখলকারীদের উচ্ছেদ করে সরকার সিলগালা করে রাখে। সে জমি আবারও বেদখল হলেও সরকারের কর্মকর্তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। উল্টো ভূমি অফিসের কিছু লোকজন প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারের জমি বেহাত করেছে।

তাঁরা আরও বলেন, সরকার তাঁদেরকে ১৯৮২ সালে ইজারা দিয়েছেন, তাদের ইজারা নবায়নও করছেন না।

ভোলা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘জমিটি সরকারের ‘ক’ তালিকাভুক্ত ভিপি সম্পত্তি। কাগজপত্র সরকারের পক্ষে রয়েছে। সরকার একবার ইজারা দিয়েছে। আবার নাকি বন্দোবস্ত দিয়েছে। সে বন্দোবস্ত বাতিল করে আবার ইজারা দিয়েছে। এখন জমিটি নিয়ে কয়েক পক্ষের মামলা চলছে। যাদের বন্দোবস্ত বাতিল করেছে, তাঁরা সরকারকে বিবাদী করে মামলা চালাচ্ছে। ওই জমিতে নতুন কোনো স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি নেই। তাই সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করতে দখল করা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সিলগালা করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১২মার্চ/প্রতিনিধি/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :