ঢাবিতে অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য অধিভুক্ত রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের পরীক্ষা ও সিলেবাস নিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে নানা বিভ্রান্তি। তারা আশঙ্কা করছেন নতুন করে সেশনজটে পড়ার।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, শিক্ষার্থীদের ভয়ের কিছু নেই। সময়মতোই সবকিছু হবে।
শিক্ষার্থীদের তথ্যমতে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে মাস্টার্স পরীক্ষা হতে যাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষা প্রশাসনে এই পরিবর্তনের পর অধিভুক্ত ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, বদরুন্নেছা কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজের মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরা বসতে পারছে না কাঙ্ক্ষিত পরীক্ষায়।
সদ্য অধিভুক্ত কলেজগুলোর পাঠ্যক্রম পরিচালনার জন্য যে সিলেবাস প্রণয়নের কথা, সেই সিলেবাসও প্রণয়ন হয়নি অধিভুক্তির এক মাসে। সাতটি কলেজের তৃতীয় বর্ষের (নতুন) ক্লাস শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারছেন না তারা কোন সিলেবাস অনুসরণ করবেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সিলেবাস থেকে এত দিন পড়াশোনা করেছেন তারা, সেটিই অনুসরণ করবেন নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসের জন্য অপেক্ষা করবেন তা বলতে পারছেন না কেউ।
শিক্ষার্থীদের সংশয়, যদি সেশনজট দূর করার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের আনা হয়, তবে কেন শিডিউল পরীক্ষা দিতে পারছেন না তারা। নাকি তারা নতুন করে সেশনজটে পড়তে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, সেশনজটের কোনো আশঙ্কা তারা দেখছেন না। সিলেবাস-পরীক্ষাসহ একাডেমিক বিষয়ে শিক্ষার্থীদের চিন্তামুক্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু এ ধরনের কোনো পরামর্শ দাপ্তরিকভাবে শিক্ষার্থীদের জানানো হয়নি এখনো। ফলে তাদের মধ্যে জমাট বাঁধছে নানা সংশয়, বিভ্রান্তি। অনেকে বলছেন, তারা একধরনের হতাশাও বোধ করছেন।
ঢাকা কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের (নতুন) শিক্ষার্থী ফয়সাল হোসেনের তৃতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে কিছুদিন আগে। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কিন্তু আমরা বুঝতে পারছি না কোথা থেকে আমাদের পড়াশোনা শুরু করব। পাঠ্য বিষয়গুলোতে কোন সিলেবাস অনুসরণ করতে হবে সেরকম কোনো নির্দেশনা কলেজে নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকা অবস্থায় আমরা বছরের শুরুতেই সিলেবাস পেয়ে যেতাম, কিন্তু নতুন যাত্রায় এখনো তা পাইনি। আমাদের পরীক্ষাগুলো যথাসময়ে হবে কি না সে বিষয়েও আমাদের মনে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। বলতে গেলে একরকম হতাশা কাজ করছে আমাদের মধ্যে।’
সেশনজট বাড়ার আশঙ্কা করছেন তিতুমীর কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের (পুরাতন) শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম। কারণ তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার রুটিন কিছুদিনের মধ্যেই দেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ায় তাদের রুটিন কী হবে, কবে পাবেন তা নিশ্চিত নন। সাইফুল বলেন, ‘দেখা যাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় রুটিন দিয়ে পরীক্ষা নিয়ে নিচ্ছে, কিন্তু আমরা অধিভুক্তির কারণে যথাসময়ে পরীক্ষায় বসতে পারব না। তাহলে সেশনজট বাড়বে বলেই আশঙ্কা হয়।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘একটি কলেজ যখন অধিভুক্ত হয় তখন প্রথম অবস্থায় শিক্ষার্থীদের মনে অনেক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। তবে সিলেবাসের বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের চিন্তার কিছু নেই। শিক্ষার্থীরা বিষয় অনুসারে তাদের ক্লাস করতে থাকবে, শিগগিরই আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে সিলেবাস পৌঁছে দেব।’
পরীক্ষার বিষয়ে ঢাবি ভিসি আরো বলেন, ‘যথাসময়েই পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা হবে। সেশনজটের কোনো আশঙ্কা আমরা দেখছি না। শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ চিন্তামুক্ত থাকতে পারে এসব বিষয়ে।’
২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি কলেজগুলো অঞ্চলভেদে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেয়ার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট কমানোর লক্ষ্যে এই ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে তখন বলা হয়। তার সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করেন। বৈঠকে বেশির ভাগ ভিসি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের পক্ষে মত দেন।
এরপর বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনার পর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ওই সাত সরকারি কলেজ ঢাবির অধিভুক্ত করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/১৮মার্চ/মোআ)

মন্তব্য করুন