যশোর সফটওয়্যার পার্কে সিলিকন ভ্যালিকেও ডাকতে পারি

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
  প্রকাশিত : ০৮ অক্টোবর ২০১৭, ০৯:৫৬| আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০১৭, ১০:৪০
অ- অ+

যশোরে ১০ একর জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক। প্রায় ৩০০ কোটি ব্যয়ে নির্মিত আন্তর্জাতিক মানের পার্কটি অনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। ৬ অক্টোবর সেখানে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয়েছিল চাকরি মেলার। বিপুল মানুষের সমাগম হয় সেদিন। এই পার্কের গড়ে ওঠা, বর্তমান অবস্থা, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন এর প্রকল্প পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এই কর্মকর্তার একান্ত সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আসাদুজ্জামান।

এই প্রকল্পের সঙ্গে আপনি কীভাবে যুক্ত হলেন?

যশোর শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের প্রকল্প পরিচালক হওয়ার পেছনে একটা ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। আমি একসময় জামালপুর জেলার এডিসি ছিলাম। তখন এটুআই থেকে শ্রেষ্ঠ এডিসি হিসেবে পুরস্কার পেয়েছিলাম। বেশ আগের ঘটনা এটি। আমি পুরস্কারটি নিয়েছিলাম তৎকালীন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের হাত থেকে।

২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে যশোর জেলাকে বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল জেলা হিসেবে ঘোষণা দেয় সরকার। তখন ইউনিয়ন ইনফরমেশন সেন্টারের এক বছর পূর্তি পালন করা হয়। যেটা এখন ডিজিটাল সেন্টার। ওই অনুষ্ঠানে জামালপুর জেলার শ্রেষ্ঠ এডিসি হিসেবে আমাকে পুরস্কার দেয়া হয়।

এই স্বীকৃতি কিসের জন্য?

ব্যবস্থাপনা কার‌্যক্রমের মাধ্যমে ইউনিয়ন ইনফরমেশন সেন্টারগুলো হান্ড্রেড পার্সেন্ট বাস্তবায়ন করেছি। ২০১১ সালের মধ্যেই আমি জামালপুরের ৪১টি ইউনিয়ন পরিষদে অনলাইনে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর দিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করি। তাতে জামালপুরে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। ওই এলাকায় ডিজিটাল প্রযুক্তি দিয়ে প্রশিক্ষণ আমিই প্রথম শুরু করেছিলাম। যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছিল তাদের কেউ কেউ চাকরিও পেয়েছিল। এসব কারণে এটুআইয়ের স্বীকৃতি মেলে।

তারপর?

সম্ভব এসব স্বীকৃতির জন্যই পরবর্তী সময় তৎকালীন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম খান (এন আই খান) আমাকে যশোর হাইটেক পার্কের পিডি হিসেবে দায়িত্ব দেন। আমি আমার সেরাটা দিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি।

দেশে হাইটেক পার্ক হচ্ছে। সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক হচ্ছে। এর কতটা সুফল পাচ্ছে মানুষ?

আসলে এত সব আয়োজনের সুফল পেতে হলে এগুলো ব্যবহার করা শিখতে হবে। এগুলোর সুবিধা নিতে হবে মানুষকে। সে জন্য প্রযুক্তিগত দক্ষতা দরকার। ছেলেমেয়েরা বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম এর সদ্ব্যবহার না করলে প্রযুক্তি কিংবা ডিজিটাল বাংলাদেশ কাগজে কলমে থেকে যাবে। তবে আশার কথা নতুন প্রজন্ম এগিয়ে আসছে।

যশোর শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে দেশের বিভিন্ন সফটওয়্যার কোম্পানি জায়গা বরাদ্দ পেয়েছে। এখানে তারা আসলে কী কাজ করবে?

এখানে বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন সফটওয়্যার তৈরি করবে। এই সফটওয়্যারের কাজটা কি? সমস্যার সমাধান করা। আমাদের দেশে তো অনেক সমস্যা। সাউথ কোরিয়া কিংবা জাপান সফটওযার প্রযুক্তি দিযে তাদের সমস্যা অধিকাংশ সমাধান করে ফেলেছে। কিন্তু আমাদের হয়নি। আমাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করতে হবে। এই যে আমাদের দেশে বিগ ডাটা চলে এসেছে। বিগ ডাটা মানে কি, আপনি এনভায়রমেন্টাল একটা ইস্যু নিয়ে কাজ করলেন, এখানে প্রচুর ডাটা আছে। আপনি যেদিকেই তাকাবেন সেখান থেকেই ডাটা পাবেন। লাখ লাখ ডাটা আছে আমাদের। এই ডাটাগুলো নিয়ে কীভাবে আপনি অনলাইনে ব্যবহার করবেন তা নিয়ে সফটওয়্যার তৈরির সুযোগ আছে।

দেশে এখন স্কুল ম্যানেজমেন্ট, কলেজ ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার তৈরি হচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রের সমস্যা সমাধানে এখানে বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রচুর কাজের সুযোগ রয়েছে। বর্তমান কিংবা ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির যুগে কেউ যদি মেন্যুয়াল থাকে তবে টিকতে পারবে না। প্রযুক্তির জ্ঞান নিয়ে আরেকজন তাকে টপকে যাবে।

প্রথমবারের মতো আয়োজিত চাকরি মেলাকে আপনি কতটা সফল বলবেন?

আমি মনে করি মেলা অবশ্যই সফল হয়েছে। এখানে যতজন চাকরিসন্ধানী এসেছেন তাদের সবাইকে হয়তো আমরা চাকরি দিতে পারব না, কিন্তু তারা তো এই মেসেজটা পেল যে তাদের প্রযুক্তি শিখতে হবে।

আমাদের দেশের তরুণরা কি সঠিক প্রযুক্তির শিক্ষা পাচ্ছে?

আমাদের দেশে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। সরকারের সহযোগিতায় যে প্রশিক্ষণগুলো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দেয় তা আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আংশিক সফল হয় না।

এর কারণ কী?

আসলে আমাদের দেশের মানুষ এখনো নতুন কিছু গ্রহণ করতে আন্তরিক না। অনেকেই হয়তো মনে করে সরকারি টাকায় প্রশিক্ষণ করছি- করলে করলাম, শিখলে শিখলাম। আপনি যদি আমাকেও পাঠান, হয়তো আমিও তা-ই করব। আমরা বেশির ভাগই এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট আন্তরিক নই। হয়তো আমাদের বিভিন্ন ধরনের পিছুটান থাকে, যা আমাদের শিখন প্রক্রিয়া থেকে বিরত রাখে। আমাদের এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

আপনারা আগামি জানুয়ারিতে এই পার্কে আরেকটি চাকরি মেলার আয়োজন করছেন।

জানুয়ারিতে যে মেলাটা হবে সেটি সরকারের শেখো এবং আয় করো (লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং) প্রকল্প থেকে করা হবে। আইসিটি ডিভিশনের অধীনেই মেলাটা হবে। এটা হবে আরও বড় আয়োজনে, ব্যাপকভাবে। হয়তো অন্য আঙ্গিকে করা হতে পারে।

সারা বছরই কি চাকরি মেলা আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে?

না। এ রকম কোনো ইচ্ছা বা পরিকল্পনা আপাতত নেই। এখানে বরাদ্দ পাওয়া কোম্পানিগুলো দিয়ে যখন সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক পুরোপুরি সেজে উঠবে, তখন কর্মমুখর পার্কে নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে থাকবে। কিন্তু এ জন্য তাদের যোগ্য লোক লাগবে। তাই আমাদের শিখনের চলমান প্রক্রিয়া থাকবে।

এই যোগ্য লোক তৈরি হবে কীভাবে?

শিগগিরই আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। এখানে যেসব সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান কাজ করবে তাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে, যাতে করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা এসব প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পান। এ জন্য আমাদের বিভিন্ন প্রকল্প আছে। সেখান থেকে অর্থায়ন করা হবে।

এখানে যেসব প্রতিষ্ঠান জায়গা বরাদ্দ পেয়েছে তাদের উন্নয়নে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ কী ধরনের উদ্যোগ নেবে?

এখানে কোম্পানিগুলো সক্রিয় করার জন্য যত ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন তার সবটাই দেয়া হবে। সরকারিভাবে সব সমর্থন-সহযোগিতা দেয়ার সুযোগ আছে। দেয়াও হবে। হয়তো দ্রুতই সেটা পারব না। মান বজায় রাখতে একটু সময় লাগবে।

এখানে কোম্পানিগুলো কিসের ভিত্তিতে জায়গা বরাদ্দ পেয়েছে?

হাইটেক পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি যাচাইবাছাই করে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জায়গা বরাদ্দ দিয়েছে। ওই কমিটিতে বেসিস, বাক্যর প্রতিনিধিরাও ছিলেন। যারা আইটি ব্যবসা করে তাদের এখানে আমরা বিবেচনা করেছি।

স্টার্টআপদের জন্য এই পার্কে কোনো সুযোগ-সুবিধা থাকছে না?

স্টার্টআপদের জন্য আমরা ১৩ তলায় একটা ফ্লোর নির্ধারণ করে দিয়েছি। সেখানে ইতোমধ্যে দুটি স্টার্টআপ জায়গা বরাদ্দ পেয়েছে। আরও ২০-২০টি কোম্পানিকে বাছাই করব। এ ক্ষেত্রে তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রাধান্য দেয়া হবে।

স্টার্টআপদের ব্যবসা সম্প্রসারণে তাদের মেন্টরিং করা হবে কি না?

হ্যাঁ, তাদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় মেন্টরিং ও দিক-নির্দেশনা দেয়া হবে। তাদের সব ধরনের সাপোর্ট দেবে সরকার।

এই পার্ক নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলুন।

যশোরে আন্তর্জাতিক মানের সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক হয়েছে। আমরা চাই এটা আমাদের একটা মডেল হবে। এখানে আন্তর্জাতিক মানের সেমিনার করার মতো পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আমরা চাইলে সিলিকন ভ্যালিকেও প্রস্তাব করতে পারি এখানে সেমিনার করার। তাদের বলতে পারি আমাদের ডরমেটরি পাঁচ তারকা মানের। আমরা ভারতীয়দের নিয়ে আসতে পারি। জাপানিদেরও নিয়ে আসতে পারি। বিশ্বের আইসিটি এক্সপার্ট যারা, তাদের এখানে এনে সেমিনার করাতে পারি। এভাবে বিদেশি কোম্পানির সাহচর্য পেলে দেশি কোম্পানিগুলো শিখতে পারবে। পাশাপাশি আমাদের তরুণরাও শিখবে।

ঢাকাটাইমসকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ঢাকাটাইমস ও আপনাকেও ধন্যবাদ।

(ঢাকাটাইমস/৮অক্টোবর/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মিরাজের নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আজ মাঠে নামছে টাইগাররা
প্রথম প্রেমের স্পর্শ: পর্ব ৭- মন না জাগলেও শরীর জাগে
আশুলিয়ায় গণহত্যা ও ছয় লাশ পোড়ানো মামলায় ১৬ জনকে আসামি করে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র
উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তরুণদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার: রাবাতে আসিফ মাহমুদ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা