পুলিশকে ভয় নয় বন্ধু বানালেন রেজাউল করিম

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৭ অক্টোবর ২০১৭, ১০:৩৬| আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০১৭, ১৩:১৮
অ- অ+

গত জানুয়ারিতে কোটচাঁদপুর সার্কেলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন রেজাউল করিম। গত নয় মাসে কোটচাঁদপুরের পুরো পরিবেশই বদলে ফেলেছেন তিনি। পুলিশ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করেছেন সাধারণ মানুষের মাঝে। পুলিশি কাজে সেখানকার কেউ এখন আর ভয় পায় না। বরং পুলিশকে বন্ধু ভাবতে শুরু করেছে এলাকার মানুষ।

কোটচাঁদপুরের মানুষ যে এখন পুলিশে নির্ভয় সে কথা জোরেশোরে জানিয়ে দিলেন পেশায় ব্যবসায়ী মোকলেসুর রহমান। সেই সঙ্গে যোগ করলেন, ‘আমাদের এলাকায় শান্তির দূত হয়ে এসেছেন পুলিশ কর্মকর্তা রেজাউল করিম।’

পুলিশ সম্পর্কে মানুষের মনোভাব কীভাবে বদলে দিলেন ওই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার? বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, মাদক নিয়ন্ত্রণ, কিশোর ও যুব শ্রেণিকে খেলাধুলায় আগ্রহী করা, দ্রুত সেবা দেয়া, মানুষের বিপদে তাৎক্ষণিক ছুটে যাওয়া, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মতবিনিময় করা; ইভটিজিং, জঙ্গি, মাদক বিষয়ে মানুষকে সচেতন করাসহ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ ও সেগুলো কার্যকর করেন তিনি।

মহেশপুরের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক ওবায়দুল ইসলাম এই অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে দেখেন আস্থার প্রতীক হিসেবে। তার ভাষ্য, ‘এই পুলিশ কর্মকর্তার কাজে আমরা সাধারণ মানুষ অনেক খুশি। তার কাছে সব সময় যাওয়া যায়। সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করে দেন।’ কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়াই মানুষ পুলিশের সেবা পায় বলে জানান তিনি।

আর সাধারণ মানুষের প্রশংসাসিক্ত এই পুলিশ কর্মকর্তাও সেবা দেন নিজেকে সাধারণ মানুষের জায়গায় রেখে। কোটচাঁদপুরের বদলে যাওয়া পরিস্থিতি নিয়ে যখন তার সঙ্গে কথা হয় ঢাকাটাইমসের। একজন প্রশাসক হিসেবে জনগণের সঙ্গে সহজ যোগাযোগের ভাবনার কথাও উঠে আসে আলাপচারিতায়।

‘আমি যদি সেবাপ্রার্থী হতাম, তবে কেমন পুলিশ চাইতাম- এই ভাবনা সামনে নিয়েই পুলিশি সেবাকে জনবান্ধব ও সহজ করার জন্য কাজ করছি।’ এই হচ্ছে রেজাউল করিমের দর্শন।

কোটচাঁদপুরের মানুষের অবিশ্বাস আর ভয়ের পরিবেশ এক দিনেই বদলে গেছে, তা নয়। সেখানে যোগদানের পর রেজাউল করিম লক্ষ করেন, পুলিশ আর জনগণের মাঝে এক বিরাট অবিশ্বাস আর আতঙ্ক বিদ্যমান। জটিল কোনো সমস্যা না হলে পুলিশের কাছে যেতে চায় না কেউ। কারণ ভয়। কিছু দালাল চক্র পুলিশকে ব্যবহার করে গ্রামের অসহায় মানুষকে হয়রানি করে, মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে।

রেজাউল বলেন, ‘এ রকম পরিস্থিতিতে যোগদানের পর শুরু করি শুদ্ধি অভিযান। আর পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপনের কাজটি অগ্রাধিকার দিই। পুলিশ সদস্যদের একদিকে মোটিভেশন দেওয়া, পাশাপাশি সাধারণ মানুষ, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকদের সহযোগিতা নিয়ে এলাকায় পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু করি।’

এরই অংশ হিসেবে তিনি গ্রামে-পাড়া-মহল্লায় গিয়ে সাধারণ জনগণের সঙ্গে মতবিনিময়সহ পুলিশি সেবা কীভাবে সহজে পাওয়া যায় তা বোঝানোর কাজ করেন নিয়মিত। প্রথম প্রথম মানুষ এসব তৎপরতা অবিশ্বাসের চোখে দেখত। পরে ভয় কাটতে শুরু করে। এখন আর পুলিশ নিয়ে ভয় নেই তাদের মাঝে। তারা এখন পুলিশকে বন্ধু মনে করে।

এর পাশাপাশি স্কুল কর্মসূচি চালিয়ে যান রেজাউল করিম। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মতবিনিময় করা; বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, জঙ্গি, মাদকসহ বিভিন্ন পুলিশি বিষয়ে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানও করেন এই কর্মকর্তা। আর তাতে বেশিসংখ্যক তরুণকে সম্পৃক্ত করতে উদ্যোগী হন তিনি।

‘আমি বিশ্বাস করি, খেলাধুলার মাধ্যমে যুবসমাজকে জঙ্গি, মাদকসহ নানা অপরাধ থেকে দূরে রাখা সম্ভব। সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় নিজ উদ্যোগে প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলার আয়োজন করে থাকি।’ বলেন রেজাউল করিম।

পুলিশি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য ও ইভটিজিং, বাল্যবিবাহের কুফল সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন বানিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিতরণ করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। সেই সঙ্গে টেলিফোন নম্বর। তার বিশ্বাস, পুলিশের টেলিফোন নম্বর সবার জানা থাকলে অপরাধী অপরাধ করে পালাতে পারবে না। যেকোনো পুলিশি সেবা দ্রুত পাবে মানুষ।

এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ তৈরি করার জন্য তিনি ক্লাসরুম বেইজড লাইব্রেরি গড়া এবং ম্যাগাজিন প্রকাশে ভূমিকা রেখে চলেছেন তিনি।

মানুষের জানমালের নিরাপত্তার পাশাপাশি জনসেবামূলক এসব ভূমিকা পালনের ফলে পুলিশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে বলে জানান রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘নিয়মিত কমিউনিটি পুলিশিং সভা, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে ইতোমধ্যে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা ও শ্রদ্ধা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি।’

তার কাজে কোনো বিষয়টা তাকে উৎসাহিত করে জানতে চাইলে রেজাউল করিম বলেন, ‘একমাত্র পুলিশের চাকরিতেই সরাসরি মানুষের সেবা করা যায় সবচেয়ে বেশি। তাই বিসিএসে প্রথম চয়েজ দিয়েছিলাম পুলিশ। ভালো কাজ করে মানুষের ভালোবাসা অর্জনই একমাত্র চাওয়া। একজন বিপদগ্রস্ত মানুষ যখন পুলিশের সেবা নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরে যায়, তখন খুব ভালো লাগে।তখন মনে হয় অন্তত একজনের মুখে হলেও হাসি ফোটাতে পারলাম।’

২৯তম বিসিএসের এই কর্মকর্তা ইতোপূর্বে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেন। এলাকার মানুষের ভালোবাসা ও আস্থা অর্জন করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে কোটচাঁদপুর সার্কেলে যোগ দেন। জানা গেছে এখন তার নওগাঁয় বদলির আদেশ হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৬অক্টোবর/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই : ডিএমপি কমিশনার
মুরাদনগরের ওসি, কথিত সাংবাদিক ও যুবলীগ নেতাকে দিয়ে বিএনপির নাম জড়ানো হয়: কায়কোবাদ
‘দুঃখ প্রকাশ না করা পর্যন্ত শান্তি পাবে না আওয়ামী লীগ’
হাসিনা-রেহানা জয়-পুতুলের নামে সমন বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা