সেন্টমার্টিনের ঘরে ঘরে ‘চিকুনগুনিয়া’, নেই চিকিৎসা

আবদুর রহমান, টেকনাফ (কক্সবাজার)
 | প্রকাশিত : ১০ আগস্ট ২০১৭, ০৯:০৯

‘চিকুনগুনিয়া’ এই নামটি এখন সেন্টমাটির্ন দ্বীপবাসীর জন্য আতঙ্কের। কেননা রাজধানী ঢাকার মতো এ দ্বীপের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে মশাবাহিত এ রোগ। কিন্তু এ ভাইরাসের বিস্তৃতি রোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে।

সম্প্রতি সবচেয়ে আলোচিত এডিস মশাবাহিত চিকুনগুনিয়া জ্বরে ভুগছে দ্বীপের প্রতি বাড়িতে দুই থেকে তিনজন করে। এই দূর অবস্থায় দ্বীপের একমাত্র স্বাস্ব্য কমপ্লেক্স তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। বছরে পর বছর এ স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে এখানকার মানুষ। ফলে অসুস্থ হয়ে বিনা চিকিৎসায় কাতরাচ্ছে দ্বীপের বাসিন্দারা।

দ্বীপের ইউপি চেয়ারম্যানের দাবি তিন হাজার মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে হঠাৎ দ্বীপের মানুষদের মধ্যে দেখা দিয়েছে এই রোগের প্রাদুর্ভাব। প্রতিদিনই জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। কিন্তু তারা কোনো চিকিৎসা পাচ্ছে না। দ্বীপের প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রায় ২/৩ জন করে চিকুনগুনিয়ায় রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের জ্বর, কাঁশি, পুরো শরীরে ব্যথা বলে জানিয়েছেন অনেকে।

দ্বীপের বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ (৩৫) বলেন, গত তিন দিন ধরে শরীরে জ্বর, কাঁশি ও ব্যথা ভুগছিলাম। পরে চিকিৎসা নিতে দ্বীপের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে তালাবদ্ধ থাকায় ফিরে আসতে হয়। পরে গ্রামের ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়েছি। আমার এলাকা প্রতি ঘরে ঘরে এক-দুই জন করে এ রোগে আক্রন্ত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দ্বীপে প্রতিদিন ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার ১০/১৫ জনের মতো পর্যটক ট্রলার নিয়ে ভ্রমণে আসেন। তাছাড়া ঢাকাতে এ রোগের বিস্তার ঘটেছে হয়তো ভ্রমণে আসা লোকজনের কাছ থেকে এ রোগ ছড়িয়েছে।

এ রোগে আক্রান্ত কয়েকজন হলেন দ্বীপের পূর্বপাড়ার ইউপি সদস্য আবদুস সালাম (৬৫), তার স্ত্রী হাসিনা বেগম (৫০), মিনারা বেগম (৪০), ইব্রারাহী (৩০), একই এলাকার সোলতান আহমদ (৭০), ওসমান গণি (৩৫), বশির আহমদ (৬৫), আলী হায়দার (৩৩), আবদুল হামিদ (২৩), ফরিদ আহমদ (৪২), সিকদার পাড়ার তৌহিদুল ইসলাম (১৪), ইমাম হোসেন (১৫), নাইমুদ্দিন (১৪), নুরুল কবির (৪০)।

রোগে আক্রান্ত ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, টানা বর্ষণের কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে তাই চিকিৎসার জন্যা কোথাও যেতে পারছি না। তবে ফোনে দুইজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করেছি। তাদের ধারণা চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে।

ইউপি সদস্য বলেন, এ দ্বীপের প্রায় হাজারখানেক লোক এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় সরকারের পক্ষে থেকে চিকিৎসার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তাছাড়া এ দ্বীপে হাসপাতাল সবসময় বন্ধ রয়েছে।

তিনি কষ্টের সঙ্গে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে সেন্টমার্টিনবাসীর দুঃখের কথা বিবেচনা করে ১০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটি গড়ে তোলা হয়। এজন্য দ্বীপবাসী খুব আনন্দিত হয়েছিল। কিন্তু, দুর্ভাগ্য এই হাসপাতালটি চালু হওয়ার পর থেকে দ্বীপের লোকজন টিকমত চিকিৎসা পাচ্ছে না। এমনকি ডাক্তারও থাকেন না। এ কারণে চিকিৎসার অভাবে প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ জন মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যান।’

টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক টিটু চন্দ্র শীল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপ একটি পর্যটক জোন এ দ্বীপে ঢাকাসহ বিভিন্ন লোকের আনাগোনা। তাই এ রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি। তবে ডেঙ্গুর মতোই এডিস মশা থেকে চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস মানুষের শরীরে আসে। আক্রান্ত মানুষকে কামড় দিলে জীবাণু মশার দেহে সংক্রমিত হয়, মশা বাহকে পরিণত হয়। এই মশা অন্য কাউকে কামড়ালে তার দেহেও ভাইরাস সংক্রমিত হয়। তাই মশা নিধনই চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধের একমাত্র উপায়।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, এ দ্বীপে প্রায় সাড়ে আট হাজার মানুষের বসবাস। কিন্তু দুঃখের বিষয় ১০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে গিয়ে কোনো ব্যাক্তি চিকিৎসা পাচ্ছেন না। প্রায় সময় তালাবদ্ধ থাকে হাসপাতালটি।

তিনি আরও বলেন, গত তিন ধরে এ দ্বীপের ঘরে ঘরে দুই থেকে তিনজন করে চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত হয়েছে। তারা চিকিৎসা না পেয়ে খুবই কষ্টে জীবনযাপন করছে। তিন হাজারের বেশি নারী, পুরুষ ও শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। বিষয়টি আমি টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিচালককে অবহিত করেছি।

জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা মো. এনামুল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, সরকারের নির্দেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা স্বাস্থ্য বিভাগে চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীদের জন্য ক্যাম্প খোলা হয়েছে। তবে টেকনাফে এ পর্যন্ত কোনো রোগী চিকিৎসা নিতে আসেনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপের কোনো রোগী আসেনি। এইগুলো শুধু রিউমার ছড়াচ্ছে। আর সেন্টমার্টিনের লোকজন যাতে চিকিৎসা পায় সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দ্বীপের ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি শুনেছি। তবে আসলে তারা কোন রোগে আক্রান্ত হয়েছে সে বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে তারা যেন চিকিৎসা পায় সে ব্যবস্থা করা হবে।।’

(ঢাকাটাইমস/১০আগস্ট/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :