প্লিজ, ডোন্ট জাজ এ বুক বাই ইটস কাভার

আরিফ হাসান
| আপডেট : ০৮ মে ২০১৭, ১৫:৩০ | প্রকাশিত : ০৮ মে ২০১৭, ১৪:০০

শিরোনামের ইংরেজি লাইনটি টেলিভিশনের একটি বিজ্ঞাপন থেকে শেখা। যার বাংলা অর্থ হচ্ছে, ‘প্রচ্ছদ দেখে কখনও একটা বইকে বিচার করবেন না।’ কোন জ্ঞানী ব্যক্তির মাথা থেকে লাইনটি বেরিয়েছিল জানি না। তবে বেশ মনে ধরেছে লাইনটি। সুক্ষ্মভাবে চিন্তা করলে শেখার অনেক কিছুই আছে লাইনটি থেকে। অনেক সময়ই আমরা যেকোনো জিনিসের বাইরেটা দেখেই সে সম্পর্কে মন্তব্য করে বসি। গায়ে ভালো-মন্দের সিল বসিয়ে দেই।

ফলের রাজা কাঁঠালের কথাই ধরুন। সারা গাঁয়ে কাঁটা ভরা অথচ ভেতরের রোয়াগুলো কতই না সুমিষ্ট। ফলের রাজা বানানোর ক্ষেত্রে কাঁঠালের উপরের কাঁটাযুক্ত অংশকে কিন্তু বিবেচনায় আনা হয়নি। তেমনি আরও অনেক ফল আছে যেগুলো বাইরে থেকে দেখতে খুবই আকর্ষণীয় কিন্তু ভেতরের স্বাদটা হয় অতি তেঁতো না হয় টক। এর মাধ্যমে আমরা অন্তত এতটুকু শিখতে পারি যে, বাইরের রঙ বা চেহারা কখনোই ভালো-মন্দ বিচারের মানদণ্ড হতে পারে না।

আল্লাহর সৃষ্টি সেরা জীব মানুষও এর ব্যতিক্রম নয়। হাতের পাঁচটা আঙুল যেমন সমান নয় তেমনি প্রতিটি সমাজে মানুষে মানুষেও বিস্তর ফারাক। ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সব মানুষই সমান শিক্ষা, সমান পরিবেশ পায় না। কিছু পরিবেশ ছোটবেলা থেকেই মানুষকে ঠান্ডা মেজাজের করে গড়ে তোলে আবার কিছু পরিবেশ মানুষকে বানায় খিটখিটে স্বভাবের। হুটহাট রেগে যাওয়া, ছোটখাটো বিষয়েও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়ে যায় তাদের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। চরিত্রের এই নেতিবাচক দিকগুলোই পদে পদে মানুষকে বিপদে ফেলে। সহপাঠী, সহকর্মী এবং অন্যান্যদের কাছে তাকে পরিচয় করিয়ে দেয় একটা ‘বাজে’ ছেলে হিসেবে।

এই মানুষগুলোর ভেতরে যে ভালো গুণাবলি থাকে না এমনটা নয়। অবশ্যই থাকে, কিন্তু চরিত্রের নেতিবাচক দিকগুলোর কারণে তাদের ভালো গুণগুলো সব সময়ই থেকে যায় লোকচক্ষুর অন্তরালে। যে মানুষগুলো এই নেতিবাচক দিকগুলোর শিকার হয় বা যাদের সঙ্গে সে এসব আচরণগুলো করে ‘বাজে’ ছেলেটার ভালো গুণাবলির সুবাস কিন্তু বিভিন্ন কাজেকর্মে সেই মানুষগুলোই পায়। অথচ, তার দশটা ভালো কাজের কথা কিন্তু কখনোই কেউ মনে রাখে না, মনে রাখে শুধু একটা বা দুইটা নেতিবাচক আচরণের কথা। আর এই এক-দুইটা নেতিবাচক দিকই তাকে অন্য মানুষের কাছে খল বানিয়ে রাখে।

মানুষের চরিত্রের নেতিবাচক এই দিকগুলো একটা মানসিক সমস্যা। মানসিক সমস্যা দূর করতে মানসিক পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। আর অন্য মানুষদের সহযোগিতা ও ভালোবাসায়ই কেবল এই মানসিক পরিবর্তন সম্ভব। ভালোবাসার শক্তি অনেক। ভালোবাসা দিয়ে, একটু সহযোগিতা দিয়ে পৃথিবীর সবকিছুকেই পাল্টে দেয়া সম্ভব। অথচ, ভালোবাসা আর সহযোগিতার বদলে আমরা সেই মানুষটাকে শুধু অবজ্ঞাই করি। আমরা একটা মানুষকে বাইরে থেকে যেমনটা দেখি, হতে পারে না যে তার ভেতরটা অনেক অনেক বেশি স্বচ্চ। হতে পারে না যে, উপরের রুক্ষতার চেয়ে মানুষের জন্য কয়েকগুণ বেশি ভালোবাসা আছে তার অন্তরে।

সমাজে এমন মানুষও তো আছে যারা স্বার্থসিদ্ধির জন্য ভালোর জামা গায়ে দিয়ে ঘুরে বেড়ায়। গোপনে তারাই তো মানুষের বেশি ক্ষতি করে। উপরের ভালোর সাইনবোর্ডটাকে কাজে লাগিয়ে তারা মানুষের অন্তরে সুঁই হয়ে ঢুকে ফাঁল হয়ে বের হয়। চরিত্রের উপরের সাইনবোর্ডটাই যদি ভালো-মন্দ বিচারের মানদণ্ড হয় তবে এমন ভালোর মূল্য কতটা? মানুষ হিসেবে আরেকটা মানুষকে বোঝা, তাকে সহযোগিতা করা, একটু ভালোবাসা দিয়ে তাকে পাল্টে দেয়াই তো আরেকটা মানুষের বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত। মানুষ তো মানুষের জন্যই। কাউকে বিচার করার আগে অন্তত একটিবার ভাবুন তো.........

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :