দিন ফিরছে মালঞ্চদের

মফিজুর রহমান শিপন, ফরিদপুর
| আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০১৭, ১৭:১৭ | প্রকাশিত : ১৯ অক্টোবর ২০১৭, ১৭:১৩

কিছুটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারী ষাটোর্ধ্ব মালঞ্চ, এর ওর কাছে চেয়েচিন্তে খেয়ে-না খেয়ে চলছিল তার দিন। স্বামী শুকুর শেখ মারা গেছেন বহু আগেই। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও ছিল না তার। হঠাৎ খবর এলো মালঞ্চের থাকার ঘর বানিয়ে দেয়া হবে, হলোও তাই। দারিদ্রের সাথে লড়তে লড়তে ক্লান্ত এ নারী এখন আশ্বস্ত, থাকার জন্য নিজের একটি বাড়ি হয়েছে তার।

সরেজমিনে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের মজুরদিয়া গ্রামে মালঞ্চের ওই নতুন ঠিকানায় গিয়ে পাওয়া গেল তার মেয়ে সবুরনকে। তিনি জানালেন, তার মা এখনো আগের মতই গ্রামের এ বাড়ি-ও বাড়ি কাজ করে খায়, তবে নিজের একটি স্থায়ী আশ্রয় হওয়ায় এলাকায় তাদের পরিবারের মর্যাদা বেড়েছে।

একই ইউনিয়নের দুস্থ-কর্মহীন প্রৌঢ় পাশের গ্রামের আজিজার অথবা মজুরদিয়া বাজারের কাছে আরেক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারী সফুরার দিনও বদলেছে একইভাবে।

ভূমিহীন দুস্থ মানুষের আবাসন সমস্যা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে গৃহনির্মাণের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, এ পর্যন্ত তার ৪০ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে ফরিদপুর জেলায়। সরকার প্রধান ঘোষিত আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পেয়ে খুশি এই জেলার হতদরিদ্ররা। তবে জনপ্রতিনিধিদের দাবি সরকারের বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ আরো বাড়ানোর।

প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে বাস্তবায়নাধীন আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় মোট ৮৭৮টি গৃহ নির্মাণ করা হবে এই জেলায়। নয়টি উপজেলার তালিকাভুক্ত হতদরিদ্রদের জন্য সরকার এর ব্যয় ধার্য করেছে ৮৭ কোটি ৮ লক্ষ টাকা। ঘর নির্মাণ কাজের তদারকিতে আছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা। এই পর্যন্ত ২৯০টি বসতঘর নির্মাণ করে স্থানীয় প্রশাসন সুবিধা ভোগীদের বুঝিয়ে দিয়েছেন।

এই প্রকল্পের আওতায় নির্মিতব্য প্রতিটি পরিবার পাচ্ছে একটি সেমিপাকা দোচালা টিনের ঘর ও টয়লেট, যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে এক লক্ষ টাকা করে। অসহায়, দুস্থ ও প্রতিবন্ধীদের তালিকা করে উপজেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদন নিয়ে শুরু করেছে গৃহনির্মাণের কাজ।

বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের দুস্থ-কর্মহীন প্রৌঢ় আজিজার মিয়া বলেন, আমাদের ঘর-বাড়ি কিছুই ছিল না, ছিল না বেঁচে থাকার কোনো অবলম্বন, সরকার আমাদের ঘর দিয়েছে- অনেক খুশি আমরা।

বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, তাদের ইউনিয়নে যারা ঘর পেয়েছে তারা প্রকৃত হতদরিদ্র। টেকসই ও মানসম্পন্ন একেকটি সেমিপাকা দোচালা টিনের ঘর তৈরির জন্য আরো বেশি বরাদ্দ দাবি করে বলেন, গৃহনির্মাণ বাবদ যে অর্থ দেয়া হচ্ছে- তা পর্যাপ্ত নয়। এ বরাদ্দ বাড়িয়ে কমপক্ষে দুই লক্ষ টাকা করে করার সুপারিশ করেছেন এই জনপ্রতিনিধি।

সদর উপজেলার কানাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফকির বেলায়েত হোসেন জানান, সরকার প্রধান দেশের সুবিধাবঞ্ছিতদের মাঝে ঘর দিচ্ছেন। এই প্রকল্প সরকারের জন্য আর্শীবাদ। যে পরিবারে বসত-ঘর নেই সে ঘর পেয়ে আনন্দে আত্মহারা।

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রওশন আরা পলি বলেন, বোয়ালমারীতে এই পর্যন্ত ৬০ শতাংশ গৃহনির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই উপজেলার ১১৫টি গৃহনির্মাণ করা হবে। আগামী মাসের মধ্যে বাকি ঘর তৈরি করে সুবিধাভোগীদের হস্তান্তর করা হবে।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া জানান, সরকার প্রধানের এই প্রকল্পটি আমরা চেষ্টা করছি স্বচ্ছতার সাথে সঠিক ব্যক্তি (গৃহহীনদের মাঝে) বাসস্থান নির্মাণ করে দেয়ার।

তিনি বলেন, সরকারের অন্যতম অঙ্গিকার ছিল দেশের একজনও গৃহহীন থাকবে না। সেই লক্ষ্যেই এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক আশা করেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে জেলার সকল উপজেলায়ই তালিকাভুক্তদের মাঝে ঘরগুলো বুঝিয়ে দেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৯অক্টোবর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :