জাবি সংকটের সুরাহা হচ্ছেই না

রাইয়ান বিন আমিন, জাবি প্রতিনিধি
 | প্রকাশিত : ০১ আগস্ট ২০১৭, ১৪:৫৩

সোমবার সকাল দশটা থেকে রাত এগারোটা। কখনো উপাচার্যসহ প্রশাসনের সঙ্গে, কখনো শিক্ষক মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে এবং সবশেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতারা। আলোচনার টেবিলে সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়েছিলেন সমস্যা সমাধানের। কিন্তু দিনশেষে ফলাফল শূন্য। এমন পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় দিনের মতো অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

চলমান সংকট নিরসনে কোনো পক্ষই আপাতত নমনীয় ভূমিকা পালন করছে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চায় শিক্ষার্থীরা ২৭ মে’র ঘটনায় ক্ষমা প্রার্থনা করবে তবেই মামলার প্রত্যাহারের বিষয় বিবেচনা করা হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বলছে কথা দিয়েও যে প্রশাসন কথা রাখে না তাদের কোনো আশ্বাস আমরা বিশ্বাস করি না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে প্রশাসনের করা মামলা প্রত্যাহারসহ চার দফা দাবিতে গতকাল সোমবার সকাল থেকে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ কার্যক্রম শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এরপরই শুরু হয় শিক্ষক নেতাদের এমন দৌড়ঝাপ। এর আগে গত ১৭ জুলাই রাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙ্গাতে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন এই শিক্ষক সমিতির নেতারা। সেখানে সাত দিনের মধ্যে চলমান সংকটের সম্মানজনক সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক আমির হোসেন। পরবর্তীতে সে কথার কোনো অগ্রগতি হয়নি।

অন্যদিকে সম্মানজনক সমাধানের কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আমির হোসেন বলেন, ‘আমি কখনোই সাতদিনের মধ্যে ‘চলমান সংকটের সম্মানজনক সমাধানের’ কথা বলিনি। কারো কাছে কোনো রেকর্ড নেই। সাত দিনের কথা শিক্ষার্থীরা বলেছে। যারা আমার কথা বলছে তার মিথ্যা বলছে। আর সাত দিনে কখনো মামলা প্রত্যাহার করা সম্ভব না। তাহলে আমি কেন অবাস্তব আশ্বাস দিব?

সোমবার শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দিনের সর্বশেষ বৈঠকে বসে শিক্ষক সমিতি। রাত সাড়ে নয়টা থেকে শুরু হয়ে বৈঠকটি চলে রাত এগারোটা পর্যন্ত। দীর্ঘ এ বৈঠকে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে আগামী ৩ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তাব দেন শিক্ষক নেতারা। কিন্তু কোনো আশ্বাসে প্রভাবিত না হয়ে আন্দোলন অব্যাহত রেখেই আলোচনায় বসতে চায় শিক্ষার্থীরা।

বৈঠক অংশ নেয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসাইন বলেন, ‘আমরা আর কোনও আশ্বাস চাইনা। আমরা আলোচনায় বসতে চাই তবে তা হবে নি:শর্ত।’

এর আগে সোমবার সকাল নয়টার দিকে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ শুরু করে চারটার দিকে তা তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে তার কার্যালয়ে ঢুকতে পারেননি। এরপর আলোচনার জন্য তিনি রেজিস্ট্রার আবুবকর সিদ্দিকের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন এবং প্রশাসনিক ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এমন পরিস্থিতিতে ‘আলোচনা করে সমাধানের পথ বের করা হবে’ শিক্ষক সমিতির এমন আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভবনের মূল ফটক ছেড়ে দিলে উপাচার্য, দুই উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, প্রক্টরসহ কয়েকজন শিক্ষক উপাচার্যের কার্যালয়ে আলোচনার জন্য প্রবেশ করেন।

দুপুর আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শুরু থেকেই নৈতিক সমর্থন জানিয়ে আসা শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চের সঙ্গে বৈঠক করে শিক্ষক সমিতি।

জানা যায়, শিক্ষক সমিতির নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থান তুলে ধরে আগামী ৩ আগস্টের প্রস্তাবিত আলোচনায় শিক্ষার্থীরা ক্ষমা প্রার্থনা করলে সমাধান আসতে পারে বলে ঐক্যমঞ্চকে জানান। ঐক্যমঞ্চের কয়েকজন শিক্ষক এতে ইতিবাচক মনোভাব দেখান।

সন্ধ্যায় আবারও উপাচার্যসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতনদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন শিক্ষক সমিতির নেতারা।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের অবরোধ প্রত্যাহারের পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এতে দ্বি-মত পোষণ করেছে। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য শিক্ষক সমিতি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।’

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক নজির আমিন চৌধুরী জয় বলেন, ‘আমরা আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছি। কিন্তু প্রশাসন বলছে অবরোধ প্রত্যাহার করতে। কিন্তু কোন বিশ্বাসে আমরা অবরোধ প্রত্যাহার করব?

তিনি আরও বলেন, ‘২৭ মে’র ঘটনার জন্য আমরা সংবাদ সম্মেলনে দুঃখপ্রকাশ করেছি। ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। শিক্ষার্থীরা যা করেনি তার জন্য ক্ষমা চাইবে কেন!’

এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আমির হোসেন বলেন, ‘শিক্ষক সমিতি সমাধানের জন্য মূখ্য ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের কোনো কথাই শুনছে না। সমাধানের পথ এখন অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে।’

প্রসঙ্গত, গত ২৭ মে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় মহাসড়ক অবরোধ ও উপাচার্যের বাস-ভবন ভাঙচুরের অভিযোগে ৫৬ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আমরণ অনশনসহ একের পর এক আন্দোলন চালিয়ে আসছে শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ গত ১৭ জুলাই প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তাব্যক্তিরা সাত দিনের মধ্যে মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাস দিলেও এখনো পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।

ঢাকাটাইমস/১আগস্ট/প্রতিনিধি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

হাবিপ্রবিতে ‘খবরের কাগজে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিচ্ছবি’ শীর্ষক প্রদর্শনী

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত জবি

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা ২৭ এপ্রিল শুরু

জবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনলাইনে ক্লাস, চলবে সেমিস্টার পরীক্ষা

কুবির তিন দপ্তরে শিক্ষক সমিতির তালা

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন

ববির মেডিকেলে  চিকিৎসকের দায়িত্বে অবহেলা, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

ইউনিভার্সিটি অফ স্কলার্সের বিবিএ ১৫তম ব্যাচের নবীন বরণ অনুষ্ঠিত

এবার কুবির আরেক সহকারী প্রক্টরের পদত্যাগ

গুচ্ছের হাবিপ্রবি কেন্দ্রে তিন ইউনিটে পরীক্ষার্থী ১২৩৪১ জন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :