এবার পোস্টার রাজনীতিতে বিএনপি

রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ আয়োজনে প্রশাসনের অনুমতির অভাবে নিজেদের দাবি ও সরকারের সমালোচনা জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারছে না রাজপথের সরকারবিরোধী দল বিএনপি। এই অভাব পূরণে দলটি এবার পোস্টার রাজনীতির আশ্রয় নিয়েছে।
জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুর পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের তথ্য-উপাত্তসহ লিফলেট, পোস্টার করে তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিচ্ছে দলটি। ইতিমধ্যে দুই ধরনের পোস্টার রাজধানীসহ তৃণমূলে পাঠানো হয়েছে।
একটি পোস্টারের শিরোনাম ‘জাতীয় সম্পদ জাতীয় নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ডাক' এবং অন্যটি ‘বাজারে আগুন, বিপর্যস্ত জনজীবন’।
পোস্টার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এসব পোস্টার ভাড়াটে মানুষ দিয়ে লাগানো হবে না। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এগুলো লাগানোর পাশাপাশি জনগণের মধ্যে এসব বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করবেন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পোস্টারটি চোখে পড়ছে।
‘বাজারে আগুন, বিপর্যস্ত জনজীবন’ পোস্টারে বিএনপির আমল ও আওয়ামী লীগের শাসনামলের জীবনযাত্রায় ব্যয়ের একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়। এ পোস্টারে যেসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে তা কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্যসূত্র থেকে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
‘জাতীয় সম্পদ জাতীয় নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ডাক'পোস্টারে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১৯টি দাবি তুলে ধরা হয়।
অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে- গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা, ইলিয়াস আলীসহ গুমের শিকার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া, ব্যাংক লুট ও বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা, সরকারি চাকরিতে দলীয়করণ ও বিচার বিভাগকে সরকারের প্রভাবমুক্ত করা, প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করা, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প অবিলম্বে বন্ধ করা, কৃষিতে ব্যবহার্য জিনিসের দাম কমানো ও কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম কমানো, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে পরিকল্পিত হামলা বন্ধ ও সব হামলার তদন্ত করে বিচার নিশ্চিত করা, চাল-ডালসহ নিত্যপণ্যের দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা এবং বিতর্কিত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিএনপি জনগণের দল। জনগণের কষ্ট ও দুর্ভোগ নিয়ে চিন্তা বিএনপির অন্যদের থেকে বেশি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাই তথ্য-উপাত্তসহ দেখানো হয়েছে বিএনপির আমলে মানুষের জীবনযাত্রার মান কেমন ছিল, ব্যয় কেমন ছিল। আর আওয়ামী লীগের আমলে কত গুণ বেড়ে গেছে।’
দুদু দাবি করেন, পোস্টারে যেসব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা কারো অস্বীকারের কোনো সুযোগ নেই।
বর্তমানে ঘোষণা ছাড়াও নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে অভিযোগ করে দুদু বলেন, ‘সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হওয়ায় তারা দাম বাড়ানোর আগে এ নিয়ে ভাবে না। কিছুদিন আগেও এক ঘোষণায় দুবার গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে।”
ভাড়াটে দিয়ে পোস্টার লাগানো যাবে না
এর আগে বিভিন্ন সময় ভাড়াটে লোক দিয়ে পোস্টার লাগানো হয়েছে। এতে উদ্দেশ বাস্তবায়ন তো দূরের কথা মানুষের দৃষ্টিতেও আসত না সেগুলো। অনেক সময় অল্প কিছু পোস্টার লাগানোর পর বাকিগুলো অপচয় হয়েছে এমন অভিযোগ পেয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। এ কারণে নেতাকর্মীদের নিজেদেরই পোস্টার, লিফলেট লাগাতে নির্দেশনা দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট ইউনিটের নেতারা পোস্টার লাগালে কর্মীদের তা উৎসাহ জোগাবে, মানুষের মধ্যেও আলোড়ন তুলবে।
ইতিমধ্যে কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী রাজধানীতে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি শফিউল বারি বাবু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলকে কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে পোস্টার লাগাতে দেখা গেছে।
কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজ হাতে পোস্টার লাগিয়েছেন দেখে উৎসাহিত হয়ে শনিবার সকালে প্রেসক্লাব এলাকায় পোস্টার লাগান ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহসভাপতি লিটন মাহমুদ।
ঢাকাটাইমসকে লিটন বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আগে স্বাভাবিক থাকলেও এখন নানা প্রতিকূলতার কারণে কর্মীরা পোস্টার পর্যন্ত লাগাতে পারছে না। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতাদের নিজ হাতে পোস্টার লাগানো সারা দেশের কর্মীদের সাহস জোগাবে।’
এ বিষয়ে বিএনপির প্রচার সেলের সমন্বয়ক ও প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এটাকে প্রচারের নতুন কৌশলও বলতে পারেন। জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট দুটি পোস্টার ইতিমধ্যে সারা দেশে পাঠানো হয়েছে। এগুলো যাতে সঠিক জায়গায় লাগানো হয় সে ব্যাপারে সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
কেন্দ্রের এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নিজ হাতে পোস্টার তৈরি করে লাগানো একসময় রাজনীতির অংশ মনে করা হতো। সে ধারা এখন নেই বললেই চলে। তাই রাজনৈতিক সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে এমন উদ্যোগ।’
কেন্দ্রের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি করার সময় আমরা দেয়ালে দেয়ালে চিকা মারতাম। নিজ হাতে পোস্টার লাগাতাম। কর্মীদের এ ব্যাপারে সক্রিয় করতে এবং রাজনীতির ওই সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে আমাদের এই উদ্যোগ।’
(ঢাকাটাইমস/১৮মার্চ/বিইউ/মোআ)

মন্তব্য করুন