পদ ছেড়ে শিরীন এখন কোথায় ব্যস্ত

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২২ জুন ২০১৭, ১৭:২৭ | প্রকাশিত : ২২ জুন ২০১৭, ০৮:১৫

তাকে সব সময় দেখা যেত বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পাশে। চেয়ারপারসনের যেকোনো সহায়তার জন্য তার হাতটি থাকত কাছাকাছি। দলের কর্মসূচিতে তার উপস্থিতি ছিল নিয়মিত। কিন্তু পদ ছেড়ে দেয়া শিরীনকে মাস ছয়েক ধরে তেমন দেখা যায় না রাজনৈতিক মাঠে। বিএনপির একজন সক্রিয় নারীনেত্রী শিরীন সুলতানা এখন কোথায়?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি এখন রাজনীতির চেয়ে অন্য পেশায় মনোযোগ দিচ্ছেন বেশি। তাই দলের কর্মসূচিতে তিনি আগের মতো আর সময় দিতে পারছেন না।

মূলত গত বছর বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণার পর রাজনীতিতে কক্ষচ্যুতি ঘটে শিরীনের। দলের নতুন কমিটিতে পদ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের জের ধরে এই কক্ষচ্যুতি ঘটে বলে গুঞ্জন আছে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে এই নারীনেত্রীর যাত্রা বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের রাজনীতি দিয়ে। ছাত্ররাজনীতির মতোই পরে বিএনপিতেও সমান সক্রিয় ছিলেন তিনি। দায়িত্ব পালন করেছেন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদকের পদেও।

গত বছরের আগস্টে ঘোষিত মূল দলের কমিটিতে পাওয়া পদ পছন্দ না হওয়ায় তা ছেড়ে দিলেও গুঞ্জন ছিল মহিলা দলের সভাপতির পদে আসতে পারেন শিরীন সুলতানা। কিন্তু নতুন কমিটিতে তাকে রাখাই হয়নি। এর পর শিরীন সুলতানা দলীয় রাজনীতির মাঠ থেকে নিজেকে আড়াল করতে থাকেন।

শিরীন সুলতানার ব্যস্ততার নতুন খবর হলো, তিনি এখন আইন পেশায় সময় দিচ্ছেন। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত হয়েছেন। ঢাকা বারে কাজ করছেন আইনজীবী হিসেবে। এখন চেষ্টা করছেন সুপ্রিম কোর্ট বারের তালিকাভুক্ত হতে। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের জুনিয়র হিসেবে কাজ করছেন একসময়ের ব্যস্ত রাজনীতিক শিরীন।

ঢাকাটাইমসকে এ কথাগুলো নিশ্চিত করেন শিরিন সুলতানা নিজে। তিনি বলেন, ‘আগে একটি অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ পদে ছিলাম যে কারণে দলের সব কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু এখন সেই দায়িত্ব নেই। রাজপথে দলের আন্দোলন কর্মসূচিও সেভাবে নেই। তাই রাজনৈতিক ব্যস্ততা কম থাকায় আইন পেশায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছি।’

১৯৬৫ সালে রাজধানীর বাসাবোতে জন্ম নেয়া শিরিন সুলতানা ’৮২ সালে মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন ইডেন কলেজে। ৮৫ সালের দিকে ইডেন কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে শিরিন-বাঁধন প্যানেল দেয় ছাত্রদল। তবে ওই নির্বাচনে হেরে যায় তারা। পরে ছাত্রদলের ইডেন কলেজের সভাপতি নির্বাচিত হন শিরিন।

এরশাদবিরোধী রাজপথের আন্দোলনে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ তাকে রাজনীতির মাঠে পরিচিত মুখ করে তোলে। এরশাদ সরকার পতনের দিন মিছিলের সামনের সারিতে দেখা যায় তাকে। বাঁশের লাঠি হাতে মিছিলের অগ্রভাগে শিরিন সুলতানার ছবিটি ওই আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হয় ।

ইডেন কলেজ থেকে অনার্স পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন শিরিন। পরে রোকেয়া হলের ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। ওই সময় ছাত্রদলের ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটিতে একমাত্র নারী হিসেবে স্থান পান শিরিন।

এক-এগারোর সরকারের সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন শিরিন সুলতানা। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৯ (বাসাবো) আসনে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয় তাকে। তবে ওই নির্বাচনে পরাজিত হন তিনি। পরবর্তীকালে তাকে মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনেও রাজপথে ছিলেন শিরিন। সর্বশেষ ২০১৫ সালের শুরুতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে শিরিন সুলতানাও তিন মাস অবরুদ্ধ ছিলেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মতো তার বিরুদ্ধেও প্রায় অর্ধশত মামলার খড়্গ ঝুলছে বলে জানা গেছে।

বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের পর গত বছরের আগস্টে ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক করা হয় শিরিন সুলতানাকে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় পদ থেকে পদত্যাগের সময় আশা ছিল শিরিন সুলতানাকে মহিলা দলের সভাপতি করা হবে। কিন্তু সেখানে আনা হয় বিএনপির নেতা মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসকে। তাতে হতাশ হন শিরিন সুলতানা ও তার সমর্থকরা।

এসব কারণে ধীরে ধীরে দলের দায়িত্ব কমে যাওয়ায় রাজনৈতিক ব্যস্ততাও কমে যায় তার। এই ফাঁকে আইন পেশায় সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। তবে এই সময়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ঘরোয়া অনুষ্ঠানগুলোতে তাকে নিয়মিত উপস্থিতি দেখা গেছে।

এদিকে স্বামী বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন নাশকতার মামলায় প্রায় দেড় মাসের মতো কারাগারে ছিলেন। এত দিন স্বামীর জামিনের ব্যবস্থা করানো নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে তাকে। সম্প্রতি তার জামিন হওয়ায় স্বস্তি ফিরিছে শিরিন সুলতানার মনে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, গোপীবাগ থেকে এলএলবি পাস করেন শিরিন সুলতানা। পরে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত হন।

জানতে চাইলে শিরিন সুলতানা ঢাকাটাইমসকে বলেন, রাজনীতি করার ফাঁকে ফাঁকে বাংলাদেশ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে ল পাস করি। এখন যেহেতু রাজনৈতিক ব্যস্ততা কম তাই আইন পেশায় সময় দিচ্ছি। সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আপাতত সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের জুনিয়র হিসেবে কাজ করছি।’

দলের কোনো পদে না থাকায় রাজনৈতিক ব্যস্ততা কম কি না– এমন প্রশ্নে শিরীন বলেন, ‘আমি একজন বিএনপির কর্মী। সে হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলে যেমন সব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক থাকে, পদ না থাকায় সেটা নেই। তারপরও যেকোনো কর্মসূচিতে সুযোগ হলেই অংশ নিচ্ছি।’

ঢাকাটাইমস/২২জুন/মোআ

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :